চট্টগ্রাম দক্ষিন জেলা ছাত্রলীগে নানা অভিযোগ !

0

বিশেষ প্রতিবেদক,সিটি নিউজ : চট্টগ্রাম দক্ষিন জেলা ছাত্রলীগ কমিটি নানান কারণে বিতর্কের জন্ম দিচ্ছে। খোদ ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা বর্তমান দক্ষিন জেলা ছাত্রলীগ নিয়ে নানা অভিযোগ ও বিভিন্ন ধরণের প্রশ্ন তুলছে।
বিশেষ করে পদবঞ্চিতদের মুখে যখন শুনতে পাওয়া যাচ্ছে, ত্যাগীরা উপেক্ষিত আর বর্গীয়রা পদ-পদবীতে ঠাসা। তখন দুঃখের অন্ত থাকে না বলে দাবি করছেন একাধিক দক্ষিন জেলা ছাত্রলীগ নেতা।এসব ত্যাগী নেতারা আরও বলেন, দেশের সাহসী ও মেধাবী ছেলে-মেয়েরা ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছে। দুই বছরেও পূর্ণাঙ্গ হয়নি দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের আংশিক (৫১ সদস্যের) কমিটি। সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ ৫১ সদস্যের এ কমিটি গত দুই বছর অলস সময় পার করেছে। নেই তাদের কোনো বড় অর্জন। করতে পারেনি দক্ষিণ জেলার ৮ উপজেলা, ৫ পৌরসভাসহ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কমিটি। বলা যায়, নিষ্ফলই কেটেছে দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের দুটি বছর।

বর্তমান মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি ঘোষণার জন্য তৃণমূল থেকে দাবি জানানো হয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে। সাতকানিয়া উপজেলা ও কলেজ কমিটি দিতে গিয়ে বর্তমান কমিটি অভিযুক্ত হয়েছে জামায়াত-শিবির অন্তর্ভুক্ত করণসহ টাকা আদায়ের মতো নানা গুরুতর অভিযোগে।

দীর্ঘসূত্রতার পর ২০১৭ সালের ১৫ অক্টোবর এস এম বোরহান উদ্দিনকে সভাপতি ও মো. আবু তাহেরকে সাধারণ সম্পাদক করে ৫১ সদস্য বিশিষ্ট দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

যদিও ৫১ সদস্য বিশিষ্ট ওই কমিটিতে অছাত্র, বিবাহিত, চাকরিজীবীও রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন অনেকেই। দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগ নেতারা মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে দিয়ে তৃণমূল থেকে ত্যাগী নেতাদের দিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের দাবি জানান।

৫১ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণার সময় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে ৩ মাসের মধ্যে কমিটি পূর্ণাঙ্গ (১৫১ সদস্যের) করে কেন্দ্রে অনুমোদনের জন্য পাঠাতে বলা হলেও দুই বছরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন হয়নি। দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন পদবঞ্চিত নেতা জানান, বর্তমান কমিটি কেন্দ্র ঘোষিত জাতীয় কর্মসূচিগুলো দায়সারাভাবে পালন করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। কমিটির অধিকাংশ নেতাকে কর্মসূচিতে উপস্থিত হতে দেখা যায় না। দীর্ঘদিন কমিটি না হওয়ার কারণে তৃণমূল কর্মীদের মাঝে নানা ক্ষোভ এবং হতাশা বিরাজ করছে।

পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে করতে ছাত্রত্ব ও বয়স শেষ হয়ে যাচ্ছে পদ প্রত্যাশী অনেক ছাত্রনেতার। তৃণমূলের বেশ কয়েকজন ছাত্রনেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দীর্ঘদিন কমিটি না হওয়ার কারণে তাদের জীবন, যৌবনের শ্রেষ্ঠ সময়গুলো সংগঠনের পেছনে ব্যয় করলেও ভাগ্যে একটা পদও জুটছে না।

এসব বিষয়ে এস এম বোরহান উদ্দিন জানান, আমরা পূর্ণাঙ্গ কমিটির জন্য বারবার কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে গিয়েছি, পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমাও দিয়েছি। এমনিতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ১৫১ সদস্যের হলেও যেহেতু দক্ষিণ জেলায় দীর্ঘদিন কমিটি ছিল না, অনেক নেতাকর্মী পদের জন্য প্রত্যাশা করে আছে, তাই সবাইকে কমিটিতে স্থান দেয়ার জন্য আমরা কেন্দ্রের কাছে ২০১ সদস্যের কমিটি চেয়েছিলাম। এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক দায়িত্ব নিয়েছেন। তাদের সাথেও আমরা দেখা করেছি। পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়ার জন্য বলেছি। পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদকের কাছে জমা আছে। উপজেলা কমিটি গঠনের জন্য আমরা কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে অনুমতি চেয়ে লিখিত আবেদন করেছি। কারণ এখন কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমতি ছাড়া কোনো উপজেলা-কলেজে-বিশ্ববিদ্যালয়, পৌরসভা কমিটিও অনুমোদন দেয়া যায় না। আমরা কয়েক মাস আগে সাতকানিয়া উপজেলা ও কলেজ কমিটি দিয়েছি। দেয়ার পর কেন্দ্রীয় কমিটি উপজেলা কমিটি স্থাগিত করেছে।আমরা প্রত্যেক উপজেলায় গিয়েছি। বাঁশখালী উপজেলা নির্বাচনে, লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাচনে, বোয়ালখালীতে গিয়েছি। তবে অন্য যেসব অভিযোগ উঠেছে সেগুলো সব মিথ্যা।

এদিকে দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি মো. মিজানুর রহমান জানান, সম্প্রতি দলে শুদ্ধি অভিযানের সিদ্ধান্তটি প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার সাহসী পদক্ষেপ। দেশের কোটি কোটি মানুষ ও তৃণমূলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা এ সিদ্ধান্তটি সাধুবাদ জানাচ্ছেন।’ ছাত্রলীগে যারা দলীয় পদবী বেচা কেনা করে সংগঠনের ভাবমূর্তি নষ্ঠ করেছে এরই ধারাবাহিকতায় আ.লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগে বসন্তের কোকিলদের বিদায় করে তৃণমূলের ত্যাগীদের মূল্যায়ন করা হোক।ওদের (দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম বোরহান উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক মো. আবু তাহের) সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হচ্ছে, দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের শীর্ষে পদে আসার আগে ওরা জেলার কোনো ইউনিটের সদস্যও (উপজেলা-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়) ছিলেন না। যার কারণে তাদের সাথে দক্ষিণ জেলা তৃণমূলের কোনো যোগাযোগ নেই। গত দুই বছরে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক কোনো উপজেলা এবং কলেজে গিয়ে অনুষ্ঠান করতে পারেনি। এরমধ্যে মাত্র সাতকানিয়া উপজেলা কমিটি ঘোষণা করলেও সেখানে টাকা-পয়সা এবং আইফোন নেয়ার অভিযোগ উঠে। অভিযোগের সত্যতা মেলায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ঐ কমিটি বাতিল করে। কমিটি দেয়ার সময় আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে অডিও ফাঁস হয়ে গেলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে যায় দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের শীর্ষনেতারা।

দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আবু তাহের জানান, যারা এ পর্যন্ত কোনো সভা-সমাবেশে আসেননি তারাই অভিযোগ করছেন। যারা আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন তারা শুধু ছাত্রলীগের অনুষ্ঠানে নয় আওয়ামী লীগের কোনো সভায়ও এ পর্যন্ত আসেননি। আমরা অনেক আগেই কেন্দ্রের কাছে পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দিয়েছি। হঠাৎ করে কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে পদত্যাগ করতে হয়েছে। এই কারণে কমিটি আটকে গেছে। এখন নতুন কমিটির সাথেও আমরা সাক্ষাৎ করেছি। তাদেরকে আগের জমা দেয়া কমিটির বিষয়ে বলেছি। তারা বলেছেন কমিটির আকার ছোট করে দেয়ার জন্য। তবে দক্ষিন জেলা ছাত্রলীগ নিয়ে যেসব অভিযোগ উঠেছে সেগুলো সব ভিত্তিহীন।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.