মশা নিধনে নতুন উদ্যোমে কাজ শুরু করার আহবান মেয়রের

0

সিটি নিউজঃ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক)পরিচ্ছন্ন কর্মীদেরকে মশা ও এডিস মশার প্রজনন স্থান ধ্বংস করার লক্ষ্য নিয়ে নতুন উদ্যোমে কাজ শুরু করার আহবান জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আলহাজ্ব আ জ ম নাছির উদ্দীন।

তিনি আজ বৃহষ্পতিবার দুুপুরে টাইগারপাসস্থ চসিক সম্মেলন কক্ষে চসিক পরিচ্ছন্ন ওয়ার্ড সুপারভাইজারদের সভায় এই আহবান জানান।

তিনি বলেন, নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে ৪ টি হ্যান্ড স্প্রে মেশিনের মাধ্যমে মশা ও এডিস মশার প্রজনন স্থানে লারভিসাইড ঔষধ ছিটানো হবে। এই লক্ষ নিয়ে ইতোমধ্যে ১৫০ টি নতুন হ্যান্ড স্প্রে মেশিন ক্রয় করা হয়েছে। ১৬৪ জন পরিচ্ছন্ন কর্মী একযোগে প্রতিদিন ৪১ ওয়ার্ডে নালা-নর্দমাসহ বাড়ীর আঙ্গীনায় ওষুধ ছিটাচ্ছে।

মেয়র বলেন, একাজে নিয়োজিত প্রত্যককে স্বচ্ছতা ও সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে।  এতে কোনো ধরণের গাফলতি সহ্য করা যাবে না। কোনো ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এতে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে তিনি সংশ্লিষ্ঠদেরকে সর্তক করে দেন।

তিনি বলেন, চসিকের হাতে মশা এবং মশার লার্ভা ধ্বংসকারী পর্যাপ্ত ওষুধ রয়েছে। প্রয়োজনে আরও ঔষুধ কেনা হবে। তাই মশা এবং চিকনগুনিয়া ও ডেঙ্গু রোধে প্রতি ওয়ার্ডের ঝোপঝাড় পরিষ্কারকরণ ও নালা-নর্দমায় যেখানে মশা জন্ম হয় সেখানে ওষুধ ছিটানো হবে।

এই প্রসঙ্গে মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর নির্দেশনার কথা উল্লেখ সিটি মেয়র বলেন, মশা নিধন কার্যক্রম শতভাগ নিশ্চিতকরণের ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। তারই প্রেক্ষিতে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে প্রতি ওয়ার্ডে জীবাণুনাশক পানি ছিটানোর পাশাপাশি মশা নিধনে ল্যারভিসাইড ওষুধ ছিটানো হ্েচছ। এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার থেকে প্রতিটি ওয়ার্ডে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। এ কাজে নিয়োজিত কর্মীরা করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে জীবাণুনাশক ঔষুধও ছিটাচ্ছে। মেয়র বলেন আমরা কিছু লার্ভিসাইড (মশার ডিম ধ্বংসকারী) ওষুধ সংগ্রহ করেছি। এগুলো দিয়ে নগরীতে বিভিন্ন ওয়ার্ডে লার্ভিসাইড ছিটাচ্ছি। মশার উপদ্রব যতদিন কমবে না ততদিন পর্যন্ত এই ঔষুধ ছিটানো হবে বলে তিন উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন নগরীতে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। নগরীর প্রধান প্রধান খালের মুখে বাঁধ দেওয়ায় পানি জমে আছে। সেইখানে মশার জম্মের উবরস্থান। তাই এ প্রকল্পের দায়িত্ববান ব্যক্তির সঙ্গে আগেও কথা বলেছি। আবারো বলব । সেটা হচ্ছে ওনাদের যে প্রকল্প চলমান আছে সেখানে পানি স্থির হয়ে আছে এবং সেখানে মশা প্রজনন হচ্ছে। ওনারা (সেনাবাহিনী)আমাদেরকে একটা ধারণা দিয়েছেন পাইপের মাধ্যমে পানিগুলো অপসারণ করবেন।

এর বাইরে আমরাও কার্যকর পদক্ষেপ নেব। মেয়র আরো বলেন আগামী কয়েক মাস পর এডিস মশার বংশবৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত সময় হবে। ভারী বর্ষন কিংবা থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ার কারণে বাড়ীর আশপাশ, ফুলের টব, আবর্জনা ফেলার পাত্র, প্লাষ্টিকের পাত্র, পরিত্যক্ত টায়ার, প্লাষ্টিকের ড্রাম,মাটির পাত্র, বালতি, টিনের কৌটা, ডাবের খোসা, নারিকেলের মালা, ব্যাটারী শেল, পলিথিন,চিপসের প্যাকেট এবং নালা-নর্দমায় জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে এডিস মশার প্রজননের স্থান। এক্ষেত্রে জনসচেতনতাকে সমাধিক গুরুত্ব দিলেন সিটি মেয়র। তিনি বলেন বর্ষাকালে কোনো পাত্রেই পানি জমিয়ে রাখা যাবে না। তার ওপর বৃষ্টির পর বাড়ীর আশপাশে পানি জমিয়ে থাকলে তাও সংশ্লিষ্টদের পরিস্কার করে ফেলতে হবে। জমে থাকা এবং স্বচ্ছ পানি ছাড়া এডিস মশা বংশবৃদ্ধি করতে পারে না। এসব বিষয়ে বিশেষ নজর দিয়ে চসিক পরিচ্ছন্ন বিভাগকে দায়িত্বশীল ভুমিকায় অবতীর্ন হতে বললেন সিটি মেয়র।

ডেঙ্গু রোগ সম্পর্কে নগরবাসীর মধ্যে জনসচেতনা সৃষ্টি কথা উল্লেখ করে সিটি মেয়র মশা – মাছির উপদ্রপ এবং মশা উৎপত্তি রোধে দীর্ঘমেয়াদী ওষুধ ছিটানোর ক্রাস প্রোগাম, মাইকিং, প্রচার পত্র বিলি, পত্র-পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রদান, শিক্ষা প্রতিষ্টান সমূহে সচেতনামূলক কর্মসূচি গ্রহন এবং নালা – নর্দমা পরিস্কারসহ সহ সংশ্লিষ্টদের বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহনের নির্দেশ দেন। ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে নগরবাসীর সহযোগিতা কামনা করে মেয়র বলেন, পরিষ্কার,স্বচ্ছ ও বদ্ধ পানি এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র। তাই বাসাবাড়ির আশপাশে ডাবের খোসায়, ফুলের টবে, ছাদে, ফ্রিজের নিচের ট্রেতে যাতে পানি জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

প্রাপ্তবয়স্ক মশা নিধনের জন্য এডাল্টিসাইড এবং মশার লার্ভা (ডিম) ধ্বংসের জন্য লার্ভিসাইড ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। ফগার মেশিনের সাহায্যে এডাল্টিসাইড ওষুধ ধোঁয়া আকারে ছিটানো হবে। হ্যান্ড স্প্রে মেশিনের সাহায্যে ১০ লিটার পানিতে ১০ সিসি লার্ভিসাইড ছিটানো হবে। চসিকে ১১০টি জার্মানির ফগার মোশিন ও ৩০০টি হ্যান্ড স্প্রে মেশিন রয়েছে। চসিকের এই উদ্যোগে নগবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন মেয়র। এই সময় চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শফিকুল মান্নান সিদ্দিকী, তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সুদীপ বসাক, উপ প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মোরশেদুল আলম চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে নগরীর ৮ নং শুলকবহর ওয়ার্ড এলাকাবাসীর মাঝে ২১ হাজার পিছ সাবান বিতরণ করেছেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। সরকার গৃহীত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবন মান উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় হাত ধোয়া কর্মসূচি বাস্তবায়নে এই উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি ওয়ার্ডের খুলশী তুলাতলী নূর ও মদিনা মহল্লাবাসীর মাঝে সাবানগুলো বিতরণ করেন। এসময় কাউন্সিলর মোরশেদুল আলমসহ প্রকল্পের ক্লাস্টার কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.