হাত কাইট্টা বাইট্টা মরিচ লাগামু

0

জুবায়ের সিদ্দিকীঃ একটি দেশের প্রতিচ্ছবি বলা হয় সংবাদপত্রকে। ইংরেজী ‘জার্নাল’ এবং ‘ইজম’ থেকে জার্নালিজম বা সাংবাদিকতার উৎপত্তি। জার্নাল শব্দের অর্থ জানা কিছু প্রকাশ করা এবং ‘ইজম’ শব্দের অর্থ অনুশীলন বা চর্চা করা। সে হিসেবে কোন কিছু জনসমক্ষে প্রকাশ করার জন্য যে চর্চা বা অনুশীলন তাকেই বলে সাংবাদিকতা।

সাধারণ অর্থে বলতে গেলে যিনি সংবাদপত্রের জন্য সংবাদ সংগ্রহ করেন ও লিখেন তিনিই সাংবাদিক। তবে তথ্য প্রযুক্তির এই যুগের বিশালতায় সীমিত গন্ডির মধ্যে সাংবাদিকতাকে আটকে রাখা যায়না। মার্কিন সাংবাদিক ডি ব্লুমেন ফন্ডের মতে, যিনি সংবাদ সংগ্রহ করে তা প্রকাশ উপযোগী করেন এবং সংবাদ সংক্রান্ত কাজের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনিই সাংবাদিক। গুনীজনদের মতে সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা। সাংবাদিকদের মধ্যে কেউ কেউ এটাকে নেশা হিসেবে গ্রহন করতে স্বচ্ছ্যন্দরোধ করেন।

দুঃখের বিষয়, ঢাকার পরে চট্টগ্রামের অবস্থান কিন্তু চট্টগ্রামকে মফস্বল হিসেবে গণ্য করা হয়। শহরে বসবাস করেও আমরা মফস্বল সাংবাদিকতা করছি। যারা মফস্বল অর্থাৎ ঢাকার বাইরে যারা কাজ করেন তারা মূলত মফস্বল সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত। যারা রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করেন তাদেরকে সঠিক মূল্যায়ণ অনেক মালিকপক্ষ বা সম্পাদক করেন না। দিন নেই রাত নেই, যখন যেখানে যা ঘটছে দ্রুত সেখানে চলে যাচ্ছেন সংবাদ সংগ্রহের জন্য।

মফস্বল সাংবাদিকতা মূলত নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো মতো। তবে চট্টগ্রামে ব্যুরো বা অফিসের কর্মরত সাংবাদিকরা বেতন ভাতা পান। এর মধ্যে বিজ্ঞাপন নাম সর্বস্ব ও আন্ডার গ্রাউন্ড দৈনিকের অনেক সম্পাদক আছেন আলু পটলের ব্যাপারী বা লোহা লক্করের ব্যবসায়ী। এসব সম্পাদকরা তথ্য মন্ত্রণালয়ের এক্রিডিটেশন কার্ড সংগ্রহ, বিজ্ঞাপন সংগ্রহ ও ফুটানী দেখাতেই ব্যস্ত। এসব সম্পাদক কাম মালিকরা সাংবাদিক, কর্মচারীদের বেতন সময়মত পরিশোধ করেননা।

বাটপারী ও মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে সাংবাদিকদের খাটিয়ে এরা বেতনভাতা দেয়না। সংবাদপত্রকে ব্যবসার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন কিছু সম্পাদক। দেশের মানুষকে ভালোবেসে, দেশীয় সংস্কৃতিকে লালন করে পরম মমতাময়ী মন নিয়ে কিছু সৃজনশীল মানুষ এই পেশায় আছেন। এখানকার আয় দিয়ে সংসার চালানোর কথা ভেবে নয়, সমাজের জন্য ভালো কিছু করার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে তারা আসেন এই পেশায়। দেশের মানচিত্রে প্রতিনিয়ত প্রিন্ট ও ইলেকট্রিক মিডিয়ার প্রত্যেক জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধি তার কর্ম এলাকার অবহেলিত, উন্নয়ন বঞ্চিত জনপদের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করেন।

খুন, ধর্ষন, বাল্যবিবাহ, ইভটিজিং, অশিক্ষা, অপচিকিৎসা, যৌতুক, গ্রামের স্বচ্ছল মানুষদের নানাভাবে প্রতারিত হওয়াসহ সমাজের বঞ্চনা ও অবহেলার চিত্র পাঠকদের সামনে তুলে ধরেন মফস্বল সাংবাদিকরা। ঢাকার বাইরে তিনযুগ অতিক্রম করেছি অনেক আগে চট্টগ্রামে সাংবাদিকতায়। ঢাকায় বসে সম্পাদক বা মালিকপক্ষ রিপোর্টার ও ডেস্কে কর্মরত সাংবাদিকদের বিজ্ঞাপন সংগ্রহে চাপ দেন। বিজ্ঞাপন কত টাকার দেবেন সে প্রতিশ্রুতি দিয়ে চাকরী নিতে হয় অধিকাংশ পত্রিকার।

