বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার জামিন শুনানি 

0

সিটি নিউজ ডেস্ক : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানি হবে বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর)। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগে এ শুনানি হবে। এর আগে গত ৫ই ডিসেম্বর খালেদা জিয়ার মেডিকেল রিপোর্ট দাখিলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পক্ষে সময় চান অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

আদালত ১১ই ডিসেম্বরের মধ্যে মেডিকেল রিপোর্ট দুটি দাখিলের নির্দেশ দেন। আর শুনানির দিন ঠিক করে দেন ১২ই ডিসেম্বর। শুনানিকে কেন্দ্র করে সুপ্রিম কোর্টে নেয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা। এরই মধ্যে আপিল বিভাগের এক নম্বর এজলাস কক্ষে ৮টি সিসি ক্যামেরা স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে।

মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরের পর থেকে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে ইলেকট্রিশিয়ানরা সিসি ক্যামেরা লাগানোর কাজ শুরু করেন। এজলাসের যে কক্ষে সিসি ক্যামেরাগুলো লাগানো হচ্ছে সেটি মূলত প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন এক নম্বর এজলাস কক্ষ।

সূত্র জানায়, সোমবার সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন আপিল বিভাগের এক নম্বর আদালতের এজলাস কক্ষে সিসি ক্যামেরা লাগানোর সিদ্ধান্ত হয়। সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। তারা বলেন, প্রধান বিচারপতির এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই, অভিনন্দন জানাই।

সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা জানান, খালেদা জিয়ার জামিন শুনানি ঘিরে ৫ ডিসেম্বর আপিল বিভাগের ভেতরে নজিরবিহীন হট্টগোল হয়েছে। ফের যাতে এমন ঘটনা ঘটতে না পারে সেজন্য এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

এরই মধ্যে সোমবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেছেন, ১১ই ডিসেম্বরের মধ্যে খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানাতে আদালত থেকে পাঠানো আদেশ পেয়েছি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই কারাবন্দি খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থার মেডিকেল রিপোর্ট পাঠানো হবে।

তিনি আরো বলেন, মতামত তিনি তৈরি করেন না, মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা শারীরিক অবস্থা পর্যালোচনা করে মতামত লিখে দেন। সেই মতামতটাই তারা আদালতে পাঠিয়ে দেন।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম আয়োজিত এক প্রতিবাদ সভায় ফোরামের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, সেদিন বেগম খালেদা জিয়ার মেডিকেল রিপোর্ট প্রস্তুত হলেও আদালতে তা দাখিল করেননি অ্যাটর্নি জেনারেল। আমাদের এই সমাবেশ ও মানববন্ধন বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে নয়। আমাদের এই প্রতিবাদ মূলত অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে। আমরা ন্যায়বিচার চাই।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়া ন্যায় বিচার না পেলে আইনজীবীরা রাজপথে নামবে এবং রাজপথকে উত্তপ্ত করবে। আমরা এখনো বিশ্বাস করি, আমাদের বিচার বিভাগ বিশেষ করে সুপ্রিমকোর্ট ন্যায় বিচার করবেন, আইনের শাসন কায়েম থাকবে। সেই জন্যই আজকের এই সমাবেশ।

খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগত মেডিকেল বোর্ডের রিপোর্ট নিয়ে সরকার ষড়যন্ত্র করছে বলেও অভিযোগ তুলে বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, বিচার বিভাগ থেকে আমাদের যে বিচার পাওয়ার কথা ছিল- তা অ্যাটর্নি জেনারেলের কারসাজিতে পাচ্ছি না। সর্বোচ্চ আদালত মেডিক্যাল রিপোর্ট চেয়েছে। যথাসময়ে সেই রিপোর্টও এসেছে। কিন্তু অ্যাটর্নি জেনারেল অত্যন্ত জঘন্যভাবে আদালতে সেটা উপস্থাপন না করে বলেছেন রিপোর্ট আসেনি। আমি মনে করি, তিনি সর্বোচ্চ আদালতের প্রতি অবমাননা করেছেন।

পাকিস্তানের উদাহরণ দিয়ে খন্দকার মাহবুব বলেন, আমরা প্রতিবেশি দেশের দিকে তাকাই, তখন দেখি সাজাপ্রাপ্ত অবস্থায়ও নওয়াজ শরীফকে হেলিকপ্টরে করে বিদেশে পাঠানো হয়েছে। লালু প্রসাদকেও সুপ্রিমকোর্ট থেকে জামিন দেয়া হয়েছিল। সেখানে যারা আইন উপদেষ্টা ছিলেন তারা বিচার বিভাগকে বিভ্রান্ত করেন নাই।

সোমবার সন্ধ্যায় মানবাধিকার ও সমাজ উন্নয়ন সংস্থার উদ্যোগে বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক সেমিনারে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আজকে সময় এসেছে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করার। হত্যা, গুম, খুন, নির্যাতন, জেল-জুলুম সব কিছু হয়ে গেছে আমাদের বিরুদ্ধে। কোনো কিছুই এখন আর বাকি নেই। এখন বাকি শুধু ঐক্যবদ্ধভাবে অবৈধ এই সরকারের পতনের জন্য রাস্তায় নামা।

বুদ্ধিজীবী ও সমাজসেবীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের যারা বুদ্ধিজীবী আছেন, সমাজসেবী আছেন। তাদের সবাইকে আমরা বলতে চাই, এখন সময় এসেছে, আসুন ঐক্যবদ্ধভাবে মানুষের অধিকার রক্ষার জন্য ও দেশে আইনের শাসন কায়েম করার জন্য মাঠে নামি।

এর আগে গত ২৮শে নভেম্বর, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারিরিক অবস্থা জানতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাইচ্যান্সেলরকে মেডিকেল বোর্ডের রিপোর্ট দাখিল করার নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ৬ বিচারপতির বেঞ্চ। কিন্তু ৫ই ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মেডিকেল রিপোর্ট দাখিল করেননি। হাসপাতালেল পক্ষ থেকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সময়ের আবেদন করেন।

আদালত সময় মঞ্জুর করে ১১ই ডিসেম্বারের মধ্যে মেডিকেল রিপোর্ট ও ১২ ই ডিসেম্বর মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য নির্ধারণ করেন। কিন্তু বিএনপি পন্থী আইনজীবীরা বেগম জিয়ার জামিন চান। একপর্যায়ে মেডিকেল রিপোর্ট আরো আগে দাখিল ও শুনানির আদেশ চান । কিন্তু প্রধান বিচারপতি তাদের আবেদন না মঞ্জুর করেন। এর প্রতিবাদে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা আপিল বিভাগে হট্টগোল শুরু করেন। তুমুল হট্টগোল হলে বিচারপতিরা এজলাস ত্যাগ।

প্রসঙ্গত, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজা বৃদ্ধি করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে গত বছরের ১৯শে নভেম্বর আপিল বিভাগে আপিল করেন খালেদা জিয়া। ওই আপিলের সঙ্গে তার একটি জামিনের আবেদনও রয়েছে। এ মামলায় নিম্নআদালত খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিলেও দুদকের সাজা বাড়ানোর আবেদন গ্রহণ করে হাইকোর্ট তাকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন। এ রায় বাতিল ও খালাস চেয়ে খালেদা জিয়া আপিল বিভাগে আপিল করেন। এখন এই আপিল ও জামিনের আবেদন আপিল বিভাগে বিচারাধীন।

এছাড়া, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বর্তমানে ৩৭টি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবীরা। এর মধ্যে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের ৫টি মামলা দুর্নীতির অভিযোগে দায়ের হয়। এগুলো হলো-জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট, গ্যাটকো, নাইকো ও বড়পুকুরিয়া কয়লার খনি দুর্নীতি মামলা।

এগুলোর মধ্যে দণ্ডপ্রাপ্ত দুটি ছাড়া বাকিগুলোর বিচার চলছে ঢাকার বিভিন্ন আদালতে। বাকি ৩২টি মামলা বর্তমান সরকারের দুই মেয়াদে হয়। ৩৭ মামলার মধ্যে ১৮টি মামলার কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে উচ্চআদালতের নির্দেশে। এ ছাড়া কিছু মামলা তদন্তাধীন ও কিছু মামলার বিচার চলমান। বর্তমানে দণ্ডপ্রাপ্ত দুটি ছাড়া অন্য সব মামলায় খালেদা জিয়া জামিনে আছেন বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবীরা। গত বছরের ৮ই ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজার রায় ঘোষণার পর খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেয়া হয়।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.