চারদিন পর রাউজান থানা হেফাজতে মায়ের বুকে শিশু সুজন

0

নেজাম উদ্দিন রানা,রাউজান,সিটি নিউজ : রাউজান থানা হেফাজতে চারদিন ছিল শিশু সুজন। চঞ্চল এই শিশুটি চারদিনেই আপন করে নিয়েছিলেন রাউজান থানার ওসিসহ সকল কর্মকর্তার মন। থানার এ কক্ষ থেকে ও কক্ষে হাসি-আনন্দে মাতিয়ে রাখতেন থানা ভবনটা। বিশেষ করে থানার নারী পুলিশ সদস্যরা রীতিমতো আপন করে নিয়েছিলেন ছেলেটিকে। তাদের সাথে সারাক্ষণ খুনসুটি আর আনন্দ উল্লাসে সময় কাটাতেন শিশু সুজন।

কিন্তু যেই ছেলেটিকে নিয়ে এত আনন্দ কোলাহল তার ঠিকানা জানা ছিলনা কারো। তাই শিশুটির হাসিমুখ সবার মন জয় করলেও রীতিমতো শিশুটিকে নিয়ে টেনশনের কমতি ছিলনা থানার কর্মকর্তাদের। রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কেফায়েত উল্লাহ শিশুটির ছবিসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিশুটির সন্ধান জানতে চেয়ে একটি পোষ্ট দেন।

রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কেফায়েত উল্লাহ

নিখোঁজ শিশুটিকে নিয়ে পত্রিকায় সংবাদও প্রকাশিত হয়। অনেকেই শিশুটির ছবিসহ ফেইসবুকে বিষয়টি শেয়ার করেন। বিষয়টি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ছবি দেখেই তার স্বজনরা পরিচয় শনাক্ত করে ছুটে আসেন রাউজান থানায়। টানা কয়েকদিন বিচ্ছিন্ন থাকার পর মা ছেলের মিলনমেলা যেন হার মানিয়েছে সিনেমার গল্পকে।

সোমবার (১৮ নভেম্বর) বিকেলে শিশু সুজনকে যখন রাউজান থানার ওসি কেফায়েত উল্লাহ তার মা চম্পা খাতুনকে হস্তান্তর করছিলেন তখন আনন্দ অশ্রুতে টলমল রাউজান থানার কর্মকর্তা থেকে শুরু করে স্থানীয় সংবাদকর্মীরা।

শিশু সুজন হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার নাজিরপুর গ্রামের কেরামত আলীর মেয়ে চম্পা খাতুন ও একই এলাকার সিদ্দীক আলীর তৃতীয় পুত্র।

সুজনের মা চম্পা খাতুন সাংবাদিকদের বলেন, বিগত পাঁচ বছর পূর্বে তাদের ঘর আলোকিত করে সুজন জন্ম নেওয়ার পরই তার পিতা সিদ্দিক আলী পরপারের ডাকে সাড়া দেন। স্বামী মারা যাওয়ার পর দুই মেয়ে ও এক সন্তানকে নিয়ে সংসারের ভার বইতে গিয়ে চোখে মুখে অন্ধকার দেখতে পান চম্পা খাতুন। সন্তানদের সুখের কথা ভেবে সাত মাস পূর্বেই সিলেট জেলার জজ মিয়ার সাথে দ্বিতীয় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের পর স্বামীর সাথে চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও থানাধীন চর রাঙ্গামাটিয়া এলাকার করিম ম্যানসনে ভাড়াবাসায় উঠেন। চম্পা খাতুন ভেবেছিলেন হয়তো তার দ্বিতীয় স্বামী পিতৃ স্নেহে তার সন্তানদের মানুষের মতো মানুষ করবেন। কিন্তু কিছুদিন অতিবাহিত হতেই সংসারে দানা বাঁধে কলহ।

চম্পা খাতুন আরো বলেন, তার সন্তান নিখোঁজের ৩/৪দিন পূর্বে সন্তানকে বিক্রি করার হুমকি দিয়েছিল তার সৎপিতা জজ মিয়া। গত শুক্রবার বিকাল আনুমানিক ৩টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও থানাধীন বরিশাল বাজার এলাকা থেকে নিখোঁজ হয় শিশু সুজন। সুজন নিখোঁজের পর তার সৎপিতার মোবাইল ফোন বন্ধ ছিল। ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মা চম্পা খাতুন পাগলের মতো হন্যে হয়ে ছেলের খোঁজ নিতে থাকে। এদিকে সুজন নিখোঁজের ঘটনায় এলাকায় মাইকিং প্রচারনাও চালানো হয়। টানা কয়েকদিনেও ছেলের খোঁজ না পেয়ে নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে চোখের জলে বুক ভাসাতেন মা চম্পা খাতুন। অবশেষে ছেলের ছবিসহ সংবাদ পত্রিকায় দেখে স্বজনদের নিয়ে রাউজান থানায় ছুটে এসে সুজনকে বুকে জড়িয়ে আরেকবার কান্নায় ভেঙে পড়লেন তিনি।

রাউজান থানার ওসি কেফায়েত উল্লাহ বলেন, গত শুক্রবার শিশুটিকে নোয়াপাড়া পথের হাটের জান্নাত হোটেলে পেয়ে স্থানীয়রা লোকজন তাকে নোয়াপাড়া পুলিশকে ক্যাম্পে দিয়ে দেন। সেখান থেকে তাকে রাউজান থানা হেফাজতে রাখা হয়। এই চারদিন শিশুটি সবাইকে আপন করে নিয়েছিল। থানার নারী সদস্যরা শিশু সুজনকে নতুন জামাও কিনে দিয়েছিলেন। এখন তাকে তার মায়ের বুকে ফিরিয়ে দিতে পেরে খুব খুশি লাগছে। শিশুটি যাওয়ার সময় ওসি কেফায়েত উল্লাহ তার মায়ের হাতে যাতায়াত খরচের জন্য কিছু টাকাও দেন। এ সময় মায়ের কোলে করে শিশুটির চলে যাওয়ার সময় আবেগ সংবরণ করতে পারেনি উপস্থিত সকলে। মা ছেলের মিলনের মাঝেও থানা ভবন চত্বরে বিচ্ছেদের সুর বেজে উঠেছিল।

বুকের মানিক ধনকে ফিরে পেয়ে চম্পা খাতুন বলেন, স্বামীর সাথে আর সংসার করবেননা তিনি। তার বিচ্ছেদ ঘটিয়ে সন্তানদের নিয়ে বাপের বাড়িতেই চলে যাবেন তিনি।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.