চালু পত্রিকার চেয়ে আন্ডাগ্রাউন্ড পত্রিকার সম্পাদকরা চলেন দাপটের সাথে। চট্টগ্রাম থেকে লাখ লাখ টাকার সরকারী বিজ্ঞাপন গেলেও মাস শেষে বেতন পাঠাতে গড়িমসি করেন সম্পাদকরা। কোন কোন সম্পাদক মনে করেন সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্য এমন কোন সাংবাদিককে রাখলে ভেজাল করবে। ওয়েজবোর্ড দিতে হবে। ঢাকা থেকে প্রকাশিত অধিকাংশ পত্রিকার চট্টগ্রামে কর্মরত সাংবাদিকরা ওয়েজবোর্ড পাননা। সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় এসব সম্পাদকদের অনিয়মের লাগাম ধরে রাখতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।

প্রেস ইনষ্টিটিউট মফস্বল সাংবাদিকদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে। বর্তমান সরকারের আমলে দুস্থ ও রোগে আক্রান্ত সাংবাদিক যখন অর্থের অভাবে থাকেন তখন সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাষ্ট থেকে অনুদান দেওয়া হচ্ছে। ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন এব্যাপারে ভাল ভূমিকা রাখছেন।

পেশাগত দায়িত্ব পালনে আমাদের প্রতিনিয়ত পড়তে হয় নানা ঝুট ঝামেলায়। মফস্বল থেকে লাঞ্চিত হওয়ার খবর যেমন আসে তেমনি রাজধানীতেও সাংবাদিকরা আক্রান্ত হচ্ছেন। হুমকি/ধমকি এখন নিত্য ঘটনা। বিশেষ করে ক্ষমাতাসীনদলের কোন নেতা, হোমড়া-চোমড়া, চাটুকার বা পাতি নেতার বিরুদ্ধে রিপোর্ট প্রকাশ হলেই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেন এরা। অনেকে ফোন করে বলেন, “ভাইপুত ধুরমিছ বানাইয়ুম আর ন’লিখিবা।

বর্তমানে প্রেস ইনষ্টিটিউট অব বাংলাদেশের পরিচালক (ডিজি) হলেন জাফর ওয়াজেদ। তিনি এবার একুশে পদক ২০২০ পাচ্ছেন। ’৯০ দশকে শিবিরের ক্যাডাররা ফোন করল নগরীর কাজির দেউড়ী বাংলা হোটেলে অবস্থিত দৈনিক সংবাদের অফিসে। দৈনিক সংবাদের ব্যুরোচীফ ছিলেন জাফর ওয়াজেদ। ক্যাডাররা লেন্ড ফোনে জাফর ভাইকে বলল, “তোর হাত কাইট্টা বাইট্টা মরিচ লাগামু”। আমাগো বিরুদ্ধে লিখলে তোর খবর আছে।

জাফর ভাই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে “সিরাজুস সালেহীন বাহিনীর তান্ডব” শিরোনামে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছিলেন। রাতেই নিজ কর্মস্থল থেকে বাসায় ফেরার পথে সিনিয়র সাংবাদিক জাফর ভাইয়ের সাথে সাক্ষাত করতে গেলে তিনি আমাকে দেখে হাসতে লাগলেন, বললেন, কিছুক্ষণ আগে শিবিরের ক্যাডাররা ফোন করে বলল, শালা তোর ডান হাত কাইট্টা ফেলামু, শালারা জানে না আমি বাম হাতে লিখি। জাফর ভাই অনেক ঝুঁকির মধ্যে চট্টগ্রামে সাংবাদিকতা করেছেন।

বিগত বিএনপি সরকারের আমলে জঙ্গী গোষ্ঠী আমাকে মৃত্যু পরোয়ানা লিখে প্রাণ নাশের হুমকি দেয় চিঠিতে। চট্টগ্রামের সাংবাদিক সমরেশ বৈদ্য ও সুমী খানও আমার মতো মৃত্যু পরোয়ানা পান। বিষয়টি তৎকালীন রয়টারের বাংলাদেশ প্রতিনিধি অগ্রজ সাংবাদিক নিজাম ভাই অবগত হয়ে দিল্লী থেকে রয়টারের দক্ষিণ এশিয়া প্রতিনিধি বিদেশী সাংবাদিককে নিয়ে চট্টগ্রাম এসে আমাদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। সম্ভবত ’৯৪ সনে বিএনপি সরকারের আমলে এ ঘটনা। সে সময় রয়টারের বরাত দিয়ে বিবিসি আমাদের তিন সাংবাদিকদের প্রাণ নাশের হুম

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.