রিয়াজ হায়দার চৌধুরীর চসিকের একুশে পদক প্রাপ্তি-সাংগঠনিক অর্জন নাকি রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা?

0

সিটি নিউজঃ পেশাজীবী নাগরিক সংগঠক ও সাংবাদিক নেতা রিয়াজ হায়দার চৌধুরী সবচেয়ে কমবয়সেই পেলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিকে)একুশে পদক -২০২০। বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত এবারের বইমেলায় সাংগঠনিক ক্যাটাগরিতে এবারের ‘মুজিব বর্ষ একুশে পদক’ পেলেন তিনি।

এবার একুশে পদক পেলেন ১১জন, সাহিত্য পদক পেলেন ৪ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সে এই স্বীকৃতি জুটল রিয়াজের ।‌ শুধু এবার নয়, এযাবতকালে চসিকের যতবার একুশে ও স্বাধীনতা পদক দেয়া হয়েছে, তন্মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সে প্রাপ্তির স্বীকৃতি মাল্যটিই জুটল রিয়াজের গলায়।

বিষয়টিকে চট্টগ্রামের তরুণ সংগঠকরা বেশ ইতিবাচকভাবে দেখলেন । সংগঠক ও তরুণদের মধ্যে আশাবাদ তৈরি হয়েছে।পারিবারিক পর্যায় থেকেই আওয়ামী ঘরানার এই সংগঠক চট্টগ্রামে প্রগতিশীল বিভিন্ন রাজনৈতিকদলের নেতৃবৃন্দের কাছেও নানা ভাবে গ্রহনযোগ্য। নেতৃত্বে ও পেশায় সফলতার সিঁড়িতে পা রাখা সাংবাদিক সংগঠক রিয়াজ একই সাথে তিনটি সংগঠনের শীর্ষ নেতা ।‌ কর্মক্ষেত্রেও একাধারে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সফল ব্যক্তিত্ব।‌ একাধারে রাজনীতি, অর্থনীতি, অপরাধ ও সংস্কৃতি নিয়েই লেখালেখির কারনে পাঠকপ্রিয় নাম রিয়াজ হায়দার চৌধুরী। দিনের পর দিন টেলিভিশনের টকশো সঞ্চালনা করেও তৈরি করেছেন নিজস্ব বলয়। এছাড়া ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক ভাবধারার অনুসারী এই পেশাজীবী নেতা সংগঠনটির শীর্ষ নেতাদের সাথেও খুব ঘনিষ্ঠ।

রাজনীতিঃ

সংস্কৃতির মাঠে সক্রিয় প্রতিবাদি এই সংগঠক শিক্ষক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, আইনজীবী, চিকিৎসক, শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবীর সংগ্রামে মাঠে ব্যাপক সম্পৃক্ত। জীবনের পদে পদে পদাঘাত তাকে করেছে সমকালীন অন্য অনেকের চেয়ে আলাদা, সফল এবং আত্মপ্রত্যয়ী।

চট্টগ্রামের রাজনীতির দুই দিকপালের সাথে রিয়াজ হায়দার চৌধুরী
চট্টগ্রামের রাজনীতির দুই দিকপালের সাথে রিয়াজ হায়দার চৌধুরী

পেশাগত ও সাংগঠনিক এসব অর্জনই কি পেশাজীবী নেতা রিয়াজ হায়দার চৌধুরীর এত কম বয়সে ‘চসিক একুশে পদক’ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বিবেচনায় ছিল, নাকি রাজনৈতিক দায়বদ্ধতায় ছিল প্রধান যোগ্যতা? -এমন প্রশ্ন উঠতেই পারে।

এই প্রশ্নের উত্তর সন্ধানকালে চসিক ও সাংগঠনিক ঘনিষ্ঠরা  বলছেন , গেল প্রায় তিন দশক ধরেই টানা সাংগঠনিক চর্চায় যুক্ত রিয়াজ। বিএফইউজে-বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের নির্বাচিত সহ-সভাপতি ছাড়াও চট্টগ্রামের নাগরিক উদ্যোগের তিনি আহবায়ক। এছাড়া প্রগতিশীল পেশাজীবী সংগঠনগুলোর সমন্বিত মোর্চা ‘পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদে’র সাধারণ সম্পাদকও এই সাংবাদিক নেতা। ‌

সাংবাদিকদের রুটি রুজির আন্দোলন  সংগ্রামে রিয়াজ হায়দার চৌধুরী
সাংবাদিকদের রুটি রুজির আন্দোলন সংগ্রামে রিয়াজ হায়দার চৌধুরী

দায়িত্বশীল সাংগঠনিক ঘনিষ্ঠরা জানান , শুধু এবারের একুশে পদক প্রাপ্তিই নয়, সব  সাংগঠনিক অর্জনই সবচেয়ে কম বয়সেই করেছেন রিয়াজ হায়দার চৌধুরী।‌ আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে এই পেশাজীবী সংগঠক বারেবারে ঝুঁকি নিয়েছেন, হামলারও শিকার হয়েছেন ।

কে এই রিয়াজ ? ফিরে দেখা :

একটু দৃষ্টি মেলা যাক পেশাজীবি নাগরিক সংগঠক ও সাংবাদিক নেতা রিয়াজ হায়দার চৌধুরীর বর্ণাঢ্য সাংগঠনিক ও পেশাগত জীবনের বাঁকে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য রিয়াজ হায়দার চৌধুরী।বাংলাদেশের সবচে বেশি প্রচারিত দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের বিশেষ প্রতিনিধি ও চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান রিয়াজ।

২০ বছর ধরে নির্বাচন করেছেন তিনি সাংবাদিকদের অঙ্গনে। প্রোগ্রামের সাংবাদিকদের মধ্যে একমাত্র রিয়াজই গত ১৮বছর ধরে প্রগতিশীল পেশাজীবী মোর্চার নেতৃত্বে রয়েছেন। এই সংগঠক চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সবচেয়ে কম বয়সেই দফায় দফায় সর্বোচ্চ ভোটে নির্বাচিত সভাপতি (২০১৬-২০১৮), দু’দফায় সাধারণ সম্পাদক (২০০৬-২০০৮, ২০১২-২০১৪) ও দু’দফায় সাংগঠনিক সম্পাদক (২০০২-২০০৩, ২০০৩-২০০৪) ।

ওয়ান-ইলেভেনে বঙ্গবন্ধু কন্যা ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা গ্রেফতার হলে তাঁর মুক্তি দাবি, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় বঙ্গবন্ধু কন্যাকে হত্যা চেষ্টার প্রতিবাদ, ১৭ আগস্ট দেশজুড়ে সিরিজ বোমা হামলার প্রতিবাদ, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আন্দোলন-গণজাগরণ ও বিএনপি-জামায়াত শিবিরের হরতাল অবরোধ নৈরাজ্য, পেট্রোল -বোমা জ্বালাও-পোড়াও আগুন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এবং চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ও জাতীয় নানা ইস্যুতে বরাবরই মাঠে থেকেছেন এই পেশাজীবী নাগরিক সংগঠক।‌

বিএনপি সরকারের আমলে বাংলাদেশের কোথাও যখন জাতির বিবেক খ্যাত সাংবাদিকদের প্রেসক্লাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি টাঙানো হতো না তখনই সাহসী কাজটা করেন সাংবাদিক নেতা ও পেশাজীবী নাগরিক সংগঠক রিয়াজ হায়দার চৌধুরী। শুধু তাই নয়, জাতির একটি ক্রান্তিকালে বঙ্গবন্ধুকন্যার নামে তিনি উদ্ভাবন করেন এক নতুন স্লোগানও।

২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে যখন দেশের রাজনৈতিক দলগুলো দু’ভাগে বিভক্ত তখন ঢাকায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিকসম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত জাতীয় পেশাজীবী সম্মেলনে চট্টগ্রাম থেকে অংশ নেয়া পেশাজীবী প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বদানকারী রিয়াজ হায়দার চৌধুরী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ‘জয় বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু’র সাথে ‘জয় শেখ হাসিনা’ যুক্ত করে একটি নতুন শ্লোগানের উদ্ভাবন করেন রিয়াজ ।

সেসময়ে দেশের এক পক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে, অন্যপক্ষ বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে অনড়। বহির্বিশ্বের চোখ ছিল এদেশের নাগরিক পেশাজীবী শক্তির দিকেও। এমনি সময়ে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত জাতীয় পেশাজীবী সম্মেলন ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ঠিক এমন অবস্থায় জাতীয় পেশাজীবী সম্মেলনটিতে রিয়াজ প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী পরিষদের সদস্য ও সারা দেশের পেশাজীবী নেতাদের সামনে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনেই জাতীয় নির্বাচনের পক্ষে জোরালো বক্তব্য তুলে ধরেন।শুধু তাই নয় সরকারের সে সময় চলমান উন্নয়ন প্রক্রিয়া ও দেশের কালিমামুক্ত করার মতো যুদ্ধাপরাধ বিচার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখায় পেশাজীবীদের পক্ষে বঙ্গবন্ধুকন্যাকে কৃতজ্ঞতাও জানান ।

চট্টগ্রামের তিনিই প্রথম সাংবাদিক নেতা, যিনি বাংলাদেশের সাংবাদিক সমাজের জন্য অসামান্য অবদান রাখায় বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তাঁর কার্যালয়ে গিয়ে কৃতজ্ঞতা ও সম্মাননা স্মারক তুলে দেন।

২০১৮ এর একাদশ জাতীয় সংসদ জাতীয় নির্বাচনের আগে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য সংগ্রহ অভিযান উপলক্ষে  ‘অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা; নৌকা পারে, নৌকাই পারবে’ শীর্ষক প্রচারপত্রটিও রচনা করেন তিনি।

২০১৮ এর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম শহরের কতোয়ালি-বাকলিয়া আসনে পেশাজীবী-নাগরিক প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের এই মনোনয়ন প্রত্যাশীর মনোনয়ন না মিললেও সেই আসনে মনোনয়ন পাওয়া জননেতা মহিউদ্দিন চৌধুরীর পুত্র ব্যারিস্টার চৌধুরী মহিবুল হাসান নওফেল সহ চট্টগ্রাম শহর ও শহরযুক্ত ৬টি আসনের প্রার্থীদের জন্য প্রচারণায় তিনি ‘পেশাজীবী-

নাগরিক স্কোয়ার্ড’ গঠন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নৌকা প্রতিকের প্রার্থীদের পক্ষে টানা প্রায় সপ্তাহব্যাপী প্রচারণা শেষে চট্টগ্রাম শহীদ মিনার চত্বরে মহাসমাবেশ করেন।

বর্ণাঢ্য পেশাগত জীবনের সিংহ ভাগ সময়েই তিনি একাধারে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় কাজ করেছেন। কখনো পূর্বকোণে  কাজ করলেও পাশাপাশি  করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কেন্দ্রিক বাংলা স্যাটেলাইট টিভি এসটিভিইউএস,(STVus),  একুশে টেলিভিশন কিংবা যমুনা টেলিভিশনে , আবার কখনো বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাজ করলেও যুক্ত ছিলেন স্যাটেলাইট টেলিভিশন নিউজ টুয়েন্টিফোরে(NEWS24)।‌

তৃণমূল থেকে উঠে আসা এ সংগঠক ২০০১এর জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এলে চট্টগ্রামের রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, হাটহাজারী, ফটিকছড়ি মানিকছড়ি বিভিন্ন এলাকায় সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মাঠে ছিলেন। এছাড়াও রামুতে বৌদ্ধ মন্দিরে হামলা-অগ্নিসংযোগ, পাথরকাটা, ফতেয়াবাদস্থ বিভিন্ন স্থানে সনাতনী সম্প্রদায়ের উপর হামলা-নির্যাতনের উপর হামলা নির্যাতনের প্রতিবাদ আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন।

২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় নাগরিক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক রিয়াজ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সমর্থিত নাগরিক কমিটির প্রার্থী এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর পক্ষে ২০০৫ , ২০১০ এর চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচনে, ২০১৫ সালে সিটি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দীনের নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন কমিটিরও আহ্বায়ক ছিলেন। নির্বাচনটিতে চট্টল মেয়রের যেন ছায়াসঙ্গীই ছিলেন।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল পরিচালনা কমিটি, কমিউনিটি পুলিশিং চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য রিয়াজ । চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)’র নগর উন্নয়ন ও পরিকল্পনা বিষয়ক নাগরিক পরামর্শক কমিটির সদস্য এবং চসিকের উদ্যোগে চট্টগ্রামের প্রথম সর্বজনীন অমর একুশে বইমেলা ২০১৯, মুজিববর্ষ চট্টগ্রাম অমর একুশে বইমেলা ২০২০ এর উপদেষ্টা, চট্টগ্রামের সর্বজনীন মুজিব জন্মশতবর্ষ উদ্্যাপন পরিষদের কো-চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম কলেজ প্রাক্তন ছাত্রলীগ পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তিনি।

শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশে গ্রেনেড হামলায় জড়িতদের গ্যেফতারের দাবীতে নাগরিক উদ্যোগের সমাবেশে
শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশে গ্রেনেড হামলায় জড়িতদের গ্যেফতারের দাবীতে নাগরিক উদ্যোগের সমাবেশে

১৯৯৪ সালে ঘাতক গোলাম আযমের লালদীঘি মাঠের জনসভা প্রতিরোধ প্রচেষ্টার পূর্বাপর সময়ে মুক্তিযোদ্ধা ছাত্রকমান্ডের এই সাহসী কর্মী শৈশব থেকেই বেড়ে উঠেছেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনাশ্রিত পরিবেশে।

পুলিশের হামলার প্রতিবাদ আন্দোলনে: ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্টেডিয়ামে সাংবাদিকদের পুলিশের বেধড়ক হামলার প্রতিবাদে ন্যায্য বিচার চেয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের বিরুদ্ধে পেশাজীবী সাংবাদিকদের সফল আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন রিয়াজ হায়দার চৌধুরী। সেসময় ঘটনার জন্য তিন মন্ত্রণালয় বৈঠকে ডেকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য হন তৎকালিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর।

সংবাদত্রসেবী ঐক্য পরিষদের সচিব (২০০৬-২০০৮)হিসেবেও সাংবাদিকদের ওয়েজ বোর্ড রোয়েদাদ আদায় ও বাস্তবায়ন ছাড়াও হকার্স এবং কম্পিউটার অপারেটরদের অধিকারের আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।

১৯৯৫ সালেই তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় দেশ চেতনার কাগজ ‘বঙ্গজ’।

সরকারের স্ববিরোধীতা-রক্তচক্ষু উপেক্ষা : ২০০১ সাল। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বিএনপি-জামায়াত জোট নেত্রী বেগম জিয়ার প্রতিশ্রুতির ব্যত্যয় তুলে ধরে রাজনৈতিক-সামাজিক ও গণমাধ্যম অঙ্গনে তোলপাড় সৃষ্টি করেন অনুসন্ধিৎসু সাংবাদিক রিয়াজ হায়দার চৌধুরী। বেগম জিয়া মহান জাতীয় সংসদে ৬ মাসের সন্ত্রাস বিরোধী কর্মসূচি ঘোষণা দেন সে বার। কিন্তু সেদিনই টপটেরর শিবির ক্যাডার নাছির কুমিল্লা কারাগার থেকে চট্টগ্রাম আদালতে একটি মামলায় হাজিরা দিতে গিয়ে পুলিশি পাহারায় চকবাজারে গোপন বৈঠক করে সহযোগী সন্ত্রাসীদের সাথে। সরকারের এই স্ববিরোধীতা রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেই সুনিপুণ অনুসন্ধানে সংবাদপত্রের পাতায় তুলে ধরেন একমাত্র রিয়াজই।

মৃত্যু পরোয়ানাঃ সাম্প্রদায়িক অপশক্তি আর প্রগতির ব্যানারে ছদ্মবেশে থাকা প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর হামলা-মামলার টার্গেট এই সাংবাদিক পথ চলেছেন মৃত্যু হুমকি উপেক্ষা করে। হামলায় আক্রান্ত হয়ে দুই বার মরতে মরতে বেঁচেও যান। যুদ্ধাপরাধি কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবির মধ্য দিয়ে সৃষ্ট গণজাগরণে চট্টগ্রামের প্রধানতম এই সংগঠক সেসময় হামলারও শিকার হন। অল্পের জন্যই প্রাণে বেঁচে যান।

২০১৮’র নভেম্বরে ফের সন্ত্রাসী হামলার শিকার হলে সে ঘটনাকে ঘিরে পেশাজীবী ও নাগরিক সমাজ আন্দোলন গড়ে তোলেন। গোপন আততায়ীরা চট্টগ্রামের বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা প্রফেসর ড. অনুপম সেন ও পেশাজীবী সাংবাদিক নেতা রিয়াজ হায়দার চৌধুরীসহ পাঁচ বিশিষ্টজনকে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেও উড়ো চিঠি দেয়।

চট্টগ্রাম সিলেট যশোর ঢাকায়ঃ চট্টগ্রামের জ্ঞানজ্যোতি ভিক্ষু হত্যাকা- ও অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরী হত্যা, সাংবাদিক শামসুর রহমান কেবল, হুমায়ূন কবির বালু, সাগর-রুনি-শিমুল হত্যার প্রতিবাদ আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। সিলেটে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে মৌলবাদিদের অপতৎপরতার বিরুদ্ধে শিক্ষাবিদ লেখক প্রফেসর ড. জাফর ইকবাল অনশন-ধর্মঘটের ডাক দিলে সেখানেও ছুটে যান এই সাংবাদিক ও পেশাজীবী নেতা। যশোরে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ আক্রান্ত হলে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে ছুটে যান সেখানেও। বিডিআর বিদ্রোহ’র নামে সেনা কর্মকর্তা ও সদস্যদের হত্যা করা হলে প্রতিবাদেও মাঠে ছিলেন তিনি। এ নিয়ে লিখেছেনও প্রচুর। এছাড়া আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যু এবং চট্টগ্রাম বন্দর কাস্টমস নিয়ে বিভিন্ন আন্দোলনেও সক্রিয় ছিলেন। শিক্ষাবিদ ড. হুমায়ুন আজাদ হত্যাকা-ের প্রতিবাদেও অংশ নেন।

এছাড়া একুশের প্রথম কবিতার জনক চট্টগ্রামের কৃতি সন্তান ‘সীমান্ত’ সম্পাদক মাহবুব উল আলম চৌধুরীর প্রয়াণের খবর শুনে তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছুটে যান তিনি। চট্টগ্রামের সংগঠক হিসেবে একমাত্র পূস্পার্ঘ্য দেন। একইভাবে নাট্যগুরু সেলিম আল দীনের প্রয়াণেও ছুটে গিয়ে যেন বনপোড়া হরিণের মত আর্তনাদ করেন এই সংগঠক। এ নিয়ে তাৎক্ষণিক লিখেনও।

চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব, চট্টগ্রাম সাংবাদিক কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি, মা- শিশু ও জেনারেল হাসপাতালের স্থায়ী সদস্য, জাতীয় সাংস্কৃতিক সংগঠন চাঁদের হাট, তারুণ্যের উচ্ছ্বাস, পূর্বাশার আলো, পরিবর্তন উপদেষ্টা সহ শতাধিক সংগঠনে নানাভাবে যুক্ত ।

প্রায় ৬০ বছরের পুরনো সংগঠন সিইউজে’র ইতিহাসে তিনিই প্রথম প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হন। অংশ নেন দুশতাধিক দেশের প্রতিনিধিত্বে ইরানে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক ন্যাম সম্মেলনে(২০১২)।

গণমাধ্যমেঃ টেলিভিশনে চট্টগ্রাম থেকে ব্যাপক জনপ্রিয় এই মুখ রোজ সকালে চট্টগ্রামের সংবাদপত্রগুলোর সংবাদ বিশ্লেষণ লাইভের যাত্রা শুরু করেও গড়ে তুলেন নিজস্ব ভক্তবলয়। গণমাধ্যমে যেন নতুন পালক যুক্ত করে এ সংবাদ বিশ্লেষণ। নেতৃত্ব, সাংবাদিকতা, গবেষণা, গদ্য পদ্যে যেন যুথবদ্ধ পথ চলেছেন রিয়াজ হায়দার চৌধুরী।

জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলিতে বিএফইউজে নেতৃবৃন্দ
জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলিতে বিএফইউজে নেতৃবৃন্দ

সিনিয়র রিপোর্টার ছিলেন চট্টগ্রামের দৈনিক পূর্বকোণে। এতে কাজ করেন প্রায় এক যুগ। দৈনিক রূপালী, দৈনিক খবর ও দৈনিক বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং সাপ্তাহিক আজকের সূর্যোদয়েও কাজ করেন । দৈনিক সংবাদ, দৈনিক প্রথম আলো , আজকের কাগজ , দৈনিক আজাদী, দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশ, দৈনিক পূর্বদেশ, খবরের কাগজ, দেশচিন্তা সহ অসংখ্য কাগজে লেখা ছাপা হয় এই কবি সাংবাদিক ও গবেষকের।

সাংবাদিক প্রশিক্ষণ কোর্সে প্রশিক্ষক হিসেবেও সমাদৃত এই সাংবাদিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস, মালয়েশিয়ার ট্যুরিজম বোর্ডসহ দেশ-বিদেশে বিভিন্ন সনদ স্বীকৃতি লাভ করেন।

কৈশোরে আবৃত্তি চর্চায় যুক্ত রিয়াজ বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্র চালু হলে সেখানে একুশের প্রথম কবিতার প্রথম একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন। কেন্দ্রের প্রথম শ্রেণির তালিকাভুক্ত এই উপস্থাপক গ্রন্থনায়ও পারদর্শী। কেন্দ্রটি চালুর আন্দোলনেও সক্রিয় ছিলেন রিয়াজ।

চট্টগ্রাম ফটো জার্নালিষ্ট এসোসিয়েশনের অনুষ্ঠানে
চট্টগ্রাম ফটো জার্নালিষ্ট এসোসিয়েশনের অনুষ্ঠানে

একাধিক গ্রন্থ প্রণেতা এই অনুসন্ধিৎসু সাংবাদিক বহু রাজনৈতিক প্রতিবেদনের জন্য আলোচিত। শুধু রিপোর্টিং নয় প্রবন্ধ, নিবন্ধ ও কাব্য প্রচেষ্টায়ও তিনি সমধিক পরিচিত।

‘মহিউদ্দিনের আইয়ের”: ওয়ান ইলেভেনের আগের কথা। ‘মহিউদ্দিনের আইয়ের’ শিরোনামে আরেকটি প্রতিবেদনে ফের তীব্র আলোড়ন তোলেন তিনি। প্রতিবেদনটিতে সে সময়ের মেয়র জননেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর তুমুল তুখোড় সাহসী অবস্থান তুলে ধরেন।-এমন অসংখ্য আলোচিত প্রতিবেদনের জনক এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও পেশাজীবী নেতা।

পর্যটন – রাজনীতিঃ একাধিক গ্রন্থ প্রণেতা এই সাংবাদিক ইউরোপ ও এশিয়ার দেশ ঘুরে রাজনীতি-পর্যটন নিয়েও দারুণ লিখেছেন। তাঁর ‘ইউরোপের পথে পথে’ শীর্ষক প্রতিবেদন দেশের সবচে বেশি প্রচারিত কাগজ ‘বাংলাদেশ প্রতিদিনে’ ধারাবাহিক প্রকাশ হলে পাঠক মহলে ব্যাপক সমাদৃত হয়।

তিনি দুইবার জাপান সফরসহ পেশাগত ও সাংগঠনিক সফর করেন জার্মানি, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, ন্যাদারল্যান্ডস, ইরান, তুরস্ক, তাইওয়ান, মালয়েশিয়া ও ভারতসহ ইউরোপ এবং এশিয়ার বিভিন্ন রাষ্ট্র।

জীবনের বৈভবঃ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান রিয়াজের জন্ম ঢাকাই হলেও ব্যাংকার পিতার বদলী সুত্রে শৈশব থেকেই বসতি চট্টগ্রামে। অবশ্য উত্তর চট্টগ্রামের হালদা পাড়ের হাটহাজারীর উত্তর মাদার্শা গ্রামের চৌধুরী বাড়িই পৈতৃক নিবাস। শহর ও গ্রামের জল হাওয়া, সমুদ্রের ঢেউ আর পাহাড়ের মৌনতা তাকে দিয়েছে জীবনের বৈভব। কৈশোর থেকে লেখালেখির প্রবল নেশা তার। আর এই নেশা তাকে সহসা পেশাদারও করে তোলে। স্নাতককালীন সময়ে যুক্ত হন পেশাদার সাংবাদিকতায়, পরবর্তীতে স্নাতকোত্তর সময়ে গতি পায় নৈমিত্তিক চাকুরীজীবন, সমানে চলে বিদ্যার্জন ও লেখার নেশা।

সান্নিধ্য: কবি শামসুর রহমান, কথা সাহিত্যিক শওকত ওসমান, কবি মাহবুব উল আলম চৌধুরী, গীতিকার আব্দুল লতিফ, কবিয়াল ফণী বড়ুয়া, কবি বেলাল মোহাম্মদ, ঢোলক বিনয় বাঁশি জলদাস, আবৃত্তিকার মৃণাল সরকার, রণজিৎ রক্ষিত, চারণ কবি মোঃ শাহ বাঙ্গালীর প্রমুখের সান্নিধ্যও এই কবি সাংবাদিকের জীবন পল্লবিত করেছে।

ভাষার লড়াই-শেখের বেটি: ভাষা সংগ্রাম ও এতে বঙ্গবন্ধুর অবদানের পথ ধরে বাংলার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে বঙ্গবন্ধু কন্যার অবদানকে এক মলাটে সংযুক্ত করে ২০১১ সালে কবি সাংবাদিক রিয়াজ হায়দার চৌধুরীর প্রকাশিত প্রথম গবেষণাগ্রন্থ ‘ভাষার লড়াই’।

২০২০ এ প্রকাশিত তাঁর কাব্য গ্রন্থ ‘শেখের বেটি’ বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাংলা ছাড়িয়ে বিশ্ব জয়ের অদম্য অগ্রযাত্রায় দেশের রাজনীতি, সমাজ মননের বদলে যাওয়া, অথচ শংকাময় জনগোষ্ঠীর হৃদয়ের উথালপাতাল ঢেউয়েরই সমাহার।এতে বাঙালি মানসের আবেগ আশাবাদ ফুটে উঠেছে। তারুণ্যের দেশচেতনা, প্রেম, স্বপ্ন ও স্বপ্ন ভঙ্গের কাব্যিক শব্দসুর সংযুক্ত হয়েছে। রাজনীতি, প্রকৃতি ও প্রেমের এক অনন্য মিশেলের চেষ্টা করেছেন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার আলোচিত মুখ রিয়াজ হায়দার চৌধুরী।

কবি সাংবাদিক রিয়াজ হায়দার চৌধুরী ‘শেখের বেটি’ গ্রন্থে শেখ হাসিনাকে সামনে রেখে তুলে এনেছেন । পুরো বাংলাদেশ, তার ইতিহাস ও ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতিকে ধারণ করেছেন কাব্য ছন্দে। রিয়াজ দেখেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যার মুখে দুঃখিনী বর্ণমালার পোড়াচিহ্ন। লক্ষ স্বজন হারার আর্তনাদ। তিনি ভাবেন, শেখের বেটি শেখ হাসিনা মানেই শোষকের রক্ত চক্ষু ডিঙ্গিয়ে যাওয়া গণমুক্তির নাম।

শব্দ শ্রমিকঃ সব ছাপিয়ে শব্দ শ্রমিক হিসেবেই রিয়াজের এগিয়ে চলা। মঞ্চ মাঠে ময়দানে সক্রিয়তা আর সাংবাদিকতা- কার্যত শব্দেরই কাজ। কারো কারো দৃষ্টিতে হয়তো এমন সব্যসাচী অবস্থান বেঢপ। ঈর্ষার কারণও । তবুও প্রগতি পথের এই সারথির অগ্রযাত্রা রয়েছে অদম্য।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.