চট্টগ্রামে ম্যাক্স হাসপাতালে ফের ভুল চিকিৎসায় শিশু মৃত্যুর অভিযোগ

0

সিটি নিউজ ডেস্ক : চট্টগ্রামের বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতালে নার্স-চিকিৎসকদের অবহেলায় ও ভুল চিকিৎসায় ১৩ মাস বয়সি এক শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। নিহত শিশুর নাম জিহান সারোয়ার প্রিয়। মেনিনজাইটিসে আক্রান্ত প্রিয় জ্বর নিয়ে ১৭ নভেম্বর ম্যাক্স হাসপাতালে ভর্তি হন। এরপর ২১ নভেম্বর সকালে একটি ইনজেকশন দেয়ার পরপর তার মৃত্যু হয় বলে পরিবারের অভিযোগ।

গত বছরের ২৮ জুন সাংবাদিক রুবেল খানের কন্যা রাইফা নামের চার বছর বয়সী এক শিশুর মৃত্যুর পর এই ম্যাক্স হাসপাতালের বিরুদ্ধে অবহেলা ও ভুল চিকিৎসার অভিযোগে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল।

রবিবার (১ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জনের কাছে লিখিত অভিযোগে ম্যাক্স হাসপাতালের অব্যস্থাপনার কথা তুলে ধরে তার প্রতিকার চেয়েছেন শিশুটির মা লালখান বাজারের বাসিন্দা মোহছেনা আক্তার ঝর্ণা। শিশুটির বাবার নাম শামীম সারোয়ার। শিশু জিহান সারোয়ারের মা লেখিকা ও ব্যাংক কর্মকর্তা।এক ভাই, এক বোনের মধ্যে প্রিয় ছিল শিশু জিহান।

অভিযোগ বলা হয়, ‘গত ১৭ নভেম্বর তার এক বছর ২৪ দিন বয়েসী শিশু সন্তান প্রিয় অসুস্থ বোধ করলে তাকে বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতালের এনআইসিইউতে ভর্তি করাই। ভর্তির পর অনকলে চিকিৎসক সনৎ কুমার বড়ুয়াকে দেখালে তিনি ব্যবস্থাপত্র লিখে দেন। এরপরই ম্যাক্স হাসপাতালের অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার মুখে আমরা অসহায় হয়ে পড়ি। এনআইসিইউ’র মত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তাদের কোন অভিজ্ঞ চিকিৎসক ও নার্স নেই।’

‘গত ২১ নভেম্বর দুপুরে আমার সন্তানকে মেশিনের মাধ্যমে ড্রপিং পদ্ধতিতে ধীরে ওষুধ দেয়ার কথা থাকলেও অনভিজ্ঞ নার্স ওই ওষুধের শেষের অংশ হাত দিয়ে পুশ করেন। আর তখনই আমার নাড়ীছেড়া ধন ম্যাক্স হাসপাতালের অবহেলায় পৃথিবী বুক ছেড়ে চিরবিদায় নেয়।’

অভিযোগ পত্রে মোহছেনা ঝর্ণা উল্লেখ করেন, চারদিনে প্রায় সময়ই ম্যাক্স হাসপাতালে নার্স, আয়া ও চিকিৎসকদের অবহেলার স্বীকার হয়েছি। এমনকি বিভিন্ন সময়ে অদক্ষ ও অনভিজ্ঞ চিকিৎসক কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেনি। অদক্ষ ও অনভিজ্ঞ নার্সরা ডিউটিতে রাতে ঘুমিয়ে থাকে। তাদের ডাকলে উল্টো বকা শুনতে হয়।

‘আরও মারাত্মক হলো আমার সন্তানের বিভিন্ন পরীক্ষার রিপোর্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দেখতে দেয়নি। আমার সন্তানের ট্রিটমেন্ট হিস্টোরিও তারা দেয়নি। যে ওষুধ আমার সন্তান প্রিয়কে দিয়েছে তার মেয়াদ ছিল কি না তাও আমরা জানি না।’

ম্যাক্স হাসপাতাল শুধু তাদের ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি পূর্ণ করে চলেছে উল্লেখ করে ঝর্ণা বলেন, রোগীদের সুচিকিৎসা প্রদানে তাদের বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। এসব কারণে আমার সন্তানের মৃত্যুর সঠিক কারণ উদঘাটন এবং ম্যাক্স হাসপাতালের প্রতিটি অনিয়মের বিরুদ্ধে তদন্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি ছেলের মৃত্যুর কারণ জানতে চাই। তারা খুঁজে বের করুক। যে ছেলে আধঘন্টা আগেও সুস্থ ছিল। কোথায় ভুল ছিল সেটাই তারা বের করুক। আমি তো সন্তানহারা হয়েছি আর কারো মা-বাবার যেন এমন না হয়।’

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. শেখ ফজলে রাব্বী অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, যে কোনো মৃত্যু অনাকাঙ্খিত। চিকিৎসায় কোনো গাফিলতি, ত্রুটি কিংবা অবহেলা হয় তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা অবশ্যই বিষয়টি তদন্ত করে দেখব। বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের সাথে সমন্বয় করে তদন্তের ব্যবস্থা করা হবে।

তিনি বলেন, পত্রিকায় এই ঘটনার বিষয়ে সংবাদ দেখে আমরা একটা কমিটি গঠন করেছিলাম। কিন্তু ওই তদন্ত কমিটির একজন চিকিৎসক তদন্তে অপরাগতা প্রকাশ করেন। এরপর আবারো নতুন করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।

সিভিল সার্জন বলেন, এই অভিযোগ পাওয়ার পর আমাদের তদন্ত করতে সুবিধা হবে। ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের যদি গাফিলতি থাকে তবে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। বেসরকারি হাসপাতালগুলো সরকারি নীতিমালা অনুসারে যদি মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত না করে তাহলে আমার ব্যবস্থা নেব।

অভিযোগের বিষয়ে ম্যাক্স হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. লিয়াকত আলী বলেন, তদন্ত হোক। তদন্ত হলে কোনো সন্দেহ থাকলে সেটা দূর হবে। এছাড়া বাচ্চাটির অবস্থা খুব খারাপ ছিল। মেনিনজাইটিস খুব মারাত্মক রোগ।

তিনি আরো বলেন, এভাবে যদি ভুল চিকিৎসা উল্লেখ করে রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলা শুরু করে, তাহলে তো ডাক্তারেরা চিকিৎসা সেবা দিতে ভয়ে থাকবে। এ ধরণের অবস্থা হলে মুর্মুষূ রোগীকে কেউ ভর্তি করাতে চাইবে না। জীবন মৃত্যুর উপর তো কারো হাত নেই।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.