প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের মধ্যে বৃক্ষ অন্যতম- মেয়র নাছির
সিটি নিউজ : চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এর আয়োজনে তিলোত্তমা চট্টগ্রামের সহযোগিতায় নগরীর আউটার স্টেডিয়ামে পক্ষকাল ব্যাপী সবুজ মেলা ২০১৯ শুরু হয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আলহাজ্ব আ জ ম নাছির উদ্দীন বেলুন উড়িয়ে এই মেলার উদ্বোধন করেন। এরপর মেয়র স্টল পরিদর্শন করেন। এ উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিটি মেয়র বলেন সৃষ্টি জগতে অপরূপ সৌন্দর্যলীলার মধ্যে বৃক্ষ অন্যতম।
গাছপালা ছাড়া মানুষের বেঁচে থাকার কোন উপায় নাই। মানুষ না থাকলে বৃক্ষের কোন অসুবিধা হতো না। কিন্তু বৃক্ষ না থাকলে এই পৃথিবীতে আদম সন্তানের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যেত। বৃক্ষ যেমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে বৃদ্ধিকারক, তেমনি আবার পরিবেশ সংরক্ষনেরও সজিব প্রতীক। তিনি বলেন, প্রাকৃতিক বিপর্যয় প্রতিরোধে বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। মানব সৃষ্ঠ কর্মকান্ডের বিরূপ প্রভাবে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে
তাই জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে দেশে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা ও খরার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে। এই দুর্যোগ থেকে উত্তোরনের জন্য প্রত্যেক নাগরিককে বৃক্ষ রোপন ও পরিচর্যায় আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানান সিটি মেয়র। তিনি বলেন, জীবনের প্রধান ও প্রথম উৎস যে অক্সিজেন, তা বৃক্ষ থেকে আসে। বর্তমানে অক্সিজেনের উৎস শুকিয়ে যাচ্ছে।
অক্সিজেনের বড় উৎস আমাজানের বিরাট বনাঞ্চল ও ব্রাজিলে। আজ থেকে কয়েক হাজার বছর আগে সাহারা অঞ্চলে বনভূমি ছিল। বাংলাদেশও এক সময় ২৩ ভাগ বনে আ”ছাাদিত ছিল- বর্তমানে তা নেই। এক পর্যায়ে এই বনভূমি ৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছিল। এমতাবস্তায় বর্তমান সরকারের নানামুখি পদক্ষেপে বাংলাদেশের বনাঞ্চলের পরিমান বেড়ে ১৭ ভাগ বন সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে মেয়র ঔষধী, বনজ, ফলদ বিভিন্ন জাতের যে সকল দেশীয় গাছ আমাদের নার্সারীগুলোতে পাওয়া যায় সেসমস্ত গাছসহ দেশীয় ফলের চারাগুলো বাড়ীর আঙ্গিনায় ও পতিত জায়গায় লাগানোর জন্য আহ্বান জানিয়ে বলেন, শহরে যারা বসবাস করেন তাদের বাড়ীর আশপাশে খালি জায়গা নেই। তাই তাদেরকে বাড়ির ছাদে, টবে গাছ লাগানোর উপর গুরুত্বারোপ করেন মেয়র। তিনি বলেন, ১০ বছর আগের বাংলাদেশ এখন আর নেই। চারদিকে গাছ আর গাছ। তাই এখুনি আমাদের প্রয়োজন বৃক্ষ রোপনের পাশাপাশি বৃক্ষ পরিচর্যায় অধিকতর যত্নবান হওয়া। ফলে দেশে যে পরিমান বৃক্ষরাজি থাকা দরকার তা আমরা পূরণ করতে সক্ষম হবো।
মেয়র আরো বলেন, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুন্দর ভাবে বাঁচতে দিতে হলে বৃক্ষ নিধন না করে আরো বেশি করে বৃক্ষ রোপন করা ছাড়া উপায় নাই। এতে করে আমরা আমাদের সন্তানদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য গ্রীন বাংলাদেশ উপহার দিতে পারবো। আমরা সবাই মিলে যদি এ কাজ করি তাহলে সুন্দর একটি সবুজ বাংলাদেশ পাবো। জলাবদ্ধতা প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, বালুর ন্যাড়া পাহাড়ের পলিতে নগরীর ড্রেন ভরে যায়। পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে জলবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। সড়কে যানবাহন ও পথচারীদের দুর্ভোগ বাড়ে। পাহাড় ধসে প্রাণহানি ও সম্পদহানি ঘটছে নিত্যদিন। এর উত্তোরনের জন্য বৃক্ষ রোপন করতে হবে।
নগরবাসীকে বেশি বেশি গাছ লাগানো ও ছাদ বাগান করার আহবান জানিয়ে সিটি মেয়র বলেন, এডিস মশার জন্য ছাদ বাগান দায়ী নয়। যাতে তিন দিনের বেশি পানি না জমে সেদিকে খেয়াল রাখার উপর গুরুত্বারোপ করেন মেয়র। সভায় সভাপতিত্ব করেন সবুজ মেলা ২০১৯ ব্যবস্থাপনা কমিটির আহবায়ক, নগর পরিকল্পনা ও উন্নয়ন স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান কাউন্সিলর সাইফুদ্দিন খালেদ সাইফু। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি এনভায়রনমেন্ট সায়েন্সের বিভাগের চেয়ারম্যান ড. জেরিন আক্তার ও বনগবেষনাগার ইনস্টিটিউটের প্রধান ড. মাহবুবুর রহমান।
এ সময় প্যানেল মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, জোবাইরা নার্গিস খান, কাউন্সিলর সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টু, সলিমউল্লাহ বা”চু, হাসান মুরাদ বিপ্লব, মো. গিয়াস উদ্দিন, কফিল উদ্দিন খান, নাজমুল হক ডিউক, মো. শাহেদ ইকবাল বাবু, ছাবের আহমদ, মোরশেদ আকতার চৌধুরী, মো. জয়নাল আবেদীন, মোহাম্মদ আজম, সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবিদা আজাদ এবং চসিকের সচিব মো. আবু শাহেদ চৌধুরী, মেয়রের একান্ত সচিব আবুল হাশেম প্রমুখ মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন চসিক প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ এ কে এম রেজাউল করিম এবং তিলোত্তমা চট্টগ্রামের নির্বাহী সাহেলা আবেদীন। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন আয়োজিত এই মেলায় বনরূপা, ন্যাশনাল, শিমুল পারুল, বাংলাদেশ, কাশবন, সবুজ বিপ্লব, চিটাগাং, পুষ্প, ব্র্যাক, ফতেয়াবাদ, বাহাদুর, চন্দননগর, আরণ্যক, নিউ কসমো, কসমো, পুষ্পকলি, আরএনজে, অবসরে সখের বাগান, কুদরত মধু, পঞ্চরসে আচার, বনসাই, তিলোত্তমা চট্টগ্রামসহ ৫২টি নার্সারীর স্টল রয়েছে। এতে প্রতিটি স্টলে ফলজ, বনজ ও ঔষধীসহ বিভিন্ন প্রকারের গাছগাছালি রয়েছে। এই মেলায় প্রতিদিন পরিবেশবিদ, বৃদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, ছাত্র-শিক্ষক ও জনপ্রতিনিধিদের অংশগ্রহনে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিদিন মেলা সকাল ৯ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এই মেলা আগামী ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে।