খালেদার মুক্তি নিয়েঃ প্রকাশ পেলো কাদের-ফখরুলের ফোনালাপ 

0

সিটি নিউজ ডেসক্ঃ অবশেষে প্রকাশ পেলো বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে হালের রাজনীতির মাঠের অন্দর আলাপ নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ নিয়ে ফোনালাপ। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে দলটির সচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ফোন কথা বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সঙ্গে। দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের দুই শীর্ষনেতার ফোনালাপ হয় গত ১৩ ফেব্রুয়ারি।

পরে বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে ফোনালাপের বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কথা বিবেচনায় নিয়ে প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে আমার সঙ্গে ফখরুল ইসলাম আলমগীরের টেলিফোনে কথা হয়েছে। তিনি আমাকে অনুরোধ করেছেন– আমি যেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে খালেদা জিয়ার প্যারোলের বিষয়টি বলি।

তবে ফোনালাপের বিষয়টি অস্বীকার করে মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়ার প্যারোলে আবেদনের বিষয়টি তার পরিবার দেখছে। এ বিষয়ে ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে আমার কোনো কথা হয়নি। এর জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে বিএনপি রাজনৈতিক ইস্যু তৈরির চেষ্টা করছে। মির্জা ফখরুল যে আমার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন, সেটার রেকর্ডও আছে।

দুই নেতার পরস্পর বিরোধী বক্তব্যে তৈরি হয় বিভ্রান্তি। কাদের-ফখরুলে ফোনালাপ প্রসঙ্গটি ওঠে আসে আলোচনায়। আসলে ফোনে সেদিন কী কথা হয়েছিল দুই নেতার মধ্যে, এ নিয়ে তৈরি হয় সর্বত্র কৌতুহল।

সম্প্রতি দেশের শীর্ষ দুই রাজনৈতিক নেতার সাত মিনিটের ফোনালাপের নথি সাংবাদিকদের হাতে এসেছে। ওই নথি থেকে ওবায়দুল কাদের ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কথোপথন হুবহু তুলে ধরা হল।

মির্জা ফখরুল: আসসালামু ওয়ালাইকুম কাদের ভাই।

ওবাদুল কাদের: ওয়ালাইকুম আসসালাম।

মির্জা ফখরুল: ভাই কেমন আছেন..?

ওবায়দুল কাদের: হুম, আছি মোটামুটি ভালই।

মির্জা ফখরুল: শরীরের অবস্থা আপনার এখন কেমন?

ওবায়দুল কাদের: কয়েকদিন ধরে শরীরটা ভাল যাচ্ছে না।

মির্জা ফখরুল: অসুখের ওপর খেয়াল রাখবেন ভাই, চেকাপ করাবেন।

ওবায়দুল কাদের: হুম, নিয়মিত চেকআপ করাচ্ছি। ডাক্তারের সঙ্গে সবসময়ই যোগাযোগ আছে।

মির্জা ফখরুল: আপনাকে একটি বিষয় অবহিত করার জন্য ফোন দিয়েছি। আপনি জানেন, আমাদের ম্যাডাম খুবই অসুস্থ। দুইদিন আগে তার পরিবারের সদস্যরা তার সঙ্গে দেখা করে এসেছেন। তাদের সঙ্গে আমার আলাপ হয়েছে। তারা আমাকে বলেছেন, ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা খুবই সংকটজনক। যা আপনাকে ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না।

ওবায়দুল কাদের: হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলেছেন যে, তার অবস্থা স্থিতিশীল। আপনারা বলছেন, অন্য কথা। তাহলে কার কথা শুনবো। মেডিকেলের রিপোর্টের বাইরে যাওয়ার আমাদের কোন সুযোগ নেই। তার বিষয়টি সম্পূর্ণ আদালতের এখতিয়ার। আদালতের ওপরতো আমাদের কোন হস্তক্ষেপ করার নাই। এটা আমরা বার বার বলছি এবং এখনও বলছি।

মির্জা ফখরুল: জি..। আপনি, আমি, জানি যে, কী মামলায় তাকে সাজা দেয়া হয়েছে।

ওবায়দুল কাদের: কী মামলা মানে? এটাতো আমাদের আমলের সময় মামলা নয়, এই মামলাটি হয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। মামলাটি পুরনো। দীর্ঘদিন ধরে বিচার চলছে। একদিনেও বিচার হয়নি। দীর্ঘদিন বিচার চলার পর ওই মামলার রায় হয়েছে। আদালত রায় দিয়েছে, বিষয়টি আদালতের ব্যাপার। এখানে সরকারের কিছু করার নেই। আর যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে তার চিকিৎসা চলছে সেটি বিশ্বমানের চিকিৎসা। আমার চিকিৎসাও সেখানে হচ্ছে।

মির্জা ফখরুল: আমরা আদালতে বার বার জামিনের জন্য আবেদন চাইতে গেছি। আদালত দেয়নি। আপনি বলেন, বিচার বিভাগ কী পুরোপুরি স্বাধীন?

ওবায়দুল কাদের: বিচার বিভাগ পুরোপুরি স্বাধীন রয়েছে। এই বিচার বিভাগের প্রতি দেশের মানুষের আস্থা রয়েছে। আদালত স্বাধীন।

মির্জা ফখরুল: হুম, আমরা বার বার আদালতে গেছি….কিন্তু, আদালত ম্যাডামকে জামিন দেয়নি। বিষয়টি আপনারা মানবিক দৃষ্টিতে দেখেন। তিনি তিন বারের প্রধানমন্ত্রী। সাবেক রাষ্ট্রপতির স্ত্রী। বাংলাদেশের বড় দলের সর্বোচ্চ নেতা। আপনারা মানবিক দৃষ্টিতে দেখেন। আপনাদের সুদৃষ্টি প্রয়োজন।

ওবায়দুল কাদের: হুম.., আমরা তো বলেছি যে, আমরা আদালতের বাইরে যেতে পারবো না। এর বাইরে যাওয়া সরকার ও দলের কোন এখতিয়ার নেই। আপনারা আদালতে যান। আদালতেই আপনাদের সামনের শেষ রাস্তা। আরেকটি রাস্তা আছে যে, তাকে প্যারোল চাইতে হলে আইন অনুযায়ী তাকে দোষ স্বীকার করে সরকারের কাছে আবেদন করতে হবে। প্যারোলের আবেদন আসলে সরকার বিষয়টি ভেবে দেখবে। আমাদের গন্ডির মধ্যে থাকতে হবে….। এর বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই।

মির্জা ফখরুল: আমরা যে, প্যারোল চাইবো তা আপনাদের এই মামলা নিয়ে যে সব কাণ্ড করলেন তা ভরসা করতে পারছি না। প্যারোল চাইলেই যে, তিনি মুক্তি পাবেন তা ভরসা করা যাচ্ছে না। তার দল থেকে প্যারোল চাইতে পারে। তবে আমরা বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে দেখার জন্য আপনাদের কাছে দাবি করছি। আপনারা বিষয়টি মানবিক হিসাবে দেখেন। ম্যাডাম খুব অসুস্থ। হঠাৎ একটি দুর্ঘটনা ঘটে গেলে এর দায় কে নিবে বলেন? আপনারা বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিকোনে দেখেন।

ওবায়দুল কাদের: বিষয়টি তো মানবিকভাবেই দেখা হচ্ছে। তার ভাল চিকিৎসা হচ্ছে, উন্নত হাসপাতালে। আপনারা আদালতে যান। আদালতেই এর সমাধান দিবে।

মির্জা ফখরুল: ওকে, কাদের ভাই ভাল থাকেন।

ওবায়দুল কাদের: আপনিও ভাল থাকেন।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ৮ই ফেব্রুয়ারি জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে ৫ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়। এরপর থেকে তিনি কারাগারে। এই মামলায় নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে দায়ের করা আপিলে সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করা হয়। উচ্চ আদালতে প্রথম বার জামিন আবেদন করেও খালেদা জিয়ার জামিন মেলেনি। পরে গুরুতর অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে আবারও জামিন আবেদন করা হয়েছে। এ আবেদনের শুনানি চলছে আজ রবিবার।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.