ওমান প্রবাসীরা অবহেলিতঃ প্রধানমন্ত্রীর সফর অত্যন্ত জরুরীঃ সিরাজুল হক

0

গোলাম সরওয়ারঃ  চট্টগ্রামের রাউজানের সন্তান সিরাজুল হক। শ্রম ও মেধা দিয়ে প্রবাসে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। বাংলাদেশী কমিউনিটিতে অত্যন্ত সুপরিচিত ব্যাক্তিত্ব সিরাজুল হক একজন সমাজসেবক ও দানবীর। মু্িক্তযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করেন নীতি ও আদর্শে। রাউজানের হরিচ খান পাড়ার স্থায়ী বাসিন্দা ও মধ্য রাউজানে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা হাজী আব্দুল আজিজ মুন্সির পুত্র সিরাজুল হক। প্রবাসে যেমন সংগঠক ও সমাজসেবক হিসেবে প্রশংসীত তেমনি দেশের মাটিতে মানুষের সেবায় অবদান রেখে চলেছেন। এমন একজন মানুষ প্রচার বিমুখ ও দেশে প্রবাসে সমানভাবে সমাজসেবায় আত্মনিয়োগ করেছেন।

গত সপ্তাহে সালতানাত অব ওমানের বাংলাদেশ সোস্যাল ক্লাবের সভাপতি সিরাজুল হক সিটি নিউজকে বলেন, ওমানের বাংলাদেশ সোস্যাল ক্লাব সরকারের অনুমোদিত একমাত্র একটি বৃহৎ সংগঠন। সোস্যাল ক্লাবকে বাদ দিয়ে কোন অনুষ্ঠান করার কারো অনুমতি নেই। আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর আমাদের কমউিনিটির মধ্যে যে দ্বিধা বিপত্তি ছিল তা দূর করতে পেরেছি।

এখানে বিভিন্ন সংগঠন, গ্রুপ, দল আছে। তাদের একটি জায়গায় নিয়ে আসার জন্য কাজ করছি। একটি প্লাটফরমে সবাইকে আনতে পারলে কমিউনিটির শৃংখলা বা ঐক্য সুদৃঢ় হতে বাধ্য। এবং দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। আমি প্রত্যেক সংগঠন ও ব্যাক্তিবর্গের সাথে বৈঠক করে একটি জায়গায় নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি। ক্লাবের পরিধি বাড়াতে ওমানে শাখা প্রসারিত করেছি। সালালা নামক স্থানে প্রায় ২ লাখ প্রবাসী বসবাস করেন। ওমানে মন্ত্রি পরিষদ শাখা গঠনে আগ্রহী নয়। তারপরেও মন্ত্রিবর্গের সহযোগীতায় শাখা প্রতিষ্ঠা করেছি। এই শাখা প্রায় ২লাখ প্রবাসীদের নিয়ে কাজ করছে। যদিও মনিটরিং আমরা সেন্ট্রাল থেকে করছি। অতীতে সোস্যাল ক্লাবের সাতে দূতাবাসের একটা দূরত্ব ও বৈরী মনোভাব ছিল। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর দূতাবাসের সাথে সুসম্পর্ক হয়েছে। মান্যবর রাস্ট্রদূত আমাদের ক্লাবের উদ্বোধনসহ অনুষ্ঠানে এসেছেন। বাংলাদেশ স্কুল প্রবাসীদের একটি গর্বের স্থান। বাংলাদেশ স্কুলের সাথেও অতীতে ক্লাবের দূরত্ব ছিল। তাদের সাথেও সম্পর্ক উন্নয়ন হয়েছে। এগুলো বড় পাওয়া বলে মনে করি।

দূতাবাস প্রবাসীদের কল্যাণে কাজ করছে। দুবাইতে সাম্প্রতিক সময় প্রবাসীদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া শুরু হয়েছে। ওমান প্রবাসীদেরকেও জাতীয় পরিচয় পত্র দেওয়ার জন্য মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ জানাবো। বাংলাদেশ সোস্যাল ক্লাব ৮ লক্ষ প্রবাসীর প্রতিনিধিত্ব করেন। সোস্যাল ক্লাব পরিচালনায় অর্থের কোন উৎস নেই। নির্বাহী কমিটির সদস্যদের সহযোগীতায় ক্লাব পরিচালিত হচ্ছে। অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যে আমাদের কাজ করতে হয়। যে সব জায়গায় সোস্যাল ক্লাবের ভ’মিকা রাখা দরকার সেখানে আমরা কাজ করছি। দেশের সব জাতীয় কর্মসূচী ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান আমরা পালন করছি। ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এম এন আমিন তিনিও চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির সন্তান। সংগঠনের সহ-সভাপতি রেজাউল ভাইসহ ক্লাবের পুরো টিম নান্দনিক ও আন্তরিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। আমার দেশ-আমার অহংকার। প্রবাসে থাকলেও মন পড়ে থাকে স্বদেশে। দেশের মাটি ও মানুষের সাথে যেভাবে সম্পর্ক সেভাবে প্রবাসীদের সাথে আমাদের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে।

