ফেসবুক কল্যাণে বৃদ্ধ বাবা ঘরে ফিরলেন!

0

সিটি নিউজ,চট্টগ্রাম :  চট্টগ্রামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও স্বপ্নযাত্রীর কল্যাণে ‘নিখোঁজ’ বাবাকে খুঁজে পেলেন এক পরিবার।গত শুক্রবার ৮ নভেম্বর সন্ধ্যায় হঠাৎ করেই সামাজিক সংগঠন স্বপ্নযাত্রী ফাউন্ডেশনের যোগাযোগ নম্বরে কল করেন একজন ব্যাক্তি যিনি নিজেকে পরিচয় দেন বৃদ্ধ আবু বক্কর সিদ্দিকের আত্নীয়।বৃদ্ধটির খবর পেয়েছিলেন স্বপ্নযাত্রী সদস্য মনজুর ফেসবুক পোস্ট থেকে। বৃদ্ধা বাবাটির ঠিকানা,সাতকানিয়া বাজালিয়া পুর্ব মাহালিয়ায়।তিনি ছিলেন একজন গ্রাম্য কবিরাজ।২০১৯ সালের ২ অক্টোবর তিনি গৃহত্যাগ করেছিলেন।

আবু বক্কর সিদ্দিক

এদিকে বিষয়টি নিয়ে স্বপ্নযাত্রী ফাউন্ডেশন নিউজপোর্টাল সিটি নিউজকে বিস্তারিত জনান,চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও মোহরা কাজীর হাট জালালাবাদ স্টেশনে ঠিকানা বিহীন একজন অজ্ঞাত, অপরিচিত, অজানা মানুষ অনেকদিন ধরে পড়ে আছেন। যিনি চলাচলে অক্ষম,অসুস্থ,কাপড়চোপড় খুবই খারাপ,এমনকি দুর্গন্ধের কারণে কেউ কাছেও যেতে পারছেনা।এরকম একজন মানুষের দায়ভার কে নিতে চাই?

রাস্তার পাশে পড়ে থাকা একজন অজ্ঞাত, অচেনা,অসুস্থ বৃদ্ধকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে উপরে উল্লেখিত স্টাটাস স্বপ্নযাত্রীর প্রবাসী সদস্য হেলাল আহমেদের চোখে পড়লে তখন সে তৎক্ষনিক পোস্টটি স্বপ্নযাত্রী পরিবারের ফেসবুক গ্রুপ পেইজে শেয়ার করেন ।

এরপর সোমবার ৪ই নভেম্বর পেইজে থাকা সদস্য স্বপ্নযাত্রী ফাউন্ডেশন মহানগর শাখার ফুডব্যাংক লিডার জাদুরাজ নাইম কিছু কাপড়চোপড় নিয়ে ছুটে যান জালালাবাদ স্টেশনে।তখন ওনার শারিরীক অবস্থার খুব খারাপ ছিল।হবেইনা বা কেন ধারণা করা হচ্ছে অজ্ঞাত বৃদ্ধ বাবাটি প্রায় ২০দিন আগে থেকেই এখানে অভুক্ত এবং মুমূর্ষু অবস্থায় পড়েছিল।নাইম উনার নাজুক অবস্থা দেখে স্বপ্নযাত্রী পরিবারকে জানালেন উনার চিকিৎসা প্রয়োজন,দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে।স্বপ্নযাত্রী ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কামাল হোসেন একটি টিম পাঠালেন সেই অজ্ঞাত মুমূর্ষু বৃদ্ধটিকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য।সেই টিমে ছিলেন স্বপ্নযাত্রী ফাউন্ডেশন মহানগর শাখার যুগ্ন-সম্পাদক আবিদ বিন হারুন ,প্রচার সম্পাদক জহিরুল ইসলাম,দপ্তর সম্পাদক শাফায়েত রায়হান শিহাব।

