বাঁশখালীর ঋষিধামে ১০ দিন ব্যাপী ঋষি কুম্ভমেলায় ব্যাপক আয়োজন

0

কল্যাণ বড়ুয়া মুক্তা, বাঁশখালীঃ বাংলাদেশের একমাত্র ঋষিকুম্ভ মেলা বাঁশখালীর ঋষিধামে আগামী ৩১ জানুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে। দেশের একমাত্র এই ঋষিকুম্ভ মেলাকে ঘিরে ঋষিধাম এলাকা জুড়ে সাজ সাজ আয়োজনে এবার ঋষিকুম্ভ মেলা কয়েক লক্ষাধিক লোকের অংশগ্রহণ হবে বলে মেলা উদযাপন কমিটি জানায়।

বাঁশখালীর ঋষিধাম যেটা সারাদেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম তীর্থ স্থান হিসেবে পরিচিত। এখানে শ্রীমৎ স্বামী অদ্বৈতানন্দ পুরী মহারাজ প্রতিষ্ঠিত এই ঋষিধামে বিগত ৬৩ বছর আগে থেকে বাংলাদেশের একমাত্র ঋষিকুম্ভ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। প্রতি তিন বছর অন্তর অন্তর অনুষ্ঠিত এই ঋষিকুম্ভ মেলাকে ঘিরে বাংলাদেশ-ভারত তথা উপ-মহাদেশের কয়েক লক্ষাধিক সাধুসন্ন্যাসী ও পূণ্যার্থীগণ উপস্থিত হয়ে এখানে ধর্মীয় কার্যাদি সম্পাদন করেন। সেই ধারাবাহিকতায় আগামী ৩১ জানুয়ারি থেকে ০৯ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত ১০ দিন ব্যাপী বাঁশখালীর ঋষিধামে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক ঋষিকুম্ভ ও কুম্ভ মেলা। যা বাংলাদেশের আর কোথাও অনুষ্ঠিত হয় না।

বাঁশখালীতে শ্রীমৎ স্বামী অদ্বৈতানন্দ পুরী মহারাজ ১৯৫৭ সাল থেকে এই ঋষিকুম্ভ মেলার শুভারম্ভ করেন। প্রতি তিন বছর অন্তর অন্তর এই ঋষিকুম্ভ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এবার হচ্ছে বিংশতম ঋষিকুম্ভ ও কুম্ভ মেলা। ভারতের ইতিহাস প্রসিদ্ধ ৪টি স্থানে এই ঋষিকুম্ভ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। সেগুলো হল- ভারতের ১) হরিদ্ধার ২) প্রয়াগ ৩) উজ্জয়িনী অবন্তিকা ৪) নাসিকা (গোদাবরী তট) স্থানে হয়ে থাকে। যেখানে লাখো ভক্ত জনতা, মুনি, গুণী, ধ্যানী-যোগী, জ্ঞানী, সাধু-সন্ত, ঋষিদের সমাবেশ এবং মিলন মেলা ঘটে। যেখানে দুরত্ব ঘুচিয়ে নৈকট্য, দ্বৈত খণ্ডত্ব-সীমাবদ্ধতা, সংকীর্ণতা ঘুচিয়ে অদ্বৈত অখণ্ড বা বিরাটত্ব, সীমাহীনতা, সম্প্রসারিতা তথা অসীমের বৃহৎ মহৎ সৎ উদারতা প্রসারতার শ্রোতধারায় অবগাহন করে কায়িক, মানসিক, আত্মিক মুক্তির দ্বার উম্মোচন করেন।

কুম্ভমেলা উপলক্ষে প্রতিটি অনুষ্ঠানে পৌরহিত্য করবেন বাঁশখালী ঋষিধাম ও চট্টগ্রাম তুলসী ধামের মোহন্ত মহারাজ শ্রীমৎ স্বামী সুদর্শনানন্দ পুরী মহারাজ। তিনি বলেন, ঋষি কুম্ভ ও কুম্ভমেলা সকল ধর্মানুরাগীদের মিলনের স্থান। যেহেতু বাংলাদেশের আর কোথাও এই মেলা অনুষ্ঠিত হয় না একমাত্র বাঁশখালীর ঋষিধামেই অনুষ্ঠিত হয়। তাই সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত এবং নিরাপদ করার জন্য আমাদের সকল ব্যবস্থা রয়েছে। তিনি এই মহতী কাজে সকলের অংশগ্রহণের আহবান জানান।

বিংশতম আন্তজার্তিক ঋষিকুম্ভ ও কুম্ভমেলা উদযাপন উপলক্ষে আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির আহবায়ক দেবাশীষ পালিত, যুগ্ম আহবায়ক এডভোকেট তপন কান্তি দাশ, অলক দাশ, অধ্যাপক দেবব্রত দেওয়ানজী, এডভোকেট ভূপাল কান্তি গুহ, সদস্য সচিব এডভোকেট অনুপম বিশ্বাস, যুগ্ম সচিব শ্যামল কান্তি দাশ, তাপস কুমার নন্দী, অলক দাশ, ডা. আশীষ কুমার শীল, রাজীব সিংহ, অর্থ সম্পাদক তড়িৎ কান্তি গুহ, বাবলা কুমার পাল, সমন্বয়কারী অজিত কুমার দাশ, ঋষিকেশ আইচ অসিম, চন্দন দাশ। এছাড়া বেশ কয়েকটি উপ-কমিটি গঠন করা হয় ১০ দিন ব্যাপী অনুষ্ঠান সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ ভাবে সম্পাদনের লক্ষে।

