টাইগাররা ৪ উইকেটে হারালো আফগানদের
স্পোর্টস ডেস্কঃ ত্রিদেশীয় সিরিজে লিগ পর্বের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশকে ১৩৯ রানের লক্ষ্য দিয়েছে আফগানিস্তান। টস জিতে বাংলাদেশের আমন্ত্রণে ব্যাটিংয়ে নেমে সাত উইকেটে ১৩৮ রান তুলে আফগানিস্তান। ৬ উইকেট খুইয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। বলতে গেলে সাকিব আল হাসান একাই দলকে টেনে নিয়ে গেলেন তরীতে। যথারীতি সাকিবই হন ম্যান অব দ্যা ম্যাচ।
১৩৯ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে দলীয় ৯ রানের মাথায় বিদায় নেন ওপেনার লিটন দাস। মুজিব উর রহমানের বলে আসগর আফগানের তালুবন্দি হওয়ার আগে লিটন করেন ৪ রান। দলীয় ১২ রানের মাথায় বিদায় নেন আরেক ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত। শান্তর ব্যাট থেকে আসে ৫ রান। এরপর সাকিব-মুশফিকে প্রতিরোধ করে বাংলাদেশ। তাদের জুটিতে আসে ৫৮ রান।
মোহাম্মদ নবীর বলে ব্যক্তিগত ১৪ রানে ক্যাচ তুলে দেন মুশফিক। সহজ ক্যাচ মিস হলে জীবন পান মুশফিক। জীবন পেলেও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি, দলীয় ৭০ রানের মাথায় করিম জানাতের বলে ক্যাচ তুলে নিজের বিদায় ঘণ্টা বাজান মুশফিক। বিদায়ের আগে ২৫ বলে এক ছক্কায় করেন ২৬ রান।
এরপর রশিদ খানের প্রথম ওভারেই সাজঘরে ফেরেন মাহমুদউল্লাহ। হ্যামস্ট্রিংয়ে টান পড়ে অষ্টম ওভারে মাঠের বাইরে গিয়েছিলেন রশিদ খান। ১১তম ওভারে মাঠে ফিরে বোলিং করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মাঠে পর্যাপ্ত সময় না থাকায় মাঠে নেমে বোলিং করতে পারেননি তিনি। ১৪তম ওভারে বল করতে এসেই মাহমুদউল্লাহকে এলবিডব্লিউ করান রশিদ। ৮ বলে ৬ রান করেন মাহমুদউল্লাহ।
দলীয় স্কোরকার্ডে ৩ রান যোগ হতেই প্যাভিলিয়নে ফেরেন সাব্বির। এক ম্যাচ পড়ে সুযোগ পেয়ে আবারও ব্যর্থ সাব্বির রহমান। ব্যক্তিগত ১ রানে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরের পথ ধরেন তিনি। মাহমুদউল্লাহর পর বাজে শটে রশিদ খানকে উইকেট উপহার দিয়েছেন আফিফ হোসেন। উইকেট থেকে সরে বড় শট খেলতে গিয়ে বল মিস করে বোল্ড হন আফিফ। ৪ বল খেলে তার ব্যাট থেকে আসে দুই রান।
এরপর সাকিব-মোসাদ্দেকের ৩৫ রানের জুটিতে জয়ের বন্দরে পৌছায় টাইগাররা। ৭০ রানে সাকিব ও ১৯ রানে অপরাজিত আছেন মোসাদ্দেক।
এই ম্যাচে টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। ফিল্ডিংয়ে নেমে শুরুতেই ক্যাচ মিস করেছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। শফিউল ইসলামের করা ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের পঞ্চম বলে ফাইন লেগে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন রহমানুল্লাহ গুরবাজ। কিন্তু বল রিয়াদের হাত ফসকে পড়ে যায়। এরপরই বাংলাদেশের বোলারদের তুলোধুনা করেছে আফগানিস্তানের ব্যাটসম্যানরা। এরপর ৭৫ রানের জুটি গড়েছে আফগান দুই ওপেনার।
