চট্টগ্রামে বিশ্বমানের হাসপাতাল নির্মাণে প্রয়োজন উদ্যোগ

1

মহসীন কাজী : চট্টগ্রামে বিশ্বমানের হাসপাতাল নির্মাণে উদ্যোগ নিলে এগিয়ে আসবেন শিল্পপতি থেকে নজিম উদ্দিনের মতো ভিখারিও।

উদ্যোগের অভাবে বিশ্বময় পরিচিত, হাজার বছরের প্রাচীণ শহর চট্টগ্রামে একটি উন্নত হাসপাতাল গড়ে উঠেনি। যদিও চট্টগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলনে জড়িতরা সারাবছর এ দাবি নিয়ে গলা ফাটিয়ে যান। কিন্তু চট্টগ্রাম নিয়ে যাদের রাজনীতি, এই শহর বন্দরে যাদের আছে ব্যবসা বাণিজ্য তারা কেউ এ যাবতকালে এর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছেন বলে মনে হয়নি।
দুই বছরেরও বেশি আগে চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু। বাস্তবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। একজন ভিসি থাকলেও অফিস করেন ঢাকায়। অবকাঠামোগত উন্নয়ন বলতে কিছু লোকবলে সীমাবদ্ধ। কাজের কাজ না হলেও প্রকল্প কাজে দরপত্র কীর্তি সবারই জানা।

জেনারেল হাসপাতাল প্রায় দেড়শ বছরের পুরনো স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র। স্বাস্থ্য শিক্ষার সূতিকাগার। চমেক প্রতিষ্ঠার আগে স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল এটি। এক পর্যায়ে এটি জীর্ণ দশায় পড়ে। অনেক আন্দোলনের পর আবার পুরনো রূপ ফিরে পায়। জেনারেল হাসপাতালকে পূর্ণাঙ্গ রূপদানের দাবিতে চট্টগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলনের পরিচিত মুখ কালাম চৌধুরী কাফনের কাপড় জড়িয়ে দিনের পর দিন আন্দোলন করেন।
জেনারেল হাসপাতাল এ সরকারের সুদৃষ্টির কারণে পূর্ণাঙ্গ রূপ পেলেও সমস্যা ছাড়ছে না। নানাবিধ সমস্যা এখনও থেকে গেছে। ডাক্তার, নার্স ও জনবল সংকট লেগেই আছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ এই বিভাগের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল। এতদঅঞ্চলের দেড় কোটিরও বেশি মানুষের সেবা দিতে প্রধান ভূমিকায় আছে। জেনারেল হাসপাতালকে কার্যকর করা হলে চমেকের চাপ অনেকটা কমত।

অন্যদিকে চট্টগ্রামের কিছু মানবিক মানুষের চেষ্টায় গড়ে উঠা মা ও শিশু হাসপাতাল চিকিৎসা সেবায় ব্যাপক অবদান রাখছে। এ হাসপাতালে এখানকার বিশাল জনগোষ্ঠী সবধরণের স্বাস্থ্য সেবা পেয়ে আসছে। সেবা বাড়াতে সেখানে ব্যাপক কর্মযজ্ঞও দৃশ্যমান।

এছাড়া বাকি স্বাস্থ্য সেবার পুরোপুরিই প্রাইভেট ক্লিনিক নির্ভর। এখানে সেবার নামে মূলতঃ গলাকাটা কারবারই হয়। এ সেক্টরে সম্ভাবনা থাকা সত্বেও পূর্ণাঙ্গ কোন স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র গড়ে উঠেনি।

সে কারণে এখানকার মানুষের আয় ভেদে পাশ্ববর্তী দেশসহ অন্যান্য দেশে চিকিৎসা নির্ভরতা বেশি। এমনও অনেকে আছেন কাশিটা একটু জেরে আসলে বিদেশে দৌঁড়ান।

সাম্প্রতিক করোনা মহামারির পর চট্টগ্রামে স্বাস্থ্য খাতের নানা সংকট আলোচনায় আসছে। বিশ্বময় মহামারির কারণে বিদেশে চিকিৎসার পথ বন্ধ হওয়ায় সংকটটি এখন আলোচনার শীর্ষে। বলা হচ্ছে, সংকটের শীর্ষে এখানকার স্বাস্থ্য সেবা।

এস আলম পরিবারের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা মোরশেদুল আলমের করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর পর স্বাস্থ্য সেবায় সংকটের বিষয়টি নিয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বলা হচ্ছে, মাত্র পাঁচ লাখ টাকা দামের একটি ভেন্টিলেটর সাপোর্টের অভাবে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। আইসিইউ সাপোর্ট পেতেও সময় লেগেছে। সিট খালি না থাকায় আইসিইউতে থাকা ছোট ভাইয়ের সিটে নিয়ে তাকে চিকিৎসা দিতে হয়। সেখানে ভেন্টিলেটর সাপোর্ট না পাওয়ায় মৃত্যু হয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্নজন দাবি করছেন।
বলা হচ্ছে, চট্টগ্রামে যেভাবে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে তার তুলনায় হাসপাতাল সংকট বিদ্যমান। এখন করোনার চিকিৎসা হচ্ছে, জেনারেল হাসপাতাল, ফিল্ড হাসপাতাল ও চমেক হাসপাতালে। প্রাইভেট ক্লিনিক মালিকদের ব্যবস্থাপনায় হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হলেও সেখানে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হয়নি। এটি চালু নিয়ে শোনা যায় নানা টালবাহানার কথা। প্রথমে সরকার ১২ টি প্রাইভেট ক্লিনিককে করোনা রোগীর চিকিৎসার জন্য নির্ধারণ করা হলেও ক্লিনিক মালিকদের অনীহায় সেখানে চিকিৎসা সেবা চালু সম্ভব হয়নি। অথচ করোনার অজুহাতে প্রায় সকল ক্লিনিকের সেবা কার্যক্রম এখন বন্ধ।

এ ত্রাহি অবস্থায় