সাংবাদিকদের মাধ্যমে জাতি অন্ধকারের মধ্যেও আলোর পথ দেখে

0

সিটি নিউজ ডেস্ক,চট্টগ্রাম :  আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের উপ প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বলেছেন, ‘সকল দল ও মতের উর্ধ্বে উঠে সাংবাদিকদের কাজ করতে হবে। কারণ তারা হলেন জাতির বিবেক। চেতনার সমুজ্জ্বল বাতিঘর। সাংবাদিকদের লেখনীর মাধ্যমে জাতি অন্ধকারের মধ্যেও আলোর পথ দেখে। তাই সমস্যার পাশাপাশি সম্ভাবনার প্রতিও সমান দৃষ্টিপাত রাখা উচিত। সাংবাদিকরা এলাকার অবকাঠামো উন্নয়নে যেমন ভুমিকা রাখে তেমনি আর্থসামাজিক উন্নয়নে রয়েছে তাদের অপরিসীম ভূমিকা। তবে কাজ করতে হবে ঐক্যবদ্ধভাবে। যে কোনো প্রয়োজনে পাশে থাকবো সবসময়।’

সাতকানিয়া লোহাগাড়া সাংবাদিক ফোরাম, চট্টগ্রামের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

শনিবার (১২ অক্টোবর) রাতে চট্টগ্রাম নগরীর একটি রেস্টুরেন্টে ফোরামের সভাপতি ও চট্টগ্রাম প্রতিদিন সম্পাদক হোসাইন তৌফিক ইফতিখারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক ও যুগান্তরের সিনিয়র রিপোর্টার মিজানুল ইসলাম। আলোচনায় অংশ নেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক জামাল উদ্দিন ইউসুফ, নাজিম মুহাম্মদ, এসএম রানা, ওমর ফারুক, আহমেদ মুসা, ইফতেখার ফয়সাল প্রমুখ।

যত্রতত্র ‘শিবির’ তকমা নয়

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লেই যে কাউকে ‘শিবির’ তকমা না দিতে সরকারের একজন সচিবকে সতর্ক করেছেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন।

চট্টগ্রামে চ্যানেল আইয়ে কর্মরত মো. নবাবের এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, এখানে একটু আগে একজন বলেছেন তার বাড়ি সাতকানিয়ার ধর্মপুর, আমি তখন সাথে সাথে বলেছি এটা তো সেকেন্ড গোপালগঞ্জ। তেমনি অনেকেই বগুড়ার নাম উঠলে বলে, সেখানে তো সব বিএনপি। আবার গোপালগঞ্জের কথা আসলে বলে, সব আওয়ামী লীগ। এসব হচ্ছে মানুষের ধারণা। আসলে তো তা নয়। বগুড়াতে আওয়ামী লীগ এক লাখ ভোট পায়, আবার গোপালগঞ্জের মতো জায়গায় বিএনপি ১০-১৫ হাজার ভোট পায়।

সরকারি চাকরিতে সাতকানিয়ার বাসিন্দারা বৈষম্যের শিকার হন বলেও নবাব অভিযোগ করেন। এ বিষয়ে সাতকানিয়ার সন্তান আমিনুল ইসলাম বলেন, ব্রিটিশ আমল থেকে একটা নিয়ম আছে, যারা সরকারি চাকরি করতে আসবে, তার সম্পর্কে একটু খোঁজ-খবর নেওয়া। তার চরিত্র-আচরণ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হতো। ইদানিং সেখানে রাজনৈতিক পরিচয় চাওয়া হচ্ছে। কেন চাওয়া হচ্ছে সেটা লম্বা বিতর্কের বিষয়।

তিনি বলেন, চাকরিতে, রাজনীতিতেও কেউ সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার হলে আরেকটু বেশি খতিয়ে দেখে। এগুলো নিয়ে কয়েকজন মন্ত্রী ও সচিবের সাথে আমার অনেক বিতর্ক হয়েছে। আমার সাথে একজন সচিবের প্রচণ্ড রাগারাগি হয়েছে। কেন? চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেউ বের হলেই তিনি মনে করেন, শিবির। একদিন আমি তাঁকে বললাম, ভাই আপনিও তো শিবির! তিনি রেগে গিয়ে শিবির ডাকার কারণ জানতে চান। তখন আমি বললাম, আপনি তো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাই শিবির হলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েরও সবাই শিবির।

আমিনুল ইসলাম বলেন, আমি তাঁকে (সচিব) যেটা বললাম, রাজনৈতিক আদর্শ যার যার। কিন্তু বগুড়াতে যারা আওয়ামী লীগ করে তাদের ‘ঈমান’ আমাদের চেয়ে শক্তিশালী। আবার গোপালগঞ্জে যারা ধানের শীষে ভোট দেয়, তাদের ‘ঈমান’ বগুড়ার লোকদের চেয়ে শক্তিশালী। আবার বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে মেরে ফেলার জন্য ৭৬ কেজি বোমা যে পুঁতে রেখেছিল তার বাড়ি কিন্তু সাতকানিয়া না, তার বাড়ি গোপালগঞ্জে। এই কথাগুলো আমি সব সময় বলি।

রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তন হলে এ ধরনের অবস্থা নিরসন হবে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন।

ইয়াবা ব্যবসায়ী নাকি দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলী— কে বড় অপরাধী

সংশ্লিষ্টরা প্রকল্প নেওয়ার সময় সব ঠিক করে ফেলেন। প্রকল্প বরাদ্দের মধ্যে ১৫ শতাংশ যাচ্ছে সরকারের ভ্যাট-ট্যাক্সে। ১০ শতাংশ মারতেছে লেসে। বাকি টাকাগুলো ভাগ করে নিচ্ছে। দেশের জন্য কাজ হচ্ছে ২০ শতাংশ।

ইয়াবা ব্যবসায়ী বড় অপরাধী নাকি দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলী বড় অপরাধী— এ প্রশ্ন তুলে আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, ‘আমার দৃষ্টিতে সে-ই বড় অপরাধী যে ঠিকাদারের কাছ থেকে ঘুষ নিয়েছে। টেকনাফের মানুষজন সাংস্কৃতিকভাবে এতটাই নিম্নশ্রেণীর যে তারা ইয়াবা ব্যবসাকে অপরাধই মনে করছে না। ইয়াবা ধরার পর বলে, আমি কী দোষ করলাম? আমি কী কাউকে ঠকাচ্ছি? আমি তো এটা কিনে বিক্রি করতেছি। বাবা-মা সবাই মিলে করতেছে কাজটা। তারা এটাকে হালাল ব্যবসা মনে করে। কেউ এক হাতে টাকা দিচ্ছে, আর কেউ এক হাতে ইয়াবা নিচ্ছে। যে যাই বলুক, তারা কিন্তু নিজেদের বিবেকের কাছে পরিষ্কার যে, তারা অন্যায় করছে না। কিন্তু বুয়েট থেকে পাশ করা যে প্রকৌশলীরা জেনে-বুঝে ঠিকাদারদের কাছ থেকে ঘুষ নিচ্ছেন, অবশ্যই তারা আমার চোখে বড় অপরাধী।’

রাজনৈতিক সংস্কৃতির ধ্বংস যেভাবে শুরু হল

সাতকানিয়ার সন্তান আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, আমরা যখন এরশাদবিরোধী আন্দোলন করি, তখন ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক ছিল। আমরা সারারাত গল্প করতাম, আড্ডা দিতাম সব দলের ছেলেরা একসাথে। ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর ছাত্রলীগ করলে ব্যবসা করা যাবে না, আওয়ামী লীগ করলে এটা-সেটা করা যাবে না— এ ধরনের কিছু ছিল না। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলেও একইভাবে রাজনৈতিক কারণে গ্রেপ্তারের কোন নজির নেই।

তিনি বলেন, পাঁচ বছর দেশ শাসনের পর ২০০১ সালে গণতান্ত্রিক উপায়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হস্তান্তর করে। এরপর হঠাৎ করে শুরু হয়ে গেল অগ্নিসংযোগ, আর হিন্দু পেলে ধর্ষণ। আমি তখন বাগেরহাটে ছিলাম, দেখেছি পাড়ার পর পাড়া আগুন জ্বলছে। সেখান থেকে গেলাম মহেশখালী। সেখানে গতবারের উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন হোছাইন ইব্রাহিম। তার ভাই ওসমান চেয়ারম্যান ছিলেন। তাদের বাবাও চেয়ারম্যান ছিলেন। তাদের বাড়িতে গেলাম। বিশ্বাস করুন আর না করুন তাদের বাড়িতে আগুন দেওয়ার ৮ দিন পর গিয়ে দেখি, গোয়ালঘরে গরুর চামড়া পোড়ার গন্ধ। তারা সবাই তখন পালিয়ে গিয়েছিল। এই ধরনের জায়গা থেকে দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির ধ্বংস শুরু হয়েছে।

‘২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে শেখ হাসিনার সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা হয়েছে। তখন কিন্তু আওয়ামী লীগ আর আগের জায়গায় নেই। আমি জানি না এই সম্পর্ক ভবিষ্যতে ঠিক হয় কিনা। এমনকি ৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর প্রথমবারের মতো ১৯৯২ সালে ১৫ আগস্ট কথিত জন্মদিন পালন করেছে বেগম খালেদা জিয়া। এগুলো কিন্তু উসকানি। এর চেয়ে বড় আঘাত আর হতে পারে না।’

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আমিন বলেন, আমার স্পষ্ট মনে আছে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর খালেদা জিয়া ওমরা করতে গেলেন। তখন সিএমএইচে তারেক জিয়ার প্রথম সন্তানের জন্ম হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টেলিফোন করে তখন তারেকের সাথে কথা বলেছিলেন। মিষ্টি-ফুল পাঠিয়ে দূত মারফত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘দেখ বাবা, তোমার মা বাইরে গেছে, যে কোন প্রয়োজনে আমাকে বলবে, আমি আছি।’ সে সময় এটা ইত্তেফাকে বড় করে নিউজও হয়েছিল। বাংলাদেশের ইতিহাসে উচ্চপর্যায় থেকে এর আগে কখনো এমন সৌজন্যমূলক আচরণ হয়নি। কিন্তু তারপর আমরা সব ভুলে গেলাম।

‘২১ আগস্টের পরে ওই জায়গাটা একটা ‘মার্জিনাল’ হয়ে গেছে। এতটাই মার্জিনাল হয়ে গেছে যে, আমি জানি না, এখানে আদৌ কোন ভবিষ্যৎ আছে কিনা। যদি এটা একটা মিনিমাইজ না হয়… যেমন খালেদা জিয়া এখন ১৫ আগস্ট জন্মদিন পালন করছেন না। যে কারণে কিছুটা হলেও সিমপ্যাথি আসছে।’

রাজনীতির প্রথম আঘাত

নিজের সংগ্রামমুখর রাজনৈতিক জীবনের তথ্য তুলে ধরে আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, আমি জীবনে প্রথম আঘাত পাই স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ১৯৮৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি, চট্টগ্রামে মোজাম্মেলের লাশ পাওয়ার দিন। আমি তখন মাদরাসার ছাত্র। চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সদস্য ছিলাম। শুনলাম শহীদ মিনারে ৪-৫ জন মারা গেছে। আমি তখন মাদরাসার কয়েকজনকে এক করলাম মিছিলে যাওয়ার জন্য। তখন থেকে আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তাম। জোহরের নামাজের সময় হলে আম্মা বললেন, আজকে মসজিদে যাওয়া যাবে না। নামাজ ঘরেই পড়তে হবে। আমি নাছোড়বান্দা, মসজিদে যেতেই হবে। মসজিদে গেলাম।

স্মৃতিচারণ করে আমিন আরও বলেন, আমাদের বাসা খলিফাপট্টি এলাকায় তখন রাস্তাটা ছিল ওয়ানওয়ে। আমি নামাজ পড়ে যখন সাব-এরিয়ার দিকে বেরিয়ে আসছিলাম, আম্মা কখন যে ছাদে দাঁড়িয়ে আছে, আমি জানি না। আম্মা ছাদ থেকে চিৎকার করে বলে, আমি তোকে দেখতেছি, তুই যাবি না, আমি মানা করতেছি। তারপরও আমি মায়ের কথা না শুনে চলে গেলাম। তখন শুনি মোজাম্মেলের লাশ নিয়ে গেছে চট্টগ্রাম মেডিকেলে। সেখানে ঢুকতেই পুলিশের লাঠিচার্জ। লাঠির আঘাতে কপাল ফেটে গেল। তখন আমাদের এক নেতা ছিলেন বশির— বাড়ি চকরিয়ায়। তিনি আমাকে সরিয়ে নিলেন। রাজনীতি করতে গিয়ে এটা প্রথম আঘাত।

অনুষ্ঠানের শেষভাগে সাতকানিয়া লোহাগাড়া সাংবাদিক ফোরাম, চট্টগ্রামের পক্ষ থেকে প্রধান অতিথি আমিনুল ইসলামকে শুভেচ্ছা স্মারক তুলে দেওয়া হয়।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.