চট্টগ্রামে ডা. আকাশ হত্যাঃ স্ত্রী, শ্বশুর-শ্বাশুড়িসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট

0

সিটি নিউজঃ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের চিকিৎসক মোস্তফা মোরশেদ আকাশের (৩২) আত্মহত্যা মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) আদালতে জমা দিয়েছে পুলিশ। তদন্তে স্ত্রী, শ্বশুর-শ্বাশুড়িসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

সোমবার বিকালে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চান্দগাঁও থানার এসআই আবদুল কাদের চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আদালতের প্রসিকিউশন শাখায় অভিযোগপত্রটি জমা দিলেও আজ বুধবার বিষয়টি জানা যায়।

অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিরা হলেন- চিকিৎসক আকাশের স্ত্রী তানজিলা হক চৌধুরী মিতু, তার মা শামীমা শেলী, বাবা আনিসুল হক চৌধুরী, ছোট বোন সানজিলা হক চৌধুরী আলিশা এবং মিতুর কথিত বন্ধু ডা. মাহবুবুল আলম।

মামলার ছয় আসামির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ভারতীয় নাগরিক উত্তম প্যাটেল নামের একজনকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘সোমবার (০৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে অভিযোগপত্রটি প্রসিকিউশন শাখায় জমা পড়েছে। মঙ্গলবার সরকারি ছুটি ছিল। আজ (বুধবার) আমরা সেটি সংশ্লিষ্ট আদালতে পাঠিয়েছি। সেখানে অভিযোগপত্রের গ্রহণযোগ্যতার শুনানির সময় নির্ধারিত হবে।’

গত ২৮ আগষ্ট তার স্ত্রী তানজিলা হক চৌধুরী মিতু হাইকোর্ট থেকে জামিন নেন।

উল্লেখ্য, গত ৩১ জানুয়ারী বৃহস্পতিবার ভোর ৫টার দিকে নগরীর চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার নিজ বাসায় ইন্স্যূলিন পূশ করে এই তিনি আত্মহত্যা করেন বলে পুলিশ জানায়। নিহত মোস্তফা মোরশেদ আকাশ (৩৩) জেলার চন্দনাইশ উপজেলার বড়কল, বাংলাবাজার এলাকার মৃত আব্দুর সবুরের পুত্র।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস সম্পন্নকারী ডাঃ মোস্তফা মোরশেদ আকাশ চট্টগ্রামের তরুন ডাক্তারদের জনপ্রিয় কোচিং সেন্টার ‘থ্রি ডক্টরস’-এর সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন বলে জানা গেছে। চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল বশর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

পারিবারিক সুত্রে জানা গেছে, আত্মহত্যার আগে ভোর ৪টা ৫২ মিনিটে স্ত্রীর সাথে একটি ছবি ফেসবুকে শেয়ার করে ‘ভালো থেকো আমার ভালোবাসা তোমার প্রেমিকাদের নিয়ে’ এই এক লাইনের সর্বশেষ স্ট্যাটাস দেন। ৪টা ২৬ মিনিটে স্ত্রীর আরো কিছু ঘনিষ্ট্য মুহুর্তের ছবি শেয়ার করে এবং স্ত্রীর অন্য পুরুষের সাথে সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে নিজে আত্মহত্যা করার ঘোষনা দেন ডা. আকাশ।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই আলাউদ্দিন জানান, সকাল ৬টা ২০ মিনিটে ডাক্তার মোস্তফা মোরশেদকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। আমরা জানতে পেরেছি স্ত্রীর উপর অভিমান করে তিনি ইন্স্যূলিনের সাহায্যে আত্মহত্যা করেছেন। লাশ মর্গে রাখা হয়েছে।

জানা যায়, একজন জনপ্রিয় শিক্ষক হিসেবে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের কাছে তার খ্যাতি রয়েছে। তার ফেসবুকে দেয়া সর্বশেষ স্ট্যাটাসে তার স্ত্রী মিতুর বেলাল্লাপনাকে দায়ী করেন।

১ ফেব্রুয়ারি বিকেলে তানজিলা হক চৌধুরী মিতুসহ ছয়জনকে এজাহারনামীয় আসামি ও ৩/৪ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে চান্দগাঁও থানায় দণ্ডবিধির ৩০৬ ধারায় মামলা দায়ের করেন ডা. মোস্তফা মোরশেদ আকাশের মা জোবেদা খানম।

মামলায় আসামিরা হলেন- তানজিলা হক চৌধুরী মিতু (২৯), তার মা শামীম শেলী (৪৯), বাবা আনিসুল হক চৌধুরী (৫৫), বোন সানজিলা হক চৌধুরী আলিশা (২১), তানজিলা হক চৌধুরী মিতুর দুই ছেলে বন্ধু উত্তম প্যাটেল ও ডা. মাহবুবুল আলম (২৮)। এছাড়া ৩/৪ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।

এর আগে ৩১ জানুয়ারি রাতে নগরের নন্দনকানন এলাকায় তানজিলা হক চৌধুরী মিতুকে তার খালাতো ভাইয়ের বাসা থেকে গ্রেফতার করে সিএমপির কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ অভিযানে নেতৃত্ব দেন।

গ্রেফতারের পর তানজিলা হক চৌধুরী মিতুর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী আমানত শাহ (র.) মাজার এলাকা থেকে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করে পুলিশ।

পরে নিম্ন আদালতে জামিন চেয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন মিতু। আদালত জামিন প্রশ্নে রুল জারি করেন। সেই রুলের শুনানি শেষে তাকে জামিন দেন হাইকোর্ট।

মোস্তফা মোরশেদ আকাশ চন্দনাইশ উপজেলার বরকল বাংলাবাজার এলাকার আব্দুস সবুরের ছেলে। তিনি পরিবারসহ চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার বি-ব্লক ২ নম্বর রোডের ২০ নম্বর বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। ডা. আকাশের সঙ্গে তানজিলা চৌধুরী মিতুর পরিচয় ২০০৯ সাল থেকে। ২০১৬ সালে বিয়ে হয় তাদের।

তানজিলা হক চৌধুরী মিতুর বাড়ি কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া বড়ঘোপ এলাকায়। মিতুর পরিবার পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকার ২ নম্বর রোডের ৪০/এ নম্বর বাড়িতে বসবাস করেন। মিতু যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলিনায় থাকতেন। ১৩ জানুয়ারি তিনি বাংলাদেশে আসেন।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.