দেশের রাজনীতি পরিবারতন্ত্রের দিকে যাচ্ছে: ফখরুল

0

সিটি নিউজ ডেস্কঃ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশের রাজনীতি ‘পরিবারতন্ত্রের দিকে যাচ্ছে’।

আজ শনিবার (৪ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে জিয়া পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাসাস ও মাগুরা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কবীর মুরাদের স্মরণে জিয়া পরিষদ আয়োজিত নাগরিক স্মরণ সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, আপনি দেখবেন, এখানে একদলীয় শুধু নয়, এক ব্যক্তিও হয়ে যাচ্ছে, একটা পরিবার হয়ে যাচ্ছে। তাকিয়ে দেখেন নমিনেশন কাকে দেয়, কারা আসে, কে কোথায় আসে, আপনার সংগঠনগুলোর প্রধান কারা হয়? তাহলে বোঝা যাবে যে, তারা আজকে পরিবারতন্ত্রের দিকে যাচ্ছে।

তিনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে ইঙ্গিত করে এই মন্তব্য করলেও তার দলের চিত্রও ভিন্ন নয়। আওয়ামী লীগের দেশ পরিচালনার সমালোচনা করে তাদের ক্ষমতা থেকে হঠাতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, এই লড়াই কোনো ছোট-খাটো লড়াই নয়, জোর লড়াই। এই লড়াইয়ে সবাইকে অংশ নিতে হবে। আসুন, আমরা সবাই সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যাই। ভয়াবহ দানবীয় যে সরকার, তাকে সরিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করবার জন্য, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় একটা নতুন নির্বাচন আমাদের আদায় করে নিতে হবে।

এর মধ্যেও ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাখ্যা দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা বলেছি যে, নির্বাচনটাকে আমরা একটা আন্দোলনের অংশ হিসেবে নিয়েছি। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা জনগণের কাছে যেতে চাই। জনগণকে সঙ্গে নিয়েই আমরা এই সরকারকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে পরাজিত করব। এটাই আমাদের কাজ, সেই কাজটি আমরা করে যাচ্ছি। আমরা বিশ্বাস করি, এতে আমরা সফল হবে।

নাইকো দুর্নীতির মামলা খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে চললেও কানাডার আদালতের রায়ে এই দুর্নীতির প্রমাণ মেলেনি বলে দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, নাইকো দুর্নীতির মামলা যেটা এই সরকার করেছে, মূল যে মামলা কানাডাতে, সেখানে আন্তর্জাতিক সালিশ নিষ্পত্তিকারী ট্রাইব্যুনালের রায়ের তথ্য গোপন করে রেখেছে এই সরকার। ইতোমধ্যে এই মামলার রায় হয়েছে। এই মামলায় বলা হয়েছে যে, কোনো রকম দুর্নীতি হয়নি এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ অন্যান্য যাদেরকে এই মামলার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছিল, তারা সম্পূর্ণ নির্দোষ।

বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে দায়ের করা অন্য মামলাগুলোও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় অন্যায়ভাবে দীর্ঘদিন ধরে খালেদা জিয়াকে অসুস্থবস্থায় আটক রাখা হয়েছে। আমাদের দুর্ভাগ্য তাকে আমরা কারাগার থেকে মুক্ত করতে পারিনি। আমরা জানি, আইনগত কারণে তাকে কারাগারে যেতে হয়নি। রাজনৈতিক কারণে তাকে কারাগারে যেতে হয়েছে।

খালেদার ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলাগুলোও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, কবির মুরাদ ছিলেন একজন সংগঠনের সমান। যেকোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য তা সৌভাগ্যের ব্যাপার। নিরলস একজন মানুষ। অত্যন্ত পরিশ্রম করেছেন এ প্রতিষ্ঠানটির জন্য। তার এই সংগঠনের মধ্য দিয়ে যারা সক্রিয় রাজনীতিতে থাকতে চান, মেধার জগতে বাস করেন তাদের এই সংগঠনে আসার সুযোগ হয়েছে। কবির মুরাদ শুধু বিএনপির রাজনীতিতে নয় দেশে রাজনীতিতে বেচে থাকবেন তার কাজের মধ্য দিয়ে।

বক্তারা বলেন, কবীর মুরাদ জাতীয়তাবাদী রাজনীতির অন্যতম কর্ণধার ছিলেন। রাজনীতিবিদ হিসেবে দেশব্যাপী তার ছিল সুপরিচিতি। জিয়াউর রহমানের নীতি ও আদর্শে উদ্বুদ্ধ করে এদেশের বুদ্ধিজীবী সমাজের বৃহদাংশকে সংগঠিত করেছিলেন জিয়া পরিষদের ছায়াতলে। জিয়া পরিষদের সভাপতি হিসেবে দেশের গণতন্ত্রচর্চা, জাতীয়তাবাদী দর্শন, ইতিহাস চেতনা ইত্যাদির অনুশীলনে তিনি নানা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছিলেন। তিনি বিএনপির সবপর্যায়ের নেতাকর্মী ও জনগণের কাছে ছিলেন অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় ও সমাদৃত। মাগুরা জেলা বিএনপির সভাপতি হিসেবে নিজ এলাকায় বিএনপিকে সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করতে কবীর মুরাদ নিবেদিত হয়ে কাজ করে গেছেন।

গত ১৪ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) নেওয়ার পথে কবীর মুরাদ ইন্তেকাল করেন। যিনি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদেরও সদস্য ছিলেন।

 

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.