বেরিয়ে আসছে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা কাজী রাসেলের সব অনৈতিক কর্মকাণ্ড

0

কক্সবাজার প্রতিনিধিঃ অনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং রাজনীতির অন্তরালে মাদক ও দেহ ব্যবসায় জড়িত থাকার দায়ে আটককৃত কক্সবাজার জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা কাজী রাসেল আহমেদ ও তার বান্ধবী মিমকে নিয়ে কক্সবাজার জেলা জুড়ে চলছে সমালোচনার ঝড়।

এঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ভাইরাল হয়েছে কাজী রাসেল ও মিম এর আটকের ছবি । ক্ষমতাসীন দলের বাহিনীটির নিয়ন্ত্রক কক্সবাজার জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য কাজী রাসেল কটেজ মালিক সমিতির সভাপতির অন্তরালে প্রভাব বিস্তারের নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কথা বের হতে শুরু হয়েছে।

মুখ খুলতে শুরু করেছে সাধারণ মানুষ। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও পতিতা ভিত্তিক ব্যবসার করে গড়ে তুলেছেন কোটি কোটি টাকার সাম্রাজ্য। কক্সবাজারে দেহ ব্যবসা ও ইয়াবা কারবার বন্ধের ডাক দেওয়ার এক দিন পরই ধরা পড়লেন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা কাজী রাসেল আহমদ। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট ও সরঞ্জাম। পুলিশ তাঁর সঙ্গে এক তরুণীকেও আটক করেছে।

তবে পুলিশি অভিযানের সময় আরো ১০-১২ জন তরুণী পালিয়ে যায়। কাজী রাসেল কক্সবাজার জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য। সাগরপারের আণবিক শক্তি কমিশন অফিস সংলগ্ন এলাকায় ওই স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার বাসায় আয়োজিত ইয়াবা সেবনের জলসায় ২৪ ফেব্রুয়ারী সোমবার ভোরে এ অভিযান চালায় পুলিশ।

এঘটনায় কক্সবাজার সদর মডেল থানার এসআই মোস্তাক আহমেদ বাদী হয়ে কাজী রাসেল আহমেদকে প্রধান আসামী করে ১৪ জনের নাম উল্লেখ পূর্বক অজ্ঞাতনামাসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মানব পাচার দমন আইনের ২০১২ এর ১২/১৩, পতিতালয় পরিচালনা, পতিতাবৃত্তি ও সহায়তা করার অপরাধে মামলা দায়ের করেছে। কক্সবাজার সদর মডেল থানার মামলা নং- ৮৪/২০২০,তারিখ- ২৪/০২/২০২০।
মামলার ২নং আসামী করা হয় কাজী রাসেলের সাথে আটক ঢাকা দোহার থানারধীন জয়পাড়া (দোহার থানার সামনে) মৃত আবদুল মজিদের মেয়ে আসমা হুসনা মিম (২৭)কে।

অভিযানের সময় পালিয়ে যাওয়া কাজী রাসেলের সহযোগীদের আসামী করা হয়েছে। পলাতক আসামীরা হচ্ছে, কক্সবাজার পৌরসভার ১২ নং ওয়ার্ড লাইটহাউস পাড়ার মাসুদ (৩১), লাইটহাউস পাড়ার আরিফ (২৫), নাছির (২২) ,ফয়েজ (৩৫), মহেশখালী মধ্য ঘোরকঘাটার নুরুল আমিনের ছেলে আতাউল্লাহ ছিদ্দিকী (৪২), বর্তমানে বৈদ্যঘোনা, লাইটহাউসপাড়ার মোস্তাফিজুর রহমান, লাইটহাউস পাড়ার তানিম (২৭), লাইটহাউস পাড়ার দেলোয়ার হোসেন প্রকাশ বেয়াই এর ছেলে তোফায়েল আহম্মদ রুবেল (২৭), লাইটহাউসপাড়ার বর্মাইয়া জমির (পিএমখালী ইউনিয়নের চেরাংঘর এলাকার জাফর আলমের ছেলে এরশাদ (৩০), জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের পূর্ব জোয়ারিয়া নালার মৃত হোসনের ছেলে মুবিন (৩৮), লাইট হাউসপাড়ার মতিন মিস্ত্রির ছেলে ইসমাইল হোসেন শাহীন (২৮)। আরো অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জন।

২৪ ফেব্রুয়ারী বিকালে কাজী রাসেল ও শিল্পী মিমকে কক্সবাজার আদালতে সোর্পদ করা হলে আদালত তাদেরকে কারাগারে প্রেরণ করেন।
অভিযোগ রয়েছে,নানা অপরাধে জড়িত ছিলেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা কাজী রাসেল।

পুলিশের দেওয়া তথ্য মতে, কক্সবাজার সাগরপারে রোহিঙ্গাসহ দুই শতাধিক তরুণীকে আটকে রেখে দেহ ব্যবসায় বাধ্য করতেন এই স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা। তাঁর দাপটে সাগরপারের পর্যটন ব্যবসায়ীরাও অতিষ্ঠ ছিলেন। কাজী রাসেলের এমন অবৈধ কারবারের সঙ্গী কয়েক শ দালাল। এসব দালাল হোটেলে ইয়াবা ও নারী সরবরাহ করত বলে অভিযোগ রয়েছে।

রাসেল ও তার সহযোগীরা
রাসেল ও তার সহযোগীরা

পুলিশ ও এলাকাবাসী জানিয়েছে, সাগরপারের হোটেল-মোটেল জোনে জমির প্লট ও ফ্ল্যাট দখল করে দীর্ঘদিন ধরে দেহ ব্যবসা ও ইয়াবার কারবার চলে আসছে। এসব অপরাধে জড়িত রয়েছে দুটি বাহিনী। এদের একটি ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক, অন্যটি বিএনপি সমর্থিত সন্ত্রাসী বাহিনী।

ক্ষমতাসীন দলের বাহিনীটি নিয়ন্ত্রক স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা কে এই কাজী রাসেলঃ

অভিযোগ রয়েছে, সাগরপারের পর্যটন এলাকায় সব ধরনের অপরাধের নিয়ন্ত্রণ করে আসছে তাঁর বাহিনীর সন্ত্রাসীরা।
কক্সবাজারে দেহ ব্যবসা ও ইয়াবা কারবার বন্ধের ডাক দেওয়ার এক দিন পরই ধরা পড়লেন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা কাজী রাসেল আহমদ।

তার অনৈতিক কর্মকান্ডের নেপথ্যের কাহিনি গণমাধ্যমে প্রকাশের পর স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা কাজী রাসেলের কথা এখন ‘টপ অফ দ্যা টাউন’। অপরদিকে, অনৈতিক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়া কাজী রাসেলের ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক কায়সারুল হক জুয়েল বলেন, ‘কোনো অপরাধী দলের নেতা হতে পারে না। অপরাধ করলেই শাস্তি পেতে হবে।’

স্থানীয় রাজনীতিবিধ ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একেবারে শুন্য থেকে কাজী রাসেলের উত্তান শুরু। শৈশব থেকেই চাঁদাবাজি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও পর্যটকদের ব্ল্যাকমেইল ছিল রাসেলের প্রধান পেশা। দূরদর্শী চতুর ও মাস্টারমাইন্ড কাজী রাসেল রাজনীতিবিদদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.