প্রত্যেকের কিছু না বলা স্মৃতি থাকে-যা লেখনীর মাধ্যমে প্রকাশ করা যায়ঃ নীলিমা শামীম

0

দিলীপ তালুকদারঃ নীলিমা শামীম চট্টগ্রাম সাহিত্যাঙ্গনের একটি পরিচিত নাম। সংসার জীবন স্বামীর ব্যবসার পাশাপাশি তিনি কাব্য চর্চা করে যাচ্ছেন নিয়মিত। নীলিমা শামীমার জন্ম চট্টগ্রাম শহরের বার আউলিয়ার পূন্যভূমির সবুজ শ্যমল লীলাভুমির সৌন্দর্য মন্ডিত আগ্রাবাদ পাঠানটুলিতে। পিতা মরহুম আলহাজ্জ্ব নুরুল আলম, মাতা মরহুম ইসলামা খাতুন। স্বামী আলহাজ্ব মাহবুব আলম একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। স্বামী, সন্তান, সংসার এবং স্বামীর দৈনন্দিন কাজ কর্মের মাঝেই প্রায় অর্ধ্যেক সময় পার করে এসেছেন তিনি। স্বামীকে নিজের বন্ধুর মতই মনে করেন তিনি।

তার এক ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে ছেলে রিদওয়ান রেজা রিয়াদ CCPC থেকে ‍ SSC, IPSC থেকে HSC ও IUB থেকে BBA, MBA কমপ্লিট করেছে। এক মেয়ে আফসানা আরফিন মিশা CCPC থেকে SSC, IPSC  থেকে HSC, Gespremier University Department of law  -LLB কমপ্লিট করে এখন’ বার এড ল’ এর প্রস্তুতি নিচ্ছে। এক দাদু শারফারাজুল শাহিরকে নিয়ে আনন্দের সংসার জীবন পার করছেন এ লেখক। তিনি লেখালেখি করেন সেই ছোট্ট বেলা থেকে।

মাঝপথে সব বন্ধ হয়ে গেলেও কয়েক বছর আগে পুনরায় লেখালেখি শুরু করেন। তখন বিশিষ্ট ছড়াকার শ্রদ্বেয় রাশেদ রউফ ভাইয়ের অনুপ্রেরণায় ও আজাদী পত্রিকায় সুখে দুঃখে ফেইসবুক পাতায় লেখা প্রকাশ পেলে আরো আনন্দিত ও পুলকিত হন বলে জানান তিনি। আজকের সূর্যোদয়ের প্রধান সম্পাদক খোন্দকার মোজাম্মেল হক ও আয়শা হক শিমু (রাশেদ রউফের স্ত্রী) উনাদের পরামর্শ উপদেশ আমার লেখালেখির জীবনে অন্যতম পাথেয়। স্বামীর ব্যাবসার সাথে জড়িত থেকে সহযোগীতা করেন তিনি।

তিনি বলেন, চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী আঞ্চলিখ ভাষা খুব প্রিয়। এই সবুজ শ্যামল পাহাড় ঘেরা বনাঞ্চলে তার জন্ম, বাস ও বেড়ে উঠা। নগরীর প্রান কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত আগ্রাবাদে বাবা মা ও বড় ভাই- বোনদের মধ্যে বেড়ে ওঠা। সাহিত্য সংস্কৃতি আমার রক্তে মিশে আছে। আমার মা প্রতিদিন পত্রিকা, ধর্মীয় পুস্তক ও মহিয়সীদের জীবনী পড়তেন।

কবি ছড়াকার রাশেদ রউফ এর সাথে
কবি ছড়াকার রাশেদ রউফ এর সাথে

পাশের লাইব্রেরী থেকে বই এনে পড়তেন। মায়ের বই পড়া থেকে আমিও রপ্ত করি বই পড়া এবং লেখা লেখি। এ পর্যন্ত আমার ৯টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এর মধে উপন্যাস ‘প্রনয়ের শেষ বিকাল’, কাব্যগ্রন্থ -‘পড়ন্ত বিকেলে ভালোবাসা’, ‘ভালোবাসায় হাত বাড়িয়ে’, ‘আগুনে লেখা বসন্ত কাবিন’, ‘তুমি হীনা আমি’, ‘স্মৃতির আঁচাড়ে’,‘ হৃদয়ের কথা’। এবার একুশে বইমেলা উপলক্ষে বের হয়েছে, ‘গদ্য প্রেমালাপ’, ‘পঞ্চমাঞ্জলির দ্বীপ শিখা’, ছড়া গ্রন্থ ‘ঝাপুর ঝুপুর ছড়ার নূপুর’ নামক ৩টি বই। গত সপ্তাহে স্বনামধন্য এ লেখিকার সাথে কথা হয় চট্টগ্রামে সিটি কর্পোরেশন আয়োজিত একুশে বই মেলায়। তার একটি সাক্ষাৎকার নেওয়া হয় যা আজকের সূর্যোদয়ের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কবিতা লেখতে ভালো লাগে। মানুষ তার জীবনের অনেক কিছু বলতে পারে না বা ভাষায় প্রকাশ করতে পারে না। কিন্তু লেখার মাধ্যমে তা প্রকাশ করা যায়। তবে কবিতাটা আমার একান্তই ব্যক্তিগত।

প্রিয় কবি’র ব্যাপারে তিনি বলেন, অনেককেই বলতে পারবো না। সত্যজিৎ রায় আমার সবচেয়ে প্রিয়। আমার মা উনার বই পড়তেন নিয়মিত। তখনকার সময়ে সব জায়গায় বই পাওয়া যেত না। আমাদের পাঠানটুলি এলাকায় একটি লাইব্রেরী ছিল। ওখান থেকে ভাড়া করে এনে আমার মা বই পড়তেন। ছোটবেলায় আমাদের গৃহশিক্ষকের মাধ্যমে আমার মা বই আনাতেন। আমার বাবাও বই পড়তেন। তবে আমি ছোটবেলা থেকে দেখেছি আবার বাবা সাত সকালে চট্টগ্রামের দৈনিক পত্রিকা আজাদী ও পূর্বকোণ পড়ে ফেলতেন। এটা উনার দৈনিক রুটিন ছিল। আর যাই হোক পত্রিকা পড়তেই হতো। সেটার স্বীকৃতিও বাবা পেয়েছিলেন। দৈনিক পূর্বকোণ থেকে পাঠক হিসেবে পুরুস্কারও পেয়েছিলেন।

অধিকাংশ কবির কবিতাই প্রেম নির্ভর, নারী বা পুরুষের উদ্দেশ্যে লেখা এমন একটি প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা মানুষের একটি মনের খোরাক। লেখতে বসেছে হঠাৎ স্মৃতির কোনায় এসে গেছে অনেক স্মৃতি। প্রত্যেকের কোন না কোন স্মৃতি থাকে যা হয়তো বলা হয়না। সেটা লেখনীর মাধ্যমে প্রকাশ করা যায়।

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একজন লেখকের প্রধান গুণ হচ্ছে, তার উদারতা থাকতে হবে। জগতের চার দিক ভালো মন্দ মিলিয়ে তার জগৎ। ভালোটাকে ভালো দেখতে হবে এবং মন্দটাতে তার চোখে ভালো দেখতে হবে। মানুষ মাত্রই ভুল। আমাদের লেখনীতে ভুল থাকতে পারে। তিনি বলেন, বর্তমানে যারা লেখেন ভালই লেখেন, মানুষের দিন মান পরিবর্তন হচ্ছে, যুগের পরিবর্তন হচ্ছে, মানুষের রুচিবোধেরও পরিবর্তন হচ্ছে।

এই আধুনিক যুগে পাঠকের মন জয় করাটাও একটা বড় ব্যাপার। আমাদের অগ্রজদের দেখে এগিয়ে যাওয়া উচিৎ। কবিতাতে মানুষ অনেক কিছু পেয়েছে। কবিতা গল্পে পাঠক যেটা চায় সেটা অনুধাবন করাটাই একজন লেখকের বড় স্বার্থকতা। আমার চোখে তেমনই একজন নতুন প্রজন্মের লেখক সাদাত হোসাইন। এবারও উনার বই বের হয়েছে। বর্তমান সামাজিকচিত্র নিয়ে তিনি বলেন, সামাজিক দায়বদ্ধতা, অবহেলিত নারীদের পাশে দাঁড়ানো, বাল্য বিবাহ ও শিশুশ্রম বন্ধ করা উচিত।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.