দশম ওভারে আফিফের হাত ধরে সাফল্য পেল বাংলাদেশ। আফিফের তৃতীয় বল সুইপ করতে গিয়ে শর্ট লেগে ক্যাচ দেন জাজাই। ৩৫ বলে ৪৭ রান করেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে এটি আফিফের দ্বিতীয় উইকেট। জাজাইয়ের পর আসগর আফগানকে টিকতে দিলেন না আফিফ হোসেন। ডানহাতি অফস্পিনের স্পিনের বিপরীতে বড় শট খেলতে গিয়ে টাইমিংয়ে গড়বড় করেন আসগর আফগান। রানের খাতা খোলার আগেই শান্তর হাতে ক্যাচ দেন এ অভিজ্ঞ ক্রিকেটার।
পরের ওভারে আঘাত হানেন মোস্তাফিজ। তার কাটার বুঝতে না পেরে ফেরেন রহমানুল্লাহ গুরবাজ। তার আগে ২৭ বলে দুই চার, দুই ছক্কায় করেন ২৯ রান। লিগ পর্বের প্রথম ম্যাচে ৮৪ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলে বাংলাদেশকে একাই হারিয়েছিলেন মোহাম্মদ নবী। বিপজ্জনক এ ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে সাকিব স্বস্তি দিলেন বাংলাদেশ শিবিরে। ছয় বল চার রান করে সাজঘরে ফেরেন নবী। দলীয় ৯৬ রানের মাথায় রানআউট হন ১ রান করা গুলবাদিন নাইব।
দলীয় ১০৯ রানে সাইফ উদ্দিনের ইয়র্কারে বিপর্যস্থ হন নাজিবুল্লাহ জাদরান। ১৬ বলে তার রান ১৪। দলীয় ১১৪ রানের মাথায় শফিউল ইসলামকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মোস্তাফিজের হাতে ধরা পড়েন ৪ বলে ৩ রান করা করিম জানাত। শফিকুল্লাহ ১৭ বলে ২৩ এবং রশিদ খান ১৩ বলে ১১ রানে অপরাজিত থাকেন।
সাকিব ৪ ওভারে ২৪ রান দিয়ে তুলে নেন একটি উইকেট। মাহমুদউল্লাহ ১ ওভারে ১৬ আর মোসাদ্দেক ১০ রান দিয়ে কোনো উইকেট পাননি। আফিফের বোলিং ফিগার ৩-১-৯-২। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ৪ ওভারে ২৩ রান খরচায় তুলে নেন একটি উইকেট। শফিউল ইসলাম ৪ ওভারে ২৪ রান দিয়ে নেন একটি উইকেট। মোস্তাফিজ ৩ ওভারে ৩১ রানের বিনিময়ে তুলে নেন একটি উইকেট।
দুই দল আগেই ফাইনাল নিশ্চিত করে ফেলেছে। তবে নিয়ম রক্ষার হলেও লিগ পর্বের শেষ ম্যাচটি আলাদা গুরুত্ব পাচ্ছে দুই দলের কাছেই। টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত অপরাজিত রশিদবাহিনী। জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চায় তারা।
আর আফগানদের কাছে টেস্ট হারের পর, টি-টোয়েন্টিতেও হেরেছে সাকিবের দল। তাই আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় ছাড়া কিছু ভাবছে না টাইগাররা।
বাংলাদেশ একাদশ:
নাজমুল হোসেন শান্ত, লিটন দাস, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মোসাদ্দেক হোসেন, আফিফ হোসেন, সাব্বির রহমান, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, শফিউল ইসলাম এবং মোস্তাফিজুর রহমান।
আফগানিস্তান একাদশ:
হজরতউল্লাহ জাজাই, রহমানুল্লাহ গুরবাজ, শফিকুল্লাহ, আসগর আফগান, মোহাম্মদ নবী, নাজিবুল্লাহ জাদরান, গুলবাদিন নাইব, রশিদ খান, করিম জানাত, নাভিন উল হক এবং মুজিব উর রহমান।