চন্দনাইশে অনলাইনে চলছে জুয়ার আসর!
নিজস্ব সংবাদদাতা,চন্দনাইশ,সিটি নিউজ: দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে এখনো যুক্ত হয়নি অনলাইনভিত্তিক জুয়ার আসরগুলো। অথচ অভিযোগ রয়েছে এই অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে দক্ষিণ চট্টগ্রামের চন্দনাইশের বিভিন্ন এলাকায় চায়ের স্টলে প্রতিদিন লেনদেন হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা ভয়ঙ্কর অনলাইন জুয়া মাধ্যমে। চন্দনাইশের ২টি পৌরসভা ৮টি ইউনিয়নে প্রায় প্রতিটি পাড়া মহল্লার অনেকেই এই অনলাইন জুয়ার সাথে জড়িত। বিশেষ করে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পেশাজীবীর মানুষেরা ঝুঁকছে এই জুয়ার দিকে। আর হারাচ্ছে তাদের শেষ সম্বলটুকু।
দেশি-বিদেশি প্রিমিয়ার লীগ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সব খেলা নিয়ে চলে ভয়ঙ্কর অনলাইন জুয়া। বেট-৩৬৫, বেট এশিয়া-৩৬৫, ১ এক্সবেট, বেটইন-৭৭ নামের এসব এফ ব্যবহারের মাধ্যমে জুয়ায় লেনদেন হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। খেলা প্রেমীদের টার্গেট করে এক অসাধু চক্র মানুষকে লোভ দেখিয়ে প্রতিনিয়তই হাজার হাজার টাকার ফলাফল বাজি, ওভার বাজি, রানবাজিসহ বিভিন্ন ধরনের জুয়া খেলছেন। এ জুয়াচক্রের ফাঁদে পড়ে কেউ আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে আবার কেউ তার সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসছে। টাকার লেনদেন নিয়ে অনেক সময় ঘটে নানা ধরনের বিপত্তির ঘটনা। এসব এফ-এ প্রতিনিয়ত কোন না কোন খেলাকে ঘিরে জুয়া চলমান রয়েছে। খেলা চলাকালীন চন্দনাইশের বিভিন্ন ইউনিয়নের অলি গলিতে ছোট ছোট দোকানে দর্শকের ভিড় দেখা যায়।
যা প্রায় ছোট খাটো জুয়ার আসর। ম্যাচে জয় পরাজয়, এক ওভারে কত রান, এক বলে কি হবে, কোন খেলোয়ার কেমন খেলবে, কোন বলে ছক্কা হাঁকাবে, কোন বলে উইকেট পড়বে, এমন সব কিছুর উপর বাজি ধরা হয়। প্রতি বলে দাম উঠে ৫০ থেকে ১০০০ টাকা। আর এক ওভারে তা গড়ায় ২০ হাজার থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত। জুয়াবাজরা ক্ষতিগ্রস্থ হলেও নিয়ন্ত্রকের কোন লোকসান নেই। তারা প্রতি বাজির এপিট ওপিট দুই পিটে ৫০ টাকা করে পান। একেক জন ৯/১০ টি বাজি ধরে। এ ভাবে এক এলাকায় ৫০/৬০ জন জুয়া বা বাজিতে অংশ নেন।
জুয়াতে মেতে উঠা অধিকাংশই বেকার তরুণ যুবক ও কিশোর। এদের সাথে যোগ দিয়েছে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। চন্দনাইশ পৌরসভা মিজ্জির দোকান, নয়াহাট, অফিসপাড়া, কলঘর, বৈলতলী, বরকল, বরমা, সাতবাড়িয়া, দোহাজারী, হাশিমপুর, কাঞ্চননগর, জোয়ারাসহ বিভিন্ন এলাকার ৫০টি অধিক স্থানে এসকল জুয়ার আসর চলছে প্রতিনিয়ত। জানা যায়, অনলাইন জুয়ায় নীরবে ভূমিকা রেখে চলছে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক ক্রীড়া বাজির সাইট ‘বেট-৩৬৫ ডটকম’।
‘বেট-৩৬৫’ মূলত ক্রীড়া বিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক বেটিং (বাজি ধরার) সাইট যেখানে বিশ্বে যেকোন স্থানের ১৮ বছর বা এর বেশি বয়সের যে কেউ যে কোনো খেলা নিয়ে অন্যদের সঙ্গে বাজি ধরতে পারেন।
চন্দনাইশে বিভিন্ন এলাকায় বসা জুয়ার আসরে অল্প সংখ্যক রাতরাতি মোট অংকের মালিক হলেও অনেকেই সর্বস্ব হারিয়ে পথের ফকির হচ্ছে। নিঃস্বের তালিকায় নানা শ্রেণি পেশা ও বয়সের শত শত মানুষ। কেউ কেউ ঘর বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়ায়। কেউ জুয়ার টাকার জন্য বিভিন্ন সংস্থার ঋণের জালে আবদ্ধ। যারা জুয়া চালাই তাদের অনেকের হয়েছে বাড়ি গাড়ি। সূত্রমতে জানা যায় মোবাইলে মেসেজ কল দিয়ে জুয়ায় বাজি ধরা হয়। কেউ সরাসরি বাজিতে অংশ নেন। চন্দনাইশ থানা পুলিশ বিভিন্ন সময় জুয়াড়িদের আটক করে মোবাইল কোটের মাধ্যমে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অর্থদন্ড দিয়ে থাকেন।
কিন্তু এতেও এসকল জুয়া কোনভাবে বন্ধ হয়নি। এব্যাপারে চন্দনাইশ থানা অফিসার ইনচার্জ কেশবচক্রবর্তী বলেছেন সব ধরণের জুয়াসহ অসামাজিক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। অভিযোগ পেলে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে। ‘অনলাইন জুয়া যে কোন জায়গা থেকেই চলতে পারে। তাই তাদের মনিটরিং করা কঠিন।চন্দনাইশে কোথায় এসব জুয়া চলে সেরকম তথ্য পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে সাইবার ক্রাইম মনিটরিং সেল প্রতিনিয়ত অপরাধীদের সনাক্ত করার চেষ্টার করছে।