সাইবার ক্রাইম: কারাগারে সেই তাসনুভা আনোয়ার তিশা
সিটি নিউজঃ চট্টগ্রামের বহুল সমালোচিত ফেসবুক গ্রুপ গার্লস প্রায়োরিটি’র ক্রিয়েটর ও এডমিন তাসনুভা আনোয়ারকে কারাগারে পাঠিয়েছে চট্টগ্রামের একটি আদালত।
আজ ২১ আগস্ট (বুধবার) চট্টগ্রাম মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট আবু সালেহ মোহাম্মদ নোমানের আদালত তাসনুভাকে কারাগার পাঠানোর আদেশ দেন।
এর আগে উচ্চ আদালত থেকে ৮ সাপ্তাহের জামিন নিয়েছিলেন অভিযুক্ত তাসনুভা আনোয়ার। ফ্যাশন সচেতন সুন্দরী এই তরুণীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পেইজ, গ্রুপ ও ব্যক্তিগত ফেসবুক হ্যাক করার অভিযোগ রয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) কামরুজ্জামান জানান, উচ্চ আদালত থেকে নেয়া জামিনের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে নিন্ম আদালতে আত্মসমর্পন করে জামিন আবেদন করেছিলেন তাসনুভা। আদালত জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে অভিযুক্ত তাসনুভাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট সূত্রে জানা যায়, ২৬ মে পাঁচলাইশ থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তাসনুভা আনোয়ার, আমেনা চৈতী, সালমান মোহাম্মদ ওয়াহিদসহ কয়েক জনকে আসামি করে মামলা করেন ইসতিয়াক হাসান।
তার অভিযোগ, সালমান ও তার গ্রুপের কিছু সদস্য ইসতিয়াকের স্ত্রী জুহি চৌধুরীর নামে বিভিন্ন ফেক আইডি খুলে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য প্রচার করছে। তারা ১১ মে জুহি চৌধুরীর ফেসবুক আইডির বিপরীতে নকল ডেথ সার্টিফিকেট বানিয়ে তিনি মারা গেছেন বলে ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে রিপোর্ট করেছে। এ কারণে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ জুহি চৌধুরীর কাছ থেকে ফেসবুক এক্সেস নিয়ে নেয়।
নগর গোয়েন্দা পুলিশ ও কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, হ্যাকার সালমান মোহাম্মদ ওয়াহিদের সঙ্গে তাসনুভা আনোয়ারসহ গার্লস প্রায়োরিটি গ্রুপের অ্যাডিমনদের সখ্যতা রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একই মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিনে রয়েছেন মামলার অপর আসামী গার্লস প্রায়োরিটি গ্রুপের অ্যাডমিন নাদিয়া আক্তার রুমি। একই মামলায় হ্যাকার সালমান মোহাম্মদ ওয়াহিদ আগে থেকেই কারাগারে রয়েছেন এবং এই মামলায় পলাতক রয়েছেন অপর আসামী আমেনা আক্তার চৈতি।
উল্লেখ্য, গত ২৮ মে চট্টগ্রাম কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগ সালমান মোহাম্মদ ওয়াহিদ নামে এক হ্যাকারকে গ্রেফতার করে। তার কাছ থেকে পুলিশ নকল ডেথ সার্টিফিকেট, বার্থ সার্টিফিটেক, পাসপোর্ট, এন আইডির কপিসহ বেশ কয়েকটি মোবাইল সেট উদ্ধার করেছে।
জনৈক ইসতিয়াক হাসান (৩০) নামে একজন গত ২৬মে ২০১৯ইং তারিখে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ১৭/১৮/২৪/২৫/৩৪/৩৫ ধারায় একটি দায়ের করা মামলায় ওয়াহিদ মোহাম্মদ ওয়াহিদকে গ্রেফতার করে। ওয়াহিদ বিভিন্ন মেয়েদের আইডি হ্যাক, আডি ডিজএবল করে মৃত দেখিয়ে (জাল সার্টিফিকেটের মাধ্যমে) অন্য একটি গ্রুপ থেকে মোটা অংকের টাকা আদায় করতো। বিশেষ করে চট্টগ্রামের কতিপয় মেয়েদের গ্রুপের পেইড হ্যাকার হিসেবে কাজ করতো।
