মহেশখালীতে ১৫৫ অস্ত্রসহ জলদস্যু ও অস্ত্রকারিগরের আত্মসমর্পণ

0

কক্সবাজার প্রতিনিধিঃ কক্সবাজার জেলার মহেশখালীতে ১৫৫ অস্ত্রসহ ৯৬ জলদস্যু-অস্ত্রকারিগর আত্মসমর্পণ করেছে। তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের হাতে অস্ত্র জমা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার প্রত্যয়ও ব্যক্ত করেছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন বহুল আলোচিত অস্ত্র-কারিগর জাফর আলমসহ ১৮টি বাহিনীর জলদস্যুরা। এসময় তারা ২৭৫ রাউন্ড কার্তুজ ও অস্ত্র তৈরির নানা সরঞ্জাম জমা দেন।

আজ শনিবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে মহেশখালীর কালারমারছড়া ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে কক্সবাজারে জেলা পুলিশ আয়োজিত আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন। কক্সবাজার পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার ছিলেন পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, বিশেষ অতিথি ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, কক্সবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক, কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. আশরাফুল আবসার, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান প্রমুখ।

অনুষ্ঠানস্থলে সরকারের পক্ষ থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার আশায় আত্মসমর্পণকারী ৯৬ জলদস্যুকে ৫০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়।

সিরাজ বাহিনীর প্রধান সিরাজ দৌল্লাহ চৌধুরী বলেন, নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হাত থেকে বাঁচার জন্য ২০০৩ সালে আমি সিরাজ বাহিনী গঠন করি। এরপর থেকে কখনো সাগরে বোট ডাকাতি, কখনো মানুষের বাড়িঘরে ডাকাতিসহ নানা অপরাধমূলক কাজ করেছি। যে কারণে আমার জীবনটাই অস্বাভাবিক হয়ে উঠেছিল। আমি পরিবারকে সময় দিতে পারিনি। এই অন্ধকার জীবন আর ভালো লাগছে না। আমি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাই। পরিবার-পরিজনের সঙ্গে, ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে সময় কাটাতে চাই।

তিনি বলেন, স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য স্বরাস্ট্রমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।

২০১৮ সালের ২০ অক্টোবর আত্মসমর্পণকারী রুহুল আমিন বলেন, আমি জামিনে মুক্ত হয়ে এখন স্বাভাবিক জীবনযাপন করছি। মন্ত্রী মহোদয়ের কাছে অনুরোধ, আমাদের মামলাগুলো প্রত্যাহার করা হোক।

এর আগে ২০১৮ সালের ২০ অক্টোবর সশস্ত্র ৪৩ জন জলদস্যুর আত্মসমর্পণের পর এবার কক্সবাজারের সন্ত্রাস কবলিত মহেশখালীতে আত্মসমর্পণ করলো ১২টি বাহিনীর ৯৬ জলদস্যু ও অস্ত্র কারিগর। এছাড়া, চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি টেকনাফে আত্মসমর্পণ করেন ১০২ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী।

অনুষ্ঠানের প্রথমে আত্মসমর্পণকারীদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেয়া হয়। এরপর স্বাগত বক্তব্য দেন পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন। জীবনের ভুল স্বীকার করে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সিরাজ বাহিনীর প্রধান সিরাজদৌল্লাহ। অভিশপ্ত জীবন থেকে ফিরে মুক্ত জীবনের চিত্র তুলে ধরেন ২০১৮ সালের ২০ অক্টোবর আত্মসমর্পণকারী জলদস্যু নুরুল আমিন।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এমপি বলেন, দেশের যেখানে যাই প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের চিত্র ভেসে আসে। মানুষের আস্থা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বদলে দিচ্ছেন বাংলাদেশ। কক্সবাজারের উন্নয়নে সমানতালে কাজ করছেন। তিনি বলেন, সন্ত্রাসী, জলদস্যু, অস্ত্রবাজদের ধরতে অচিরেই সাঁড়াশি অভিযান চালানো হবে।

আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানেরর গেস্ট অব অনার আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, বাংলাদেশের মাটিতে কোন জঙ্গি, সন্ত্রাসী, অপরাধীর স্থান হবেনা। যে কোন সময় ৯৯৯ নাম্বারে কল করে পুলিশের অনিয়মের বিরুদ্ধেও বলতে পারবেন। সে যেই হোক অপরাধীর ছাড় নেই।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, একটি বেসরকারি টেলিভিশনের মাধ্যমে কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকার জলদস্যু বাহিনীগুলো আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার আগ্রহ প্রকাশ করেন। তাদের এ আগ্রহের প্রতি সাড়া দিয়ে সরকার জলদস্যুদের আত্মসমর্পণের সুযোগ দিতেই আজকের এ অনুষ্ঠনের আয়োজন করেছে।

জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আত্মসমর্পণকারীদের যথাযথ প্রক্রিয়ায় আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হবে। তবে সন্ত্রাস ও দস্যুতার পথ পরিহার করে স্বভাবিক জীবনে ফিরে আসার জন্য পুলিশ প্রশাসন ও সরকারের তরফ থেকে গতবারের মতো তাদেরকে সর্বোচ্চ আইনি সহায়তাসহ সার্বিক সহায়তা করা হবে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.