আম্মিজান কহতি থি, কোই ফেস্টিভ্যাল ছোটা-বড়া নেহি হোতা

0

কলকাতা থেকে ফিরে জুবায়ের সিদ্দিকীঃ গুড়ি গুড়ি বৃষ্ঠি। কলকাতার আকাশে মৃদু হাওয়া বইছে। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আতংক জনমনে। এর ভিতর কলকাতায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। এরিমধ্যে সারি সারি গাড়ি ভিড় করেছে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের বাইরের রাস্তায়। কলকাতার রথি মহারথির ভিড়।

নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হলো সমস্থ এলাকা। শুধু সরকারী, বেসরকারী, ব্যবসায়ী রাজনীতিবিদ, শিল্পপতি, কুটনীতিক, নাট্যজন, চিত্রজগতের নায়ক নায়িকা ও কলাকুশলীরা দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে নিরাপত্তা বেষ্টনি অতিক্রম করে অনুষ্ঠান স্থলে যেতে হেয়েছে।

কলকাতায় সাড়ম্বরে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ২৫তম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব বা ‘কিফ’। বাংলাকে বিশ্ব দরবারে মেলে ধরতে এ উৎসবের আয়োজন বলে জানালেন আয়োজক মণ্ডলী। ভারতের জাতীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে বাংলা যেমন গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্রেও তেমন একটি অবস্থান ধরে রেখেছে দীর্ঘকাল ধরে। তাই জাতীয় রাজনীতির পটভূমিতে বঙ্গীয়-গরিমার এ মঞ্চ বিশ্বকে জানানোও বটে।

গত সপ্তাহে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ২৫তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব বা ‘কিফ’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, বাংলার গৌরবগাথার একটি অংশ চলচ্চিত্র। তিনি বলেন, ‘সব চেয়ে বেশি নোবেলজয়ী কোথায়? সব চেয়ে বেশি বিজ্ঞানী? দেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী কোথায়?’ মাসখানেক আগে ইন্ডোরের সভাতেই বাংলার অবক্ষয় নিয়ে সরব হয়েছিলেন বিজেপি সভাপতি তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। নাম না বলে মমতা যেন তারই জবাব দিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর বলার ভিতটুকু অবশ্য গড়তে দেন পরিচালক মহেশ ভট্ট। নিবেদিতা বিবেকানন্দের একটা ছোট্ট গল্পে পৃথিবীর কাছে ‘বাংলার স্বর’ কী, তুলে ধরলেন তিনি।

১৮৯৯-এ ভগিনী নিবেদিতা এক বার ধর্মের সঙ্গে বিভিন্ন মানুষের ভাষার তুলনা করেছিলেন। তখন স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন, ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ সব সময়ে মানুষের সঙ্গে তাঁর ভাষাতেই কথা বলতেন। মহেশের কথায়, ‘এই হল বাংলার কণ্ঠ। বাংলা সবার সঙ্গে তার নিজের ভাষায় কথা বলে। নিজের ভাষা চাপিয়ে দেয় না। কোনও একটি স্বর চাপিয়ে দেওয়া বাংলার রীতি নয়।’ অনুষ্ঠানে বলিউড কিং শাহরুখ খান বলেন, ‘সিনেমার গল্প, মানুষকে কাছে আনুক। বহুত্বের উদ্যাপন করুক, কিন্তু ব্যক্তির স্বকীয়তা নিয়ে খোঁচাখুঁচি বন্ধ হোক।’

গত কয়েক বছরের পরম্পরা ভেঙে এবার শেষ মুহূর্তে আসেননি অমিতাভ ও জয়া বচ্চন। তবে মুখ্যমন্ত্রী পাশে পেয়েছেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট সৌরভ গাঙ্গুলিকে। মমতা বলেছেন, ‘অমিতাভজি তাঁর অসুস্থতার জন্য আসতে পারেননি। গত রাতে তাঁর শরীর খারাপ হয়েছে। আজ অমিতাভজি আর জয়াজি, দু’জনেই আমাকে এসএমএস করে জানিয়েছেন, তাঁরা আসতে পারছেন না। কিন্তু আমি জানি, তাঁর মন পড়ে আছে এখন কলকাতাতেই।

‘দ্য টিন ড্রাম’-খ্যাত অস্কারজয়ী জার্মান পরিচালক ভলকার স্কলনডর্ফ, হলিউডি নায়িকা-অভিনেত্রী অ্যান্ডি ম্যাকডয়েল, স্লোভাক চিত্রপরিচালক দুসান হানাকের মতো চলচ্চিত্র বিশ্বের খ্যাতনামাদের উপস্থিতিও প্রাপ্তি ‘কিফ’-এর সিকি-শতক পূর্তিতে। অন্যবার অমিতাভ তাঁর বিদগ্ধ বক্তৃতায় বাংলা চলচ্চিত্রের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের দিক তুলে ধরেন। এবার স্কলনডর্ফ ‘অপু ট্রিলজি’ থেকে শুরু করে মননশীল বাংলা ছবির প্রশংসায় পঞ্চমুখ। অ্যান্ডিও বলেছেন, এখানকার আতিথেয়তা, সুখাদ্যের কথা।

বাংলার মেয়ে রাখী গুলজার তাঁর দেশের বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসব দেখার অভিজ্ঞতা থেকেই কলকাতার উৎসবের প্রশংসা করেছেন। চলচ্চিত্রে বলিউড কিং যেমন দর্শকদের আনন্দ দেন আবার কাঁদিয়ে চোখের জল ফেলান। এখানেও তার ব্যতিক্রম নয়। এখানেও ফিল্মি সংলাপের ভঙ্গিতে শাহরুখ বলেন, ‘আম্মিজান কহতি থি, কোই ফেস্টিভ্যাল ছোটা-বড়া নেহি হোতা, লেকিন ‘কিফ’ সে সুন্দর ফেস্টিভ্যাল কোই নেহি হোতা!’’ দৃশ্যতই গর্বিত মমতা তখন শিশুর মতো হাসছেন।

শাহরুখ-সৌরভকে পেয়ে পুলকিত ভঙ্গিতে মুখ্যমন্ত্রী বলে উঠেন, ‘ওরা যেন একই বৃন্তে দু’টি কুসুম!’ তাঁর অনভ্যাসের মঞ্চ চলচ্চিত্র উৎসবের আসরে প্রথম বার বলতে উঠে সৌরভও বিগত বছরগুলোতে বিশ্বসেরা গুণিজনদের আসার কথা, উৎসবের নানা স্মৃতি তুলে ধরেন। শাহরুখ-সৌরভ-মমতাকে ঘিরে তৈরি হয় সৌহার্দের ত্রিভুজ। শাহররুখ-মহেশদের সঙ্গে বিদেশি অতিথিদের দুর্গাপুজো ও ভাসানের কার্নিভাল দেখতে আসার নেমন্তন্ন করতেও ভোলেননি মমতা।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.