ঘরে থেকেই যুদ্ধ জয়

মজুদদারদের সতর্কবার্তা

0

রিয়াজ হায়দার চৌধুরী,সিটি নিউজ : দশ দিন সরকারি ছুটি পেয়ে সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই যখন দলে দলে যখন মানুষ ঢাকা ছাড়ছেন, দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির পর যখন রাজপথে হুমড়ি খেয়ে পড়েন নেতাকর্মীরা, তখন বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বললেন , ‘ঘরে থাকুন। ঘরে বসেই নতুন এই যুদ্ধ মোকাবেলা করতে হবে।’

জাতির উদ্দেশ্যে প্রদত্ত ভাষণে বঙ্গবন্ধুকন্যা বৈশ্বিক এই দুর্যোগে বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে অর্থনৈতিক প্রভাবের আশঙ্কাও প্রকাশ করেন ।

পণ্য মজুদদারদের বিরুদ্ধে স্পষ্ট সতর্কবার্তা উচ্চারণ করলেন প্রধানমন্ত্রী। ‌ঘোষণা করলেন রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য ৫হাজার কোটি টাকার ‘বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ’, যার মধ্য দিয়ে শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন প্রদান করা হবে। ‌
প্রধানমন্ত্রী চলতি দুর্যোগে কার্যত একটি ‘জাতীয় ঐক্য’ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে মনোবল অটুট রাখা, নির্দেশনা পালনের জন্যও বলেন । ‌

তিনি বলেন,যুগে যুগে জাতীয় জীবনে নানা সংকট আসে। ঐক্যবদ্ধতার মাধ্যমে সংকটের সমাধান হয়। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নিশ্চয়ই দেশবাসী এই দুর্যোগ থেকে দ্রুত পরিত্রাণ পাবেন।’

প্রধানমন্ত্রী প্রসঙ্গক্রমে ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে জনতার যে যুদ্ধ, সেই যুদ্ধজয়ের কথাটিও মনে করিয়ে দিলেন।

তিনি আরো বলেন, এই সময়ে আমাদের সহনশীল এবং সংবেদনশীল হতে হবে। কেউ সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করবেন না। বাজারে কোন পণ্যের সংকট নেই।

প্রধানমন্ত্রী আশ্বস্ত করে বলেছেন, দেশের অভ্যন্তরে এবং বাইরের সঙ্গে ‘সরবরাহ চেইন’ অব্যাহত রয়েছে।অযৌক্তিকভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর দাম বৃদ্ধি করবেন না ।
তিনি বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে অনেক মানুষ কাজ হারিয়েছেন। তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে । নিম্ন আয়ের ব্যক্তিদের ‘ঘরে ফেরা কর্মসূচি’র আওতায় নিজ নিজ গ্রামে সহযোগিতা প্রদান করা হবে । গৃহহীনদের ঘর ও খাদ্যের জন্য নগদ অর্থ সরবরাহ করা হবে । এজন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

ভাসানচরে ১লাখ মানুষের থাকা ও কর্মসংস্থানের উপযোগী আবাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সেখানে কেউ যেতে চাইলে সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে । বিনামূল্যে ভিজিডি, ভিজিএফ ,১০ টাকা মূল্যে চাল সরবরাহ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে ।

সংকট মোকাবেলায় কিছু ‘আপদকালীন পদক্ষেপে’র কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগামী জুন মাস পর্যন্ত কোন গ্রাহককে ‘ঋণ খেলাপি’ না করার ঘোষণা দিয়েছে। রপ্তানি আয় আদায়ের ঘোষণা দুই মাস থেকে বৃদ্ধি করে ছয় মাস করা হয়েছে। আমদানি ব্যয় মেটানোর সময়সীমা বৃদ্ধি করে ছয় মাস করা হয়েছে । মোবাইল ব্যাংকিংয়ে আর্থিক লেনদেনের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে।

বিদ্যুৎ পানি ও গ্যাস বিল পরিশোধের সময়সীমা ছাড়া জুন মাস পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। এনজিওগুলোর ঋণ পরিশোধের সময় বাড়ানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমগ্র বিশ্ব কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে ।‌ তবে যেকোনো কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য আমাদের সরকার সচেতন রয়েছে ।

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, আমাদের এখন কৃচ্ছতা সাধনের সময়।যতটুকু না হলে নয়, তার অতিরিক্ত কোনো ভোগ্য পণ্য কিনবেন না। মজুদ করবেন না। আর নিম্ন আয়ের মানুষকে কেনার সুযোগ দিন । আমরা খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এ বছর উৎপাদন বাম্পার ফলন হয়েছে। ১৭ লক্ষ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য মজুদ’ বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। ‌
তিনি বলেন, দুর্যোগের সময় মনুষ্যত্বের প্রকাশ পায় ।

বিত্তবানদের সহযোগীতার হাত প্রসারিত করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাঙালি বীরের জাতি । দুর্যোগ সম্মিলিতভাবে মোকাবেলা করতে হবে। ১৯৭১ সালে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমরা শত্রুর মোকাবেলা করে বিজয়ী হয়েছি। করোনাভাইরাস মোকাবেলা একটি যুদ্ধ। এই যুদ্ধে আপনার দায়িত্ব , ঘরে থাকুন।

বন্ধু কন্যা আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন,’আমরা সম্মিলিতভাবে এই যুদ্ধজয়ে সফল হব , ইনশাআল্লাহ।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণের শুরুতেই ২৫ মার্চের গণহত্যার শিকার শহীদ ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণ করেন। তিনি তাঁর ছোট ভাই ১০ বছরের শিশু রাসেলসহ ৭৫ এর ১৫ আগস্টের শহীদদের স্মরণ করে বলেন,

বঙ্গবন্ধু যখন দেশ পুনর্গঠন এর কাজে নিমগ্ন, ঠিক তখনই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা বিরোধীরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে।‌

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছোট-বড় সব দেশেই আজ নোবেল করোনা নামক এই প্রাণঘাতী ভাইরাসে আক্রান্ত ।এই পরিপ্রেক্ষিতে জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করেই এবারের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসেও জনসমাগম হয় এমন অনুষ্ঠান থেকে বিরত থাকার জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। একই কারণে ‘মুজিব বর্ষ’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জনসমাগম না করে টেলিভিশনের সম্প্রচার করা হয়।

৪৮ সাল থেকে ৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন ৬৬ ছয় দফা, ঊনসত্তরের গণআন্দোলন ৭০এর নির্বাচনের প্রেক্ষাপটসহ সামগ্রিক বর্ণনা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম’ বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। বাঙালীর মুক্তির সংগ্রাম স্তব্ধ করে দিতে ২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালির ওপর অতর্কিত হত্যাকাণ্ড শুরু করে।

জাতির পিতা ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেন । বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাঙালি জাতি সশস্ত্র সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে ।বিজয় ছিনিয়ে আনে। জাতির পিতা কারাবন্দি থেকে ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে আসেন। স্বাধীনতার পর মাত্র সাড়ে তিন বছর হাতে সময় পেয়েছিলেন তিনি।

প্রায় এক কোটি শরণার্থীকে দেশে ফিরিয়ে এনে পুনর্বাসন, শহীদ পরিবার , ধর্ষিত নির্যাতিতদের পুনর্বাসন করা সহ সমস্ত কাজেই তিনি এই সাড়ে তিন বছরে করেন ।

জাতির পিতা বলতেন, “আমার জীবনের একমাত্র কামনা বাংলার মানুষ যেন উন্নত জীবনের অধিকারী হয়।”

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.