পেঁয়াজের ঝাঁজ ক্যাটরিনার নাচ ও মধ্যবিত্তকে বাঁশ

0

জুবায়ের সিদ্দিকীঃ প্রায় প্রতিদিন কোন না কোন পণ্যের দাম বাড়ছে। চরম অস্তিরতা বিরাজ করছে কাঁচা বাজারে। বাজারে প্রায় প্রতিটি পণ্যের দামই বৃদ্ধি। পেঁয়াজের পর দাম বেড়েছে রসুন, আদা, হলুদ, তেলসহ বেশকিছু পন্যের। মাছ ও সব্জী বাজারে এখন লাগামহীনভাবে মৃল্যবৃদ্ধির প্রতিযোগীতা চলছে। নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের কাছে কাঁচাবাজার যেন এক মুর্তিমান আতংক।

অন্যদিকে আবার বঙ্গবন্ধু বিপিএল এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছিল জমকালো। ভারতের সংগীত শিল্পী সনু নিগম, ক্যাটরিনা ও সালমান খানের নৃত্য যেন আমাদের কিছুক্ষনের জন্য ভূলিয়ে দেয় আমরা যেন পেঁয়াজের ঝাঁজ নাকে লাগাতে ব্যর্থ হওয়া হতভাগাদের। একদিকে পেঁয়াজের জন্য ট্রাকের সামনে দীর্ঘ লাইন। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের সংসার যখন টালমাটাল। টানা পোড়নের সংসারে যখন সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস অবস্থা, তখন ক্যাটরিনা ও তার সহ শিল্পীদের উদ্দাম নাচ মানুষকে ভূলিয়ে রেখেছিল আমরা যে অভাবী।

চট্টগ্রাম শহরের এখন অলিতে গলিতে বা রাজপথে দেখা যায়, একটি ট্রাক ঘিরে তৈরী হয়েছে মানুষের জটনা। সবারই হাত উপরের দিকে উঠানো। আর সেখান থেকেই বেরিয় এসেছে মানুষের দীর্ঘ সারি। এগুলো টিসিবির ন্যায্য মূল্যের পেঁয়াজের ট্রাক। ট্রাকের উপরে বসা দুজন একটু পর পর একটা করে প্যাকেট নিচে দিচ্ছে। আর সেটা যেন কেড়ে নেওয়ার জন্য অসংখ্য হাত এগিয়ে যাচ্ছে। দেখে মনে হয়, এটা যেন কোন রিলিফ বিতরণের দৃশ্য।

সচরাচর কোন ভয়াবহ দূর্যোগ বা মহামারির সময়ই খাবারের জন্য এমন দৃশ্যের অবতারনা হয়। কিন্তু এবার টাকা দিয়ে পেঁয়াজ কেনার ক্ষেত্রেও এমন দৃশ্য তৈরী হয়েছে চট্টগ্রামে বিভিন্ন স্থানে টিসিবির পেঁয়াজের ট্রাক ঘিরে। একই চিত্র নগরীর সর্বত্র। নগরীর বাকলিয়া থেকে আব্দুল আওয়াল কোতোয়ালী মোড়ে এসেছিলেন ৪৫ টাকা দামে ১ কেজি পেঁয়াজ কেনার জন্য। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও পেঁয়াজের ঝাঁজের নাগাল পাননি। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বললেন, “একদিকে পেঁয়াজের ঝাঁজ অন্যদিকে ক্যাটরিনার নাচ ও আর আমাদের মতো মধ্যবিত্তের জুটছে বাঁশ”।

নগরীর নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের লাগামহীন উর্ধ্বগতি সাধারণ মানুষের মধ্যে নাভিশ্বাস যেন বাড়ছে দিন দিন। কর্মক্ষেত্রে কারো আয় বাড়লেও বেড়েছে বাজারে জিনিষের দাম। খেটে খাওয়া মানুষের দিনপঞ্জী এখন ভাল নেই।“নুন আনতে পান্তা ফুরাচ্ছে”। তারপরেও মানুষ, পথচলায় দেখা দেখিতে বলেছেন, ভাই ভাল আছি। আপনি ভাল আছেনতো।

স্বাধীনতার এতবছর পরও আজও দেশের মানুষের অভাব যেন দূর হয়নি। গরীব যেন আরো গরীব হচ্ছে। সাধারণ মানুষ জীবন বাঁচাতে, সংসার চালাতে প্রতিনিয়ত হিমশিম খাচ্ছে। মধ্যবিত্তরা নিরবে নিথরে অভাবকে বরণ করলেও কারো কাছে হাতপাততে পারছেন না। যেন বুক ফাটে, মুখ ফাটে না। গনতন্ত্রের সমাজ বিনির্মাণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আজ দেশ পরিচালিত হচ্ছে।

কিন্তু চাটুকার ও পদলেহনকারীদের দৌরাত্ম যেন সমাজকে বার বার আঘাত করছে। ক্ষমতাসীনদলের কিছু নেতা ও পাতি নেতা সংঘঠনের উৎসবে যেন সানাই বাজাচ্ছে। ক্ষমতার হালুয়া রুটি নিয়ে কিছু রাজনীতিবিদদের ভাগাভাগি যেন উৎসবে পরিনত হয়েছে। সাধারণ মানুষ কিভাবে সংসারের হাল ধরে আছে দ্রব্য মূল্যের এই উর্ধ্বগতির ব্যাপারে তা কি সরকার ভেবে দেখেছেন?

