মুক্তিযোদ্ধা!! জলিল নিজেই স্বীকার করলেন তিনি রাজাকার ছিল 

0

সিটি নিউজ ডেস্কঃ চুয়াডাঙ্গা জেলার সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের যদুপুর গ্রামের ‘রাজাকার’ আব্দুল জলিল এখন মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট, সনদ সবই রয়েছে তার। ‘রাজাকার’ জলিল এখন মুক্তিযোদ্ধা, ভাতা পান এবং সরকারি ঘরে থাকেন। বাড়ির দেয়ালে টাঙিয়ে রেখেছেন বঙ্গবন্ধুর ছবি। বাড়ীও রাঙ্গিয়ে রেখেন জাতীয় পতাকার আদলে। কিন্তু জানেন না দেশের জাতীয় দিবস কোনটি।
দেশ স্বাধীনের আজ ৪৮ বছর। এখনো মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অনেক মুক্তিযোদ্ধা ভাতার টাকায় কোনোরকমে জীবন কাটালেও উন্নত চিকিৎসাসেবা পান না। কারও কারও নেই মাথা গোঁজার ঠাঁই।

অথচ দেশ স্বাধীনের আজ ৪৮ বছর পরও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভাতা পান একজন ‘রাজাকার’। কিভাবে একজন ‘রাজাকার’ মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম তুলেছেন তা সবারই অজানা।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের যদুপুর গ্রামের ‘রাজাকার’ আব্দুল জলিল এখন মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৯৬ সালে মুক্তিযোদ্ধা হন তিনি। এরপর তাকে সরকারি ঘর দেয়া হয়। ওই বছর থেকে সরকারি ভাতা এবং বাড়িতে বসবাস করছেন তিনি। তার মতো আরও কয়েকজন ‘রাজাকার’ মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম লিখিয়ে ভাতা এবং যাবতীয় সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছেন।

অবশ্য আব্দুল জলিল নিজেকে ‘রাজাকার’ বলেই স্বীকার করেছেন। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর হিসেবে কাজ করতে গিয়ে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও তৎকালীন উইং কমান্ডার ওসমান গণির হাতে ধরা পড়েছেন বলেও জানিয়েছেন।

শুধু তাই নয়, দেশ স্বাধীনের পর মুক্তিযোদ্ধা সাজলেও ‘বিজয় দিবস’ এবং ‘স্বাধীনতা দিবস’ কবে তা জানেন না আব্দুল জলিল। একাধিকবার জানতে চাইলেও ‘বিজয় দিবস’ এবং ‘স্বাধীনতা দিবস’ কবে তা বলতে পারেননি তিনি।

সরেজমিনে দেখা যায়, ‘রাজাকার’ আব্দুল জলিল নিজের পরিচয় ঢাকতে মুক্তিযোদ্ধার সব সনদ এবং গেজেট সংগ্রহ করেছেন। সেই সঙ্গে বাড়ির দেয়ালে টাঙিয়ে রেখেছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় একটা ছবি।

এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার আবু হোসেন বলেন, ১৯৮৭ সালের তালিকা অনুযায়ী চুয়াডাঙ্গা জেলায় সর্বমোট মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন ১০৫০ জন। তবে সরকার বদলের সুযোগে কিছু অসাধু মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের যোগসাজশে ১৯৯৬ সালে ‘রাজাকার’ আব্দুল জলিলসহ কিছু ‘রাজাকার’ ও অমুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম লিখিয়েছেন। এখন তারাও সরকারি ভাতা পান।

চুয়াডাঙ্গা সদর থানার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুস শুকুর বাঙালি বলেন, বর্তমানে চুয়াডাঙ্গা জেলায় সরকারি ভাতাভোগী মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ১৫৭৬ জন। ১৯৮৭ সালের তালিকা হিসাবে ৫২৬ জন নতুন মুক্তিযোদ্ধা। এদের মধ্যে ‘রাজাকার’ ও ভুয়া এবং অমুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চুয়াডাঙ্গার মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি, ২০২০ সালে দেশ স্বাধীনের ৫০ বছর পূর্ণ হবে। তার আগেই মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও রাজাকার-অমুক্তিযোদ্ধাদের মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে বাদ দেয়া হোক।

জানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক (ডিসি) নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের তালিকায় অমুক্তিযোদ্ধা এবং রাজাকারের ঠাঁই নেই। তবে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় যদি কোনো রাজাকারের নাম থাকে তাহলে তার নাম বাদ দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।সূত্র- jagonews24.com

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.