চন্দনাইশের কাঞ্চন পেয়ারার কদর দেশব্যাপি

0

মো. দেলোয়ার হোসেন, চন্দনাইশ : মৌসুম শুরু হতেই বাজারে আসতে শুরু করেছে স্বাস্থ্যসম্মত চন্দনাইশের কাঞ্চন পেয়ারা। স্বাদে-পুষ্টিতে ভরপুর চন্দনাইশের কাঞ্চন পেয়ারার কদর রয়েছে দেশব্যাপি। চন্দনাইশের পেয়ারা বাংলার আপেল নামে খ্যাত। দেশের গন্ডি পেরিয়ে চন্দনাইশের পেয়ারা যাচ্ছে বিদেশে। চন্দনাইশের কাঞ্চন পেয়ার খুবই সু-স্বাদু, চাহিদাও প্রচুর। চলতি মৌসুমে পেয়ারার দাম ভালো থাকায় চাষিরা খুবই খুশি।

উপজেলার কাঞ্চননগর, হাশিমপুর ছৈয়দাবাদ, ধোপাছড়ির পাহাড়ী এলাকায় ব্যাপকভাবে পেয়ারার চাষ হয়। তবে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় কাঞ্চন নগরের পাহাড়ি এলাকায়। সে কারণেই এখানকার পেয়ারা কাঞ্চন পেয়ারা নামে পরিচিতি লাভ করেছে।

চন্দনাইশে উৎপাদিত পেয়ারা আকারে বড়, দেখতে সুন্দর, বিচি কম, রসালো, পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ও সু-স্বাদু হওয়ায় এখানকার পেয়ারা চট্টগ্রাম-ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। দূর-দূরান্ত থেকে ক্রেতারা এসে এখানকার পেয়ারা কিনে ট্রাকে করে নিয়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সরবরাহ করে বিক্রি করছেন। শুধু তাই নয়, ব্যক্তিগত উদ্যোগে দেশের বাইরে তথা- মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, ওমান, বাহরাইন ও কুয়েতে রপ্তানি হচ্ছে চন্দনাইশের পেয়ারা।

চন্দনাইশ উপজেলার সহস্রাধিক বাগানে কয়েক হাজার মানুষ পেয়ারা চাষের সাথে জড়িত থেকে লাভবান হয়েছেন। দক্ষিণ চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চল ও পাহাড়ের পাদদেশে উৎপাদিত পেয়ারা জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে টানা চার মাস ধরে পাওয়া যায়। প্রতি বছর মৌসুম শুরু হলে দক্ষিণ চট্টগ্রামের হাট-বাজারগুলোতে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের আনাগোনা বেড়ে যায়। পেয়ারা বহন ও বিক্রির মাধ্যমে প্রায় ১৫-২০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। পেয়ারা বিক্রির পাশাপাশি একটি অংশ পেয়ারার সাজানোর পাতা বিক্রি করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করছে। পেয়ারা বিক্রির সাথে চন্দনাইশের পাশাপাশি পটিয়া, বোয়ালখালি ও বাশঁখালী উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চলেও পেয়ারার চাষাবাদ হচ্ছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বাগিচাহাট, গাছবাড়িয়া কলেজ গেইট, খানহাট রেলস্টেশন, রৌশন হাট, বাদামতল মহাসড়কের পাশে প্রতিদিন ভোর থেকে পেয়ারার পাইকারি বাজার বসে। এখানকার চাষিরা অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে গভীর রাতে দল বেঁধে পাহাড়ের পাদদেশে পেয়ারা সংগ্রহ করতে বাগানে চলে যান। ভোরের আলো ফুটতেই কাঁধে করে পেয়ারার ভার নিয়ে পাঁচ/ছয় কিলোমিটার মেঠোপথ পাড়ি দিয়ে অস্থায়ী বাজারে আসেন পেয়ারা বিক্রির উদ্দেশ্যে। লালসালু কাপড় দিয়ে মোড়ানো পুঁটলিতে বাঁধা অবস্থায় থরে থরে সাজানো থাকে পেয়ারার ভারগুলো। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকারি ক্রেতারা ভার কিংবা শ’ হিসেবে কিনে নিলেও বাজারে খুচরা বিক্রি করেন ডজন হিসেবে। বড় সাইজের প্রতি ডজন পেয়ারা ৮০-১০০ টাকা, মাঝারি সাইজের পেয়ারা ৬০/৭০ টাকা এবং ছোট সাইজের পেয়ারা ৪৫/৫০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে চলাচলরত কোনো যানবাহন থামলেই পেয়ারা হাতে নিয়ে ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতারা দৌড়ে যায় সেটির কাছে। যাত্রীরাও লোভ সামলাতে না পেরে স্বা”ছন্দ্যে কিনে নিচ্ছেন স্বাস্থ্য সম্মত কাঞ্চন পেয়ারা।

বর্তমানে প্রতি বার পেয়ারা ১৪’শ থেকে ১৬’শ টাকা বিক্রি হচ্ছে। যা গত বছর এ মৌসুমে ৭’শ থেকে ৮’শ টাকা ছিল। পেয়ারার দাম বেশি থাকায় চাষিরা খুবই খুশি। পাশাপাশি আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ফলনও ভালো হয়েছে বলে জানিয়েছেন চাষিরা। মাঝামাঝি সময়ে দাম কমলেও মৌসুমের শেষ দিকে আবারো পেয়ারার দাম বেশি হবে বলে জানান কয়েকজন পেয়ারা বিক্রেতা। দক্ষিণ চট্টগ্রামে উৎপাদিত পেয়ারা সংরক্ষণের জন্য একটি হিমাগার নির্মাণ ও সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে পেয়ারা জুস কারখানা স্থাপণের দাবি জানিয়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা কৃষকলীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নবাব আলী। তিনি বলেন, দক্ষিণ চট্টগ্রামে উৎপাদিত পেয়ারা সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় পাইকারি বাজারে পেয়ারা কিনতে আসা পাইকাররা সিন্ডিকেট করে নিজেদের ই”ছামত দামে পেয়ারা কিনে নিয়ে যায়। কোনো কোনো সময় পাইকারের বেঁধে দামে পেয়ারা বিক্রি করতে অস্বীকৃতি জানালে ওই দিন পেয়ারা নিয়ে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় চাষিদের। হিমাগার না থাকায় সংরক্ষণের অভাবে এক প্রকার বাধ্য হয়েই পাইকারদের বেঁধে দেওয়া দামে পেয়ারা বিক্রি করতে হয় চাষিদের। এতে বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হ”েছন পেয়ারা চাষিরা।

চন্দনাইশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা স্মৃতি রাণী সরকার বলেছেন, পাহাড়ের পাদদেশে জমা হওয়া নতুন পলিমাটিতে পেয়ারার চাষ হয়। এই পলি খুবই উর্বর, ফলে পেয়ারা গাছের গোড়ায় কোনো ধরনের রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয় না। গাছে কোনো ধরনের কীটনাশকও ছিটানোর প্রয়োজন হয় না। গাছে ফুল আসার আগেই বাগান মালিকদের মালচিং পদ্ধতি অবলম্বন এবং পাহাড়ি ছড়ার পানি থেকে সেচ দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন বলে জানান। জৈব সারে উৎপাদিত বিধায় কাঞ্চন পেয়ারা স্বাস্থ্য সম্মত। চাষিরা ডাঁটা ও পাতাসহ এই পেয়ারা সংগ্রহ করে থাকেন। তাই ফরমালিন ও রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো ছাড়াই চাঁর-পাঁচ দিন অনায়াসে সংরক্ষণ করা যায় এ পেয়ারা। চন্দনাইশের পেয়ারা সু-স্বাদু ও দেখতে সুন্দর হওয়ায় চাহিদা রয়েছে প্রচুর। সহশ্রাধিক ধিক একর পাহাড়ি এলাকায় পেয়ারার চাষ হয়ে থাকে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.