ক্ষমতাসীনদলের একটি অংশ ক্যাসিনো বাণিজ্য ও লুটপাটের বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। সরকার এসব দুর্নীতিবাজদের অনেককে আটক করে ব্যবস্থা নিয়েছেন। এ জন্য সরকারকে ধন্যবাদ দিলেও এখনও অনেক দুর্নীতিবাজ রাঘব-বোয়াল বহাল রয়েছে ব্যবসায় ও দলের পদে। এরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে।

“চোরের মার বড় গলা” তাদের গলার আওয়াজ এখনও আরো বেড়েছে। কারণঃ তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হয়নি। কোটি পতির সংখ্যা যেন দিন দিন বাড়ছে। গরীব আরো গরীব হচ্ছে। ক্ষমতাসীনদলের অনেক নেতা একটানা ৩ বার ক্ষমতায় থাকায় গায়ে জমেছে বাড়তি মেদ ও চর্বি। এরা এখন তৃণমূল নেতাকর্মীকে চেনেন না। সব সময় এসব তৃণমূলের নেতাকর্মীদের পাশ কেটে যান। এ জন্য দলের তৃণমূলেও রয়েছে ক্ষোভ ও হতাশা।

সব সরকারের আমলেই সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ রয়েছে অবহেলিত ও বঞ্চিত। পোড় খাওয়া জীবনের হাল ধরতে হিমশিম খাচ্ছে মানুষ। কে রাখে কার খবর। নিম্নবিত্ত মানুষগুলো এক মুটো আহার জোগাতে কাঠখড় ডিঙ্গিয়ে যেতে হোঁচট খাচ্ছে।

অন্যদিকে রাজনীতির মানচিত্রে রাজনীতিকে পেশায় নিয়ে এক শ্রেণির মানুষ অর্থের পাহাড় গড়ছে। ধরাকে সরা জ্ঞান করছে। সম্পদ ও অর্থের পাহাড়ে এরা রাজনীতিকে কলুষিত করছে। ব্যাথিত করছে দেশের মানুষকে। ক্ষমতায় গিয়ে ভুলে যান নির্বাচনী এলাকার মানুষকে। ভুলে যায় সাধারণ মানুষকে। দেশের মানুষ কেমন আছেন। বুকে হাত দিয়ে কোন ক্ষমতাধর কি ভেবে দেখেছেন?

নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের ঘোড়া ছুঁটছে যেন পাগলা ঘোড়ার মতো। এই পাগলা ঘোড়ার লাগাম টেনে ধরার জন্য যেন কেউ নেই। সাধারণ মানুষকেও দেখার কেই নেই। দেশে নির্বাচন আসে। ভোট দেয় মানুষ। জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করে। এরা নির্বাচিত হয়ে অনেকেই পেছনে ফিরে আর দেখেন না। মনে করেন, ক্ষমতার মসনদ পেয়ে গেছি। কিন্তু ক্ষমতা ও কারাগার যে খুব কাছাকাছি। তা বেমালুম ভূলে যান।

আমরা বড় দূর্ভাগা জাতি, আমাদের কেউ কথা দিয়ে কথা রাখেনা। বর্ষায় ৬ মাস বন্দরনগরী চট্টগ্রামের এক তৃতীয়াংশ জোয়ারের পানিতে ভাসে মানুষের জীবন ও সম্পদ। ভিটেমাটি ছেড়ে নগরবাসীর অনেকে থাকেন ভাড়া বাসায়। মানবেতর এই জীবন যেন থমকে যায় স্বাভাবিক জীবন যাত্রায়।

নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মতোই নগরবাসীর দূর্ভোগ পোড় খাওয়া মানুষের কপালে তিলক হয়ে শোভা পাচ্ছে। হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন যজ্ঞের ঢামাঢোল মানুষ শুনছে কিন্তু দেখছে ভিন্ন চিত্র। পথে ঘাটে খাদ, গর্ত, ভাঙ্গা রাস্তা। হোল্ডিং ট্যাক্স দিচ্ছে মানুষ। জীবন যাত্রায় জুটছে ভোগান্তি। দুর্গতি ও দুর্ভোগ। এসব দুর্গতি ও শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা থেকে সাধারণ মানুষ কবে মুক্তি পাবে- একমাত্র আল্লাহ্ বলতে পারবেন।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.