সবাই মিলে বৃদ্ধ বাবাটিকে গোসল করালেন,ভালো কাপড়চোপড় পড়িয়ে নিয়ে আসলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। হাসপাতালে ভর্তি করালেন,চিকিৎসা শুরু হল (৩য় তলায় ১৬নং ওয়ার্ড)। কিছু খাওয়া দাওয়া করিয়ে উনাকে পরম যত্নে ঘুম পাড়িয়ে দিলেন। জানা নেই কত রাত কত দিন তিনি চরম কষ্টে অনাহারে, অযত্নে স্টেশনের ধারে পড়েছিলেন। তখন কথা বলতে পারছিলেন না তাই ওনার পরিচয় জানতে পারা সম্ভব হয়নি।মেডিকেলে আনতে ফ্রি এম্বুল্যান্স সার্ভিস দিয়ে উপকৃত করেছিলেন আলহাজ্ব শামসুল হক ফাউন্ডেশন।মেডিকেলে ওনার ওষুধপত্র, ডায়াগনস্টিক টেস্ট করা, খাওয়া দাওয়া, কাপড়ের জন্য আর্থিক সাপোর্ট ও দরকার,আবার মেডিকেলে ওনার সাথে কাউকে থাকারও দরকার ছিল। জাদুরাজ নাইম রাতে বৃদ্ধ বাবাটির সাথে রাতে মেডিকেলে থাকলেন উনার সুবিধা-অসুবিধায় রাত জেগেছেন।

মঙ্গলবার ৫ নভেম্বর, স্বপ্নযাত্রী ফাউন্ডেশনের নারী সদস্যা জান্নাতুল ফেরদৌসে আনিকা গেলেন বৃদ্ধ বাবাটির যত্ন নিতে। নিজের বাবার মত করেই আনিকা বৃদ্ধ বাবাটিকে খাওয়ালেন পাশে ছিলেন সারাদিন। একটু অবস্থার উন্নতি দেখা গেল,উনার প্রাথমিক চিকিৎসার খরচ চালাতে স্বপ্নযাত্রীর সদস্যরা সাধ্যমতো আর্থিক সাহায্য করছেন এবং বেশকিছু শুভাকাঙ্ক্ষীও এগিয়ে এলেন।আগের রাতের মতো আজ রাতেও জাদুরাজ নাইম মেডিকেলে ওনার সেবা করেছেন।

বুধবার ৬ নভেম্বর বৃদ্ধ বাবাটির শারিরীক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে এবং আস্তে কথা বলতে পারছেন।তবে শুধুমাত্র ওনি ওনার নাম জানালেন। ওনার নাম আবু সিদ্দিক, ঠিকানা জানতে চাইলে ওনি অনেক কান্না করলেন।কিন্তু স্বপ্নযাত্রীর স্বপ্নবাজরা একেকজন একেকসময়ে এসে ওনার খবরা খবর নিচ্ছেন সেবা করছেন,পাশে থাকছেন। এক্ষেত্রে ডাক্তার,নার্সরাও খুবই মানবিকতা দেখিয়েছেন, ওনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। অজ্ঞাত রোগীদের পরম বন্ধু নেসার ভাই এর সহযোগীতা ছিল প্রশংসনীয়।

বৃহস্পতিবার ৭ নভেম্বর বৃদ্ধ, অক্ষম,অসুস্থ বাবাটি মোটামুটি সুস্থ, এমনকি হালকা হাটাহাটি করলেন, হালকা কথা বলতে চেষ্টা করলেন। ঐদিন ওনার পাশে থাকতে, সেবা কর‍তে এসেছিলেন স্বপ্নযাত্রী ফাউন্ডেশনের অন্যতম নারী সদস্যা সানজিদা আফরোজ,মোহাম্মদ মনজু,মেজবাজ উদ্দীন। এভাবেই প্রতিটি স্বপ্নবাজরা বৃদ্ধ বাবাটিকে সুস্থ করে তুলতে পরিশ্রম করেছেন। ওনাকে আরো কিছু রোগ নির্ণয় পরীক্ষা করালেন। আর্থিক সাহায্য করে অনেকেই পাশে ছিলেন।কিন্তু ওনার ঠিকানা তখনো জানা সম্ভব হচ্ছিল না।তবে প্রতিনিয়ত উনার শারিরীক অবস্থার আপডেট এবং পরিচয় জানতে, ঠিকানা জানতে অনলাইনে প্রতিটি সদস্যরা সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। উনার পরিবারকে যাতে খবরটি পৌছানো যায় সেজন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন সবাই।

শুক্রবার প্রতিনিয়ত বৃদ্ধ বাবাটির সেবার জন্য লেগেই আছেন জাদুরাজ নাইম। তার সাথে সঙ্গ দিতে পালাবদল করে অনেকেই ছিলেন।যাতে ওনার সেবার কোন কমতি না হয়। যে যার যার কর্মব্যস্ততা শেষ করে বৃদ্ধ বাবাটির সেবা করতে যতটুকু পারছেন সময় দিয়েছেন। শুক্রবার গিয়েছিলেন স্বপ্নযাত্রী ফাউন্ডেশন আনোয়ারা শাখার সভাপতি কাজী আবু ফয়েজ সহ আরফি ইসলাম,জনি সহ অনেকেই।

শুক্রবার ৮ নভেম্বর, প্রায়ই সন্ধ্যা,হঠাৎ করেই স্বপ্নযাত্রী ফাউন্ডেশনের যোগাযোগ নম্বরে কল করেনে একজন ব্যাক্তি যিনি নিজেকে পরিচয় দেন বৃদ্ধ আবু বক্কর সিদ্দিকের আত্নীয়।বৃদ্ধটির খবর পেয়েছিলেন মনজুর ফেসবুক পোস্ট থেকে। বৃদ্ধা বাবাটির ঠিকানা,সাতকানিয়া বাজালিয়া পূর্ব মাহালিয়ায়।ওনি ছিলেন একজন গ্রাম্য কবিরাজ।অক্টোবর মাসের ২তারিখ তিনি গৃহত্যাগ করেছিলেন।

অবশেষে জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত স্বপ্নযাত্রী ফাউন্ডেশনের স্বপ্নবাজদের কঠোর পরিশ্রমে বৃদ্ধ বাবাটি এখন অনেকটা সুস্থ এবং আপন পরিবারের খোঁজ পেয়েছেন।ওনার স্ত্রী এবং মেয়ের জামাই এসেছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে,স্বপ্নযাত্রীর সদস্যদের সাথে তাদের আলাপ হয়েছে জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে বিস্তারিত সবকিছু জেনেছেন এবং ওনার পরিবারের নিকট হস্তান্তর করেছেন।

যারা নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন,যারা পাশে থেকেছেন,পরম যত্নে সেবা করেছেন,আপনজনের মত যত্ন করেছেন, আর্থিক সাহায্য করেছেন,ঠিকানা খুজে পেতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন,সবসময় খবরাখবর রেখেছেন সবার প্রতি স্বপ্নযাত্রী ফাউন্ডেশন কৃতজ্ঞতা জানান।

সবশেষে বলতে চাই এখানেই স্বার্থকতা,এটাই মানবতা।এইভাবে বঞ্চিতদের সেবা করাই মনুষ্যত্ব ও মানবিকতার পরিচয়।স্বপ্নবাজরা সেটি করে দেখিয়েছেন।এসব মহৎ মানবিকতার ফলেই আজ বিভিন্ন জায়গায় মানবতার জয় হচ্ছে,হবে।এরাই স্বপ্নবাজ,এরাই আসল মানবতার সেবক। জয় হোক মানবতার। জয় হোক স্বপ্নযাত্রী ফাউন্ডেশন।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.