২৮ মে বুধবার সালমান মোহাম্মদ ওয়াহিদ (২৪) কে ডবলমুরিং থানাধীন কমার্স কলেজ রোড মাতব্বর মসজিদ কামাল ফার্মেসীর পেছনে এবি ম্যানসন থেকে গ্রেফতার করে। তার পিতার নাম মো. আব্দুল মতিন, মাতার নাম গুলজার বেগম। উপ-পুলিশ কমিশনার (কাউন্টার টেরোরিজম) মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ পিপিএম এর নির্দেশ ও সার্বিক তত্ত্বাবধানে কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগ, সিএমপি, চট্টগ্রাম এর একটি টিম অভিযান চালিয়ে সালমানকে আটক করে।
মামলার বাদী ইসতিয়াক হাসান মামলার আরজিতে বলেন, হ্যাকার সালমান মোহাম্মদ ওয়াহিদ, ফেইসবুক হ্যাকার গ্রুপ দ্যা ডারটি এনোনিমাস আর্মি এর অন্যান্য সদস্যদের ব্যবহার করে হ্যাকারের পি-নাইন মোবাইল ডিভাইস দিয়ে তাহার স্ত্রীর একটি ফেইসবুক আইডি হ্যাক করে এবং অপর আরও একটি আইডি হ্যাক করে প্রিটেন্ডিং রিকোয়েস্ট দিয়ে ডিজেবল করে। যা বাদী বিভিন্ন লোক মারফত এবং ফেইসবুক, জি-মেইল ম্যাসেজের এলার্ট এর মাধ্যমে জানতে পারেন।
বাদী জানান উক্ত হ্যাকার সালমান ও তার গ্রুপের কিছু সদস্যবাদীর স্ত্রীর নামে বিভিন্ন ফেইক আইডি খুলে তার স্ত্রীর নামে মিথ্যা কুৎসা রটাচ্ছে এবং তার সম্মানহানি করছে। বাদী এজাহারে আরও উল্লেখ করেন আসামীরা গত ১১ই মে বাদীর স্ত্রীর ফেইসবুক আইডির বিপরীতে নকল ডেথ সার্টিফিকেট বানিয়ে ফেইসবুক কে রিপোর্ট করে যে, বাদীর স্ত্রী জীবিত নেই। তাই ফেইসবুক কর্তৃপক্ষ ঐ রিপোর্টের প্রেক্ষিতে বাদীর স্ত্রীর কাছ থেকে ফেইসবুক এক্সেস নিয়ে ফেলে। তার পর থেকে বাদীর স্ত্রীর আইডির পাশে মৃত ব্যাক্তির ফেইসবুক আইডির মত Remembering চলে আসে। তিনি জানান, চট্টগ্রামে ওমেন প্রায়েরিটি নামে একটি গ্রুপের হয়ে পেইড হ্যাকার হিসেবে কাজ করতো। গার্লস প্রায়েরিটি গ্রুপটির ওনার হলো তাসনুভা আনোয়ার তিশা। যার সাতে হ্যাকার সালমান মোহাম্মদ ওয়াহিদের বিশেষ বিশেষ মুহুর্তের ছবিও রয়েছে। তাদের দুজনকে পুলিশ ডেকে নিয়ে সতর্কও করা হয়েছিল জানান। কিন্তু তারা কোন সতর্ক বার্তা গ্রাহ্য করেনি।
পুলিশ জানায়, আটক সালমান মোহাম্মদ ওয়াহিদ এর মোবাইল পর্যালোচনায় দেখা যায় সে ফটোশপের মাধ্যমে বিভিন্ন নামে-বেনামে বেশ কয়েকটি নকল ডেথ সার্টিফিকেট, এনআইডি, পাসপোর্ট, বার্র্থ সার্টিফিকেট, স্কুল কলেজের আইডিসহ বিভিন্ন দলিল তৈরি করে। জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, মূলত সে মেয়েদের বিভিন্ন ফেইসবুক একাউন্ট ও ফেইসবুক গ্রুপ হ্যাক করে এবং অন্যান্য মেয়েদের ফেইসবুক একাউন্টগুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য কাজ করে। আটক সালমান নিজে Chittagong Cyber Security & Support- CCSS নামে একটি সাইভার সলিউশ্যান এর Founding Director বলে জানায়। আটক সালমান মোহাম্মদ ওয়াহিদ এর কাছ থেকে বর্ণিত বাদীর অভিযোগে উল্লেখিত তার স্ত্রীর নামে জাল সৃজনকৃত ডেথ সার্টিফিকেট উদ্ধার পূর্বক জব্দ করা হয়। মামলাটি কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগের পরিদর্শক আফতাব হোসেন তদন্ত করছেন।
এদিকে রেজাউল করিম নামে একজন ফেসবুক ইউজার তার ওয়ালে লেখন-
হ্যাকার সালমান ও তাসনুভা সম্পর্কে আরো জানুন বিস্তারিতঃ
চট্টগ্রামের একটি গার্লস গ্রুপের এডমিনের প্ররোচনায় ভাড়াটে হ্যাকার হিসেবে জনপ্রিয় গ্রুপ ও আইডি হ্যাক করতো সালমান
