বাসে চবি ছাত্রীকে যৌন হয়রানি, ছাত্রীর আবেগঘন স্টাটাস

0

সিটি নিউজঃ চট্টগ্রামে চলন্ত বাসে চবি’র এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে চালকসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। যৌন হয়রানির শিকার ওই ছাত্রী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) মার্কেটিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। নগরীর বাস টার্মিনাল সংলগ্ন এলাকা চান্দগাঁও থেকে শনিবার (৩০ নভেম্বর) রাতে তাদের আটক করে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ।

আটক তিনজন হলো- সোহাগ নন এসি বাসের বাসচালক এহসান করিম (৩২), সুপারভাইজার আলী আব্বাস (৩০) ও হেলপার মো. ভুট্টু (৩০)। তাদের সবার বাড়ি কক্সবাজার জেলার চকরিয়া এলাকায়। ওই ছাত্রী পটিয়া থেকে শহরে ফিরছিলেন।

আজ রবিবার (১ ডিসেম্বর) সিএমপির আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে উপ- পুলিশ কমিশনার আমেনা বেগম বলেন, আমরা অভিযোগ পেয়ে অভিযান চালিয়ে আসামীদের গ্রেফতার করেছি। নারীদের হয়রানি বন্ধে সিএমপির পক্ষ থেকে ব্যাপক জনসচেতনতা মূলক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। প্রতিটি বাসে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো্র জন্য আমরা কাজ করছি।

নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) আসিফ মহিউদ্দীন জানান, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে চান্দগাঁও থানার বাস টার্মিনাল ও বাহির সিগনাল এলাকায় অভিযান চালিয়ে বাসের চালসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি বলেন, বাসের সব যাত্রী নেমে যাওয়ার পর খারাপ উদ্দেশে ওই ছাত্রীকে নিয়ে বাস চালিয়ে টার্মিনালের দিকে চলে যেতে চেয়েছিল বাসের চালক এহসান করিমসহ অন্যরা। বাসের সুপারভাইজার ও হেলপারের সঙ্গে অনেকক্ষণ টানাহেঁচডার পর ওই ছাত্রী বাস থেকে নেমে পড়েন।

জানা যায়, ২৭ নভেম্বর বেলা সাড়ে ৩টার দিকে নগরীর বহদ্দারহাট এলাকায় ওই ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে সোহাগ পরিবহনের একটি বাসের চালক ও দুই সহকারী। এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার ফেসবুকে ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী স্ট্যাটাস দিলে বিষয়টি গণমাধ্যমের নজরে আসেন।

সেদিনের পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ওই ছাত্রী তার ফেসবুকে একটি আবেগঘন স্টাটাসও দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন ‘হ্যাঁ, আর পাঁচটা মেয়ের মতো আজ আমিও মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে ফিরেছি! পটিয়া গিয়েছিলাম বোনের বাসায় বেড়াতে। সাধারণত ট্রেনেই আসা-যাওয়া করি আমি; বাসে বমিটিংয়ের প্রবলেম থাকার কারণে ওঠাও কম হয়।

দুলাভাইয়ের বাসা মুন্সেফ বাজার, গলি থেকে বের হলেই নাকি বাস পাওয়া যায় উনি বলেছিলেন, নতুন ব্রিজ কিংবা টার্মিনালের বাস। বাসা থেকে নেমে রিকশা নিয়ে মেইন রাস্তা অব্দি আসলাম। নেমে দাঁড়াতেই একটা ‘সোহাগ’-এর বড় বাস আসছিল। হাত নাড়ালাম। থামলো, বাসে অতটা ভিড় ছিল না বললেই চলে, তবে খালিও কিন্তু ছিল না।

আমি কন্ডাক্টরকে জিজ্ঞেস করলাম বহদ্দারহাট যাবে কিনা! উনি বলল যাবে, উঠলাম। জানালার পাশের সিট খুঁজছিলাম, মানুষ কম থাকলেও সবাই মোটামুটি জানালার পাশেই বসেছিল। অতঃপর সিট না পেয়ে এক আন্টির পাশে গিয়েই বসলাম আমি। প্রথম থেকে ৩নং চেয়ারে।

বাস চলছে। কন্ডাক্টর ছিলেন দুজন। একজন দরজার সামনে দাঁড়িয়েছিল আরেকজন টাকা তুলছিল। কিছুক্ষণ পর একজন আসে, বলে ভাড়া দেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম কত? জিজ্ঞেস করে কই যাবেন? আমি বললাম মামা আমি ২নং গেট যাব, কোথায় নামলে সুবিধে হয়, উনি বললেন টার্মিনাল।

আমি বললাম তা হলে টার্মিনালের ভাড়াই নেন। উনি ৬০ টাকা নিল, আর জিজ্ঞেস করল একা কিনা, আমি বললাম জি। ভেবেছিলাম হয়তো ভাড়ার জন্য বা ভাড়া নেয়ার জন্য জিজ্ঞেস করেছে। এরপর থেকে উনি বারবার তাকিয়েছিল আমার দিকে। আমি অত পাত্তা না দিয়েই আবারও কানে হেডফোন গুজে বসেছিলাম।

আমার পাশের আন্টি নতুন ব্রিজ নেমে যায়, আমি জানালার পাশে গিয়ে বসি। এর পর বহদ্দারহাট কিনা জানি না, একটা জায়গায় এসে বাস দাঁড়ায় এবং অনেকজন নেমে যায়, আমি উঠে নেমে যাচ্ছিলাম কন্ডাক্টর বলে আপনি না ২নং যাবেন? আপনাকে ওখানেই নামাই দিব বসেন। আমি দরজার পাশে প্রথম সিটে আবারও বসলাম।

বাস ড্রাইভার মিরর দিয়ে বারবার তাকাচ্ছিল আমার দিকে, আমার সন্দেহ হতে থাকে, আমি পিছে তাকাই দেখি একটা মানুষও নেই। আমি বললাম, ভাই আমাকে নামাই দেন আমি ২নং গেট যাব না। যিনি দরজার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন, উনি দরজাটা খুব তাড়াতাড়ি আটকে দেন। আমি চিল্লাই উঠে বললাম- ড্রাইভার বাস থামান আমি নামব, উনি এমন ভান করছিল যেন উনি আমাকে শুনতেই পাচ্ছে না।

আমি ৯৯৯ টাইপ করছিলাম, এ সময় কন্ডাক্টর এসে আমার ব্যাগ নিয়ে নেয়। আমি ব্যাগ আটকানোর জন্য উনার সঙ্গে টানাটানি করছিলাম আর সারাক্ষণ চিৎকার করছিলাম জানালা দিয়ে। কন্ডাক্টর আমাকে ধাক্কা দেয় আমি দরজার সঙ্গে খুব জোরে বারি খাই। আমি পা দিয়ে দরজায় লাথি মারছিলাম, আর চিৎকার করছিলাম।

আমার হিজাব টানছিল দুজন কন্ডাক্টরের একজন। আমি কান্না করে করে লাথি মারছিলাম দরজায় আর নিজেকে বাঁচানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করছিলাম। রাস্তার কিছু মানুষ ব্যাপারটি হয়তো নোটিশ করেছিল, আমি জানি না। ড্রাইভার বলে ছেড়ে দে, সুবিধা নাই। বাস থামায় আমি জিনিস নিয়ে নেমে পুলিশ বক্স খুঁজছিলাম, ইভেন আমি চিনিও না জায়গাটা।

বাসের নম্বর দেখতে পারিনি সবকিছু ঝাপসা মনে হচ্ছিল। একটা রিকশা নিলাম আর বাসায় আসলাম। আলহামদুলিল্লাহ এখন আমি সুস্থ এবং আমার ক্ষতি করতে পারেনি।

জানি না হয়তো সুবিধে পায়নি বলে এ যাত্রায় আমি বেঁচে গেছি; কিন্তু অন্যদিন সুবিধে পেলে হয়তো অন্য একটি বোনের বা মায়ের রক্তাক্ত লাশ পাওয়া যাবে। এ দেশে মেয়েদের অনেক সম্মান! অনেক বেশিই। আলহামদুলিল্লাহ আমি সুস্থ আছি।’

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.