বিশিষ্ট প্রবাসী সংগঠনক, সমাজসেবক ও দানবীর সিরাজুল হক বলেন, ওমানে সোস্যাল ক্লাবে আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর স্বাধীনতার স্বপক্ষে শক্তির ব্যাক্তিদের মনে ধারণা হয় যে, এখন যারা নেতৃত্বে এসেছেন বঙ্গবন্ধুর ছবি ক্লাবে নিশ্চয় শোভা পাবে। এটা করতে হলে মন্ত্রণালয়ের অনুমতি লাগে। আমাদেরকে বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের সাথে সম্পৃক্তরা অনুরোধ করেছেন ছবি টাঙ্গানোর জন্য। দূতাবাসও অনুরোধ করেছে। তখন উনাদের সাথে বৈঠক হয়েছে। আমরা ক্লাবে রেজুলেশন করে ওমানের মন্ত্রণালয়ে পাঠালাম এবং অনুমতি প্রাপ্ত হয়েছি। আমাদের জাতির পিতার সাথে ওমানের জাতির জনকেরও ছবি আনুষ্ঠানিকভাবে মান্যবর রাস্ট্রদূত প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে জাতির জনকের ছবি উত্তোলন করেন। এতে মান্যবর রাষ্ট্রদূত ও দূতাবাসের ভাল ভূমিকা ছিল। ২৩ বছর পর এই ছবি উঠাতে পেরে আনন্দবোধ করছি। প্রবাসী সংগঠক সিরাজুল হক আরো বলেন, প্রবাসে বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে নারী শ্রমিক পাঠানো বন্ধ করা উচিত।

প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী যখন ওমানে যান তখন আনুষ্ঠানিকভাবে উনাকে জানিয়েছি যে, নারী শ্রমিক প্রেরণ যেন বন্ধ করা হয়। এরা বিমানবন্দরে নেমেই দালালের খপ্পরে পড়ে। গৃহকর্মী হয়ে যখন যায় তখন নানাভাবে এরা শারিরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতিত হয়। এমনকি অনৈতিক কাজেও বাধ্য করা হয়। নারী শ্রমিকদের দিয়ে আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। আজকে আমাদের দেশ অনেক উন্নত। নারীদের কর্মসংস্থান এখন দেশে হচ্ছে। লক্ষ লক্ষ নারী দেশে কাজ করছেন। নারী শ্রমিক পাঠানো বন্ধ হওয়া দেশের স্বার্থে অত্যন্ত জরুরী। ভারত ও ফিলিপাইন থেকে নারী শ্রমিক যাচ্ছে কিন্তু তাদের প্রক্রিয়া কঠিন। ভারতের কোন মহিলাকে কাজে নিতে হলে বাংলাদেশী টাকায় ২/৩ লাখ টাকা ডিপোজিট করতে হয়।

সোস্যাল ক্লাবের সভাপতি সিরাজুল হক বলেন, আমরা ওমান প্রবাসীরা সব সময় অবহেলিত। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় বা সরকার কতটুকু আন্তরিক তা বোধগম্য নয়। প্রায় ৮ লাখ বাংলাদেশী প্রবাসী ওমানে কর্মরত ও বসবাস করছেন। দুবাইকে যেভাবে হাইলাইট করা হচ্ছে সেভাবে ওমান থেকে কম জনসংখ্যায় বাংলাদেশী রয়েছেন আমিরাতে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে স্বারকলিপি প্রধানমন্ত্রী বরাবরে পাঠিয়েছি ওমান সফর করার জন্য। মন্ত্রিরা মাঝে মধ্যে যাচ্ছেন। তবে প্রধানমন্ত্রী সফর করলে শ্রমবাজারসহ ব্যবসা বাণিজ্যে , শিল্প স্থাপনে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে। ওমানের রাজার সাথে প্রধানমন্ত্রী দেখা করলে দুই দেশের সুসম্পর্ক আরো বেগবান হতো। আমরা আপনাদের মাধ্যমেও বলব, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ওমান সফরে আসুন। দেশে আগে যারা প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তারাও কখনও যাননি।

বিশিষ্ট সমাজসেবক সিরাজুল হক দেশের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের লাগামহীন উর্ধগতি সম্পর্কে বলেন, এই সমস্যা মানুষসৃষ্ট সমস্যা ও সংকট। এটা ব্যবসায়ীদের কারসাজি। কারণঃ মধ্যপ্রাচ্যের একজন শ্রমিকের বেতন ৩০ হাজার টাকা। দেশে ১৫ হাজার টাকা। একজন শ্রমিক দেশে বাজারে গিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য যেভাবে ক্রয় করছে তার অর্ধেকের চেয়ে কমে মধ্যপ্রাচ্যের একজন শ্রমিক বাজার থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ক্রয় করছে। বাজার মনিটরিং করার কোন ব্যবস্থা দেশে নেই। “সর্ষের ভেতর ভূত” আছে। দুর্নীতির শেকড় সব জায়গায়। আমাদের দেশ এগিয়ে যাচ্ছে অর্থনৈতিকভাবে। সরকারের উচিত এসব জায়গায় নজরদারী বাড়ানো তাহলে দেশের সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে। সরকার কঠোর হলে ও নজরদারী করলে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে ইনশাল্লাহ্ ।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.