চট্টগ্রামের দুর্ধর্ষ হ্যাকার গ্রুপের সদস্য সালমান ওয়াহিদ (২৪) কে গ্রেপ্তারের পর চাঞ্চল্যকর সব তথ্য প্রকাশ পাচ্ছে। চট্টগ্রামের ৪ লাখ ১৩ হাজার সদস্যের কথিত একটি গার্লস গ্রুপের ওনার/এডমিনের প্ররোচণায়, পৃষ্ঠপোষকতায় এবং ইন্দনে সালমান দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম ভিত্তিক বিভিন্ন গার্লস গ্রুপ ও জনপ্রিয় তরুন-তরুনী ও বিশিষ্ট ব্যাক্তিদের আইডি হ্যাক করে আসছিলো বলে অভিযোগ রয়েছে। গত এক বছর ধরে উক্ত গার্লস গ্রুপ এবং সালমান ওয়াহিদের বিরুদ্ধে আইডি হ্যাকের নানা অভিযোগ উত্থাপিত হতে থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণন না পাওয়ায় কোনভাবেই হাতেনাতে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। তবে গত বছর চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশ উক্ত গার্লস গ্রুপের এডমিন এব্ং সালমান ওয়াহিদকে গোয়েন্দা পুলিশের দপ্তরে ডেকে নিয়ে কঠোরভাবে সতর্ক করা হয়েছিলো কিন্তু তারা এতে সতর্ক না হয়ে নানাভাবে বিভিন্ন গ্রুপ এবং আইডি হ্যাক করে বন্ধ করে দেয় বলে জানা যায়। সম্প্রতি গত কয়েকমাসে সালমানের বিরুদ্ধে কয়েকটি গ্রুপ এবং বিশিষ্টজনের আইডি হ্যাক করে তাদেরকে জিম্মি করে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠে।
পুলিশ তথ্য পেয়েছে- হ্যাকার সালমান ওয়াহিদ বিভিন্ন বিশিষ্টজনের আইডি হ্যাক করে তাদের ইনবক্স থেকে ব্যাক্তিগত তথ্য ও ছবি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের ব্ল্যাকমেইল করাতো। আবার বড় অংকের অর্থের বিনিময়ে সেসব আইডি ফিরিয়ে দেয়ার ঘটনাও ঘটিয়েছে সালমান। তবে সর্বশেষ যে ঘটনায় এই দুর্ধর্ষ হ্যাকার সালমান গ্রেপ্তার হয়েছে সেই ঘটনা ছিলো ভয়াবহতম ও ন্যাক্কারজনক।
চট্টগ্রামের মেকআপ-শেকআপ নামক গ্রুপের এডমিন জুহি চৌধূরীর আইডি হ্যাক করে গ্রুপ বন্ধ করে দেয়ার চেষ্ঠা করে। তবে গ্রুপ বন্ধ করতে না পারলেও জুহি চৌধুরীর দুটি আইডি হ্যাক করার পর জুহি যাতে তার আইডি কোনভাবে ফেরত পেতে না পারে এবং ভবিষ্যতে যাতে এই নামে কোন আইডি ওপেন করতে না পারে তা নিশ্চিত করতে নকল ডেথ সার্টিফিকেট বানিয়ে জুহি চৌধুরী মারা গেছে উল্লেখ করে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে বার্তা প্রেরণ করে সালমান। এর ফলে ফেসবুক উক্ত এডমিনের আইডি রিমেম্ভারিং করে রাখে। আর এসব ঘটনা ঘটানো হয়েছে কথিত জনপ্রিয় ৪ লাখ সদস্যের গার্লস গ্রুপের এডমিনের প্ররোচণায়। গ্রেপ্তারের পর সালমানের কাছ থেকে নকল ডেথ সার্টিফিকেটসহ অন্যান্য ভুয়া কাগজপত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ।
চট্টগ্রাম কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগের ইন্সপেক্টর আফতাব হোসেন জানান. হ্যাকার সালমান ওয়াহিদকে আইডি হ্যাকের ডিভাইস ও বিভিন্ন ধরনের নকল কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর তথ্যও পাওয়া গেছে। তার সহযোগিদের ও গ্রেপ্তারের চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।
পুলিশ আরো জানায়, হ্যাকার সালমান মোহাম্মদ ওয়াহিদ, ফেইসবুক হ্যাকার গ্রুপ দ্যা ডারটি এনোনিমাস আর্মি এর অন্যান্য সদস্যদের ব্যবহার করে হ্যাকারের পি-নাইন মোবাইল ডিভাইস দিয়ে বিভিন্ন আইডি হ্যাক করতো। গত ২৬’মে পাঁচলাইশ থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ১৭/১৮/২৪/২৫/৩৪/৩৫ ধারায় একটি মামলার প্রেক্ষিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, তাসনুভা আনোয়ারের সম্প্রতি বিয়ে করেন নগরীর দোভাষ পরিবারের সন্তান জাবের আব্দুল্লাহ দোভাষকে। তাসনুভার এ অপকর্মের কারনে বর্তমানে তাদের মধ্যে ছাড়াছাড়ি পর্যায়ে রয়েছে। এই তাসনুভা সবাইকে পরিচয় দেন হোটেল পেনিনচুলা কর্মকর্তা আনোয়ার তার স্বামী। কিন্তু এটাও তার মিথ্যার মধ্যে একটা।