চট্টগ্রামের শীর্ষ রাজাকার ইউনুছ ধরাছোঁয়ার বাইরে

0

সিটি নিউজ, বাঁশখালীঃ মুক্তিযুদ্ধকালীন গণহত্যা, নারী নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত দেশের শীর্ষ ৬০০ রাজাকার-আলবদরের তালিকা ১৯৭২ সালে তৈরী করেছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকার। ওই তালিকার ৪০৩ নম্বর রাজাকার বাঁশখালীর সাধনপুর ইউনিয়নের বৈলগাঁও গ্রামের মৃত ফোরখ আহমদের পুত্র মো: ইউনুচ (৬৯)।

মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধার পুত্রসহ বিভিন্ন প্রগতিশীল ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৭১ সালে বাঁশখালীর গুণাগরীতে ১৮ জন জীবন্ত মানুষকে মাটিচাপা দিয়ে হত্যা এবং সাহেবের হাট এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা সার্জেন্ট মুহিউল আলমকে হত্যা, বিভিন্নজনের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও ধর্ষনসহ বিভিন্ন ভয়াবহ অপরাধের নেতৃত্ব দিয়েছিল পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে এই পৈশাচিক রাজাকার মো: ইউনুচ। দেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হলেও তিনি নানা কৌশলে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় বহাল তবিয়তে আছেন।

সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকেও তাঁর বিরুদ্ধে কোন ধরনের আইনি ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি। স্বজন হারানো ভুক্তভোগীরাও ভয়ে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারছেন না। উপকেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাধনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: মহিউদ্দিন চৌধুরী খোকা বলেন, ছোটবেলা থেকেই গেজেটেড রাজাকার মো: ইউনুচের বীভৎস কাহিনী বয়স্কদের কাছ থেকে শুনে আসছি। দেশের শীর্ষ রাজাকারের তালিকায় এই ইউনুচের নাম থাকলেও রহস্যজনক কারনে তিনি বহাল তবিয়তে। এ রকম বড় রাজাকারের বিচার হওয়া উচিত।

দক্ষিণ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার (অর্থ) মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মো: ইউনুচসহ বাঁশখালীর আড়াইশ রাজাকার ও আলবদরের নাম মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মো: ইউনুচ যেহেতু ১৯৭২ সাল থেকে গেজেটেড রাজাকার তাঁর মানবতাবিরোধী অপরাধে বিচার হওয়া উচিত। বাঁশখালী মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমদ ছফা বলেন, দেশ স্বাধীন হবার দুই মাস আগে অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে বাঁশখালীর গুণাগরীতে হত্যাকান্ড, অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজ ও নারী দর্ষণসহ নির্বিচারে অপরাধ সংঘটিত হয়।

এ ছাড়া মুক্তিযোদ্ধা সার্জেন্ট মহিউল আলমকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ওই সময় কালীপুরের দত্ত বাড়িতে ময়মনসিংহ ও ব্রাম্মনবাড়িয়া থেকে আগত ব্যবসায়ী ও একজন প্রকৌশলী স্বপরিবারে আশ্রয় নিয়েছিলেন। ওই দিন ভোররাতে ওই এলাকা থেকে ১৮ জনকে ধরে নিয়ে গুণাগরীর পাকিস্তান ক্যাম্পে নির্মমভাবে খুন করে মাটি চাপা দেয়। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বাঁশালী থানা এলাকায় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাতে সাতজন মুক্তিযোদ্ধা ও ৮৯ জন সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।

রাজাকারের তালিকাভুক্ত মো: ইউনুচ বলেন, আমার বয়স এখন ৫৫ বছর। সেই হিসেবে ১৯৭১ সালে আমার বয়স ৭ বছর ছিল। ওই বয়সে আমি রাজাকার-আলবদর হতে পারি? আমি কখনও রাজাকার ছিলাম না। ওইসব গুজব। আপনার বয়স সত্তরের ওপরে, আপনার প্রতিবেশী বয়স্করা বলছেন, আপনি বয়স লুকাচ্ছেন কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমার প্রকৃত বয়স কত আমি জানি না। তবে আমি রাজাকার নই। তবে সর্বশেষ ভোটার তালিকায় তাহার ভোটার নম্বর ১৫২৬৩৬৩২১৩০৫ এবং জন্ম তারিখ ১০-০১-১৯৪৪ইং লেখা আছে। সে হিসাবে যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তার বয়স ছিল প্রায় ২৮ বছর।

জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তীকালে কখনো বিএনপি কখনো আবার জাতিয় পার্টির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থেকে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকেছে শীর্ষ রাজাকার ইউনুছ। তার দুই সংসারের ছেলেরাও রাজাকার পিতাকে অনুসরন করেছে প্রতিটি ক্ষেত্রে। এক ছেলে ইয়াবা বিক্রি ও পাচারের দায়ে গ্রেপ্তার হয়ে জেল খেটেছে। আরেক ছেলের বিরুদ্ধে মদ বিক্রি ও নারী নির্যাতন সহ একাধিক মামলা রয়েছে। সেও জেল খেটে বের হয়েছে। রয়েছে অসংখ্য মামলা। মুক্তিযুদ্ধের সময় মানুষকে নির্যাতন করেছে রাজাকার পিতা। মুক্তিযুদ্ধের পর গোটা এলাকায় অপরাধমুলক কর্মকান্ড চালাচ্ছে তার ছেলেরা। একটি গোয়েন্দা সুত্র মতে, বাঁশখালীর শীর্ষ রাজাকার ইউনুছের বিরুদ্ধে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ জমা হবে যে কোন সময়।

বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার বলেন, মানবতাবিরোধীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতা মামলা হবার নিয়ম। সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিদের অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা হয়। উপজেলা পর্যায়ে তেমন নির্দেশনা নেই, ট্রাইব্যুনালের সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্মকর্তারা তা তদারকি করছেন। তারপরও বিষয়টি আমি স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবহিত করব।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.