চট্টগ্রামে রাজা-বাদশাদের রাজত্ব

0

জুবায়ের সিদ্দিকীঃ শুদ্ধি অভিযান শুধু ঢাকায় সীমাবদ্ধ না রেখে চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা, ফেনী, কক্সবাজার, যশোরসহ সারাদেশে একযোগে সাঁড়াশীভাবে চালানো উচিত বলে বিজ্ঞজনরা মনে করেন। চট্টগ্রামেও আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের অনেক শীর্ষ নেতা সম্পদের পাহাড় গড়েছেন নামে-বেনামে। এরা নেতাকর্মীতো দুরে থাক, সাধারণ মানুষকে মানুষ বলে গন্য করেনা।

কোটিপতি হয়েও এরা চাঁদাবাজী করে ফুটপাত থেকে। অনেক নেতা আবার যুবলীগেও আছেন আবার আওয়ামী লীগেও আছেন। “ডাবল ডেকার” এসব রাজনৈতিক নেতারা নগরীতে বিলাশবহুল জীবনযাপন ও চামচা চাটুকার পরিবেষ্টিত হয়ে দলের বারোটা বাজাচ্ছেন। ঠিকাদারী ও বিভিন্ন ব্যবসার আড়ালে রাজনীতির মাঠে এরা এখন বেপরোয়া হয়ে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকার মালিক।

শুদ্ধি অভিযান চলছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কেউ যদি অপরাধ করে, যে কোন দল, কী করে না করে আমি সেটা দেখিনা। আমার কাছে অপরাধী অপরাধীই। সাধারণ মানুষ মনে করে, বৈধ ও অবৈধ ব্যবসার আড়ালে রাজনীতির লেবাসে অবৈধভাবে প্রভাব খাটিয়ে যারা এই ১১ বছরের মধ্যে কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন তাদের আইনের আওতায় আনা এখন সময়ের দাবী।

চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের শীর্ষ দুর্নীতিবাজদের চিহিৃত করে তাদের সম্পদের হিসাব নেওয়া এখন সাধারণ মানুষের প্রাণের দাবী। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা, দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযান যেন চলমান থাকে। রাজনৈতিক দলের ছাতা ব্যবহার করে অপরাধীরা যেন পার না পায়। দুর্নীতিবাজরা যত অর্থবিত্তের মালিকই হোক না কেন দলের সবকিছুই তখন তাসের ঘরের মতো ভেঙ্গে পড়তে বাধ্য। যদি রাষ্ট্রশক্তি দুর্নীতি বিরোধী অভিযানকে সঠিকভাবে প্রয়োগ করে দুর্নীতিবাজদের হটাতে সক্ষম হয়, তবেই অভিযান সফল বলা যাবে।

আওয়ামী লীগের হাই কমান্ড মনে করে, ৩ দফায় গত ১১ বছরে ক্ষমতায় থাকার কারনে দলের ভেতর এক ধরনের দুর্বৃত্তায়নের চর্চা হয়েছে। যার ফলে আদর্শিক ও ত্যাগী নেতারা হারিয়ে যাচ্ছেন এই দল থেকে। সর্বস্তরে দূর্বল হয়ে পড়ছে আওয়ামী লীগ। রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী হতে হলে আওয়ামী লীগের থেকে দুর্বৃত্তদের হটাতে হবে বলে মনে করেন শেখ হাসিনা।

সারাদেশের মতো চট্টগ্রাম মহানগরীতেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতার আশ্রয়ে পশ্রয়ে দুর্বৃত্তায়ন সাধারণ মানুষ প্রত্যক্ষ করছেন। ফুটপাতে চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে, জমি দখল, টেন্ডারবাজিসহ নানা অপকর্মে জড়িত আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের কতিপয় নেতা-পাতিনেতা। চট্টগ্রামেও অনেক সম্রাট ও অনেক জিকে শামীম রয়েছে। যাদের ভদ্রতার লেবাসের ভিতর লুকিয়ে আছে অঢেল অবৈধ সম্পদ। এরা দলকে ব্যবহার করে প্রভাব বিস্তার করে পাহাড় গড়েছে সম্পদের। এদের তালিকা করে সম্পদ ও ব্যাংক হিসাব খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। রাজনীতির মঞ্চে আজ যারা রাজা-বাদশা। অবৈধ অর্থে যারা সম্পদের পাহাড় গড়েছেন, তাদের মুখোশ উন্মোচন করা উচিত।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলকে শক্তিশালী করতে একটা ঝাঁকুনি দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দলের ভেতর আমি কোন দুর্বৃত্ত রাখবো না। দল থেকে যারা রাজনীতি করছেন তাদের কাউকে নেতৃত্বে না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে অভিযান শুরু হয়েছে। সহযোগী সংগঠনগুলোতেও চলছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে চিহিৃত রাঘব বোয়ালদের মধ্যে যারা টাকার পাহাড়ে বসবাস করছেন তাদের আইনের আওতায় না আনলে দুর্নীতির শুদ্ধি অভিযান থমকে পড়বে মাঝপথে।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বকে যুগোপযোগী গতিশীল ও আদর্শিক করতে হলে বড় ধরনের পরিবর্তন ছাড়া অসম্ভব। শেখ হাসিনার সামনে ওটাই শেষ সুযোগ। আমরা আশাকরি তিনি তা কাজে লাগাবেন। আওয়ামী লীগের অনেক শীর্ষ ও প্রভাবশালী নেতার বিভিন্ন কর্মকান্ডের ছবি ও ভিডিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে এসেছে। আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ সূত্রে জানা গেছে, এগুলোর মধ্যে বর্তমান ও সাবেক মন্ত্রি, দলের কেন্দ্রীয় নেতা ও সংসদ সদস্যদের ছবি রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ১শ জনের ছবি ও ভিডিও প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা পড়েছে বলে জানিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের হাই কমান্ডের একটি সূত্রে জানা গেছে, এমাসের প্রথম সপ্তাহে গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রিয় নেতাদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ও দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা তার মোবাইল ফোন বের করে গ্যালারীতে সংরক্ষিত বিভিন্ন নেতার ছবি বের করে তাদের দেখান। শেখ হাসিনা প্রায় ২০টি ছবি নেতাদের দেখিয়ে বলেছেন, আরও অনেক ছবি আছে আমার কাছে।

বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর এক সদস্য জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফোন গ্যালারীতে কয়েকজন নেতার ছবি ও ভিডিও সংরক্ষিত আছে। কে কোথায় গিয়ে ক্যাসিনো খেলেন, সেই ছবিও মোবাইল ফোন থেকে বের করে দেখান শেখ হাসিনা। নেতৃবর্গ জানান, যুবলীগ নামধারী জিকে শামীমের সাথে আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ অনেক নেতার ছবিও শেখ হাসিনার মোবাইল ফোনে আছে। এছাড়া ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের সাথে কোন কোন নেতার দেশ বিদেশের বিভিন্ন অবৈধ জায়গায় গিয়ে আনন্দ করছেন এমন ছবিও ভিডিও দেখিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

গণভবনে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগ সম্পাদক মন্তলীর এক সদস্য জানান, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমি যে অভিযান শুরু করেছি তার আগে সব তথ্য ও উপাত্ত-প্রমান জোগাড় করেই নেমেছি। তিনি বলেন, অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভিডিও আমার কাছে আছে। চাইলেই যে কেউ অস্বীকার করবে তার কোন উপায় নেই।

নেতৃবর্গ জানান, মোবাইলে সংরক্ষিত থাকা ছবিতে সভাপতিমন্তলী, সম্পাদকমন্ডলী ও কেন্দ্রিয় সদস্য, সাবেক ও বর্তমান মন্ত্রি-প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য আছেন। সহযোগী সংগঠনের নেতাদের অপকর্মের ছবিও আছে। বৈঠকে উপস্থিত নেতাদের প্রধানমন্ত্রী জানান, এই ছবিগুলোর কোনটাই মেইক বা ফেইক ছবি নয়। এগুলো পরীক্ষা নিরিক্ষা করা হয়েছে। এসব ছবিতে শেখ হাসিনার আত্মীয় বলে পরিচিত কয়েকজন রয়েছেন। সেদিনের বৈঠকে শেখ হাসিনা বলেন, এই হলো আওয়ামী লীগ নেতাদের অবস্থা। আমি কাউকেই ছাড়বো না। ধরা যখন শুরু করেছি, শেষ করেই ছাড়বো। বৈঠকে উপস্থিত অনেক নেতা বলেন, এই বৈঠকে উপস্থিত রয়েছেন এমন কয়েকজনের ছবিও প্রধানমন্ত্রীর মোবাইল ফোনে ছিল। তবে বিব্রতকর অবস্থায় পড়বেন বলে এই নেতাদের ছবি দেখাননি প্রধানমন্ত্রী।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.