এদিকে কুম্ভ মেলার প্রথম দিবস ৩১ জানুয়ারি কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে মঙ্গল আরতি ও জয়গানে মঙ্গল আহবান, জাতীয় পতাকা উত্তোলন, তৈজস সামগ্রী সহকারে ভা-ার গৃহের শুভ উদ্বোধন, বর্ণাঢ্য মহাশোভা যাত্রা, শ্রী গুরু মন্দিরে শ্রী গুরু বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা ও মন্দিরের মাঙ্গলিক কাজের শুভ উদ্ভোধন, শ্রী শ্রী গুরু মহারাজের পূজা, শ্রী শ্রী গুরু মহারাজের ভোগরাগ ও সমবেত প্রার্থনা, ধর্ম মহাসম্মেলন ও সঙ্গীতাঞ্জলী (আলোচ্য বিষয়ঃ পরমহংস অদ্বৈতানন্দ), সন্ধ্যারতি ও সমবেত প্রার্থনা, দ্বিতীয় দিবসে মঙ্গল আরতি ও জয়গানে মঙ্গল আহবান, শ্রী শ্রী গুরু মহারাজের পূজা, বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা, গীতাপাঠ প্রতিযোগিতা, ধর্মীয় সঙ্গীতাঞ্জলি, বিশ্বকল্যাণে ভূবন মঙ্গল চন্ডীযজ্ঞ, তৃতীয় দিবসে ভগবান শ্রী বিষ্ণু’র অভিষেক, সংগীতাঞ্জলি, ধর্ম মহাসম্মেলন (আলোচ্য বিষয়ঃ স্বামীজি রচিত শালগ্রাম তত্ত্ব বা মৃদঘন জগতে চিদ্ঘন ব্র‏‏হ্মবিজ্ঞান লাভের সহজ উপায়),

চতুর্থ দিবসে দেবাদিদেব মহাদেব’র অভিষেক, সংগীতাঞ্জলি, ধর্ম মহাসম্মেলন (আলোচ্য বিষয়ঃ পার্থিব শিবলিঙ্গ রহস্য বা প্রতীকে ব্র‏‏হ্মজ্ঞান লাভের সহজ উপায়), নাটক (যুগাবতার পরম পুরুষ স্বামী অদ্বৈতানন্দ), পঞ্চম দিসবে শ্রী শ্রী দশমহাবিদ্যা পূজা, ধর্মীয় সংগীতাঞ্জলি, স্বামীজি রচিত শ্রী শ্রী দশমহাবিদ্যা অনুসরণে, ধর্ম মহাসম্মেলন (আলোচ্য বিষয়ঃ শ্রী শ্রী দশমহাবিদ্যা) ষষ্ঠ দিবসে গঙ্গা পূজা ও মহাস্নান, ঋষিধ্বজা উত্তোলন, বেদমন্ত্র পাঠ, ১০৮ দীপমণ্ডিত মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, সাধু ভাণ্ডারা ও আন্তর্জাতিক ঋষি সম্মেলন, গঙ্গারতি ও অদ্বৈতানন্দ সরোবরে দীপদান উৎসব, সমবেত প্রার্থনা, অষ্টপ্রহরব্যাপী মধুসুদন কীর্তনের শুভ অধিবাস,

সপ্তম দিবসে চতুষ্প্রহরব্যাপী অহোরাত্র মধুসুদন কীর্তন, শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণের অভিষেক, ধর্মীয় সংগীতাঞ্জলি, ধর্ম মহাসম্মেলন (আলোচ্য বিষয়ঃ স্বামী রচিত ধর্ম প্রবেশিকা), ষোড়শপ্রহরব্যাপী মহানাম যজ্ঞের শুভ অধিবাস, অষ্টম দিবসে ষোড়শ প্রহর ব্যাপী মহানামযজ্ঞের শুভারম্ভ ও অহোরাত্র নামসংকীর্তন, গঙ্গাপূজা ও মহাস্নান, সপ্তশতী তুলসীদান, বিশ্বকল্যাণে পঞ্চাঙ্গ স্বস্ত্যয়ন, শান্তি হোম ও অঞ্জলী প্রদান, অন্নকুট উৎসব, শ্রী শ্রী গুরু মহারাজের ভোগরাগ ও সমবেত প্রার্থনা, নবম দিবসে অহোরাত্র মহানাম সংকীর্তণ, দশম দিবসে মঙ্গল আরতি ও জয়গানে মঙ্গল আহবান ঊষালগ্নে ষোড়শপ্রহরব্যাপী মহানামযজ্ঞের পূর্ণাহুতি, গঙ্গাপূজা ও মহাস্নান, বিশ্ব কল্যাণে ভূবনমঙ্গল গীতাযজ্ঞ, সমাগত ঋষি-তপস্বী, সাধু-সন্ন্যাসী, বৈষ্ণব ও ভক্তবৃন্দের পদরজঃ গ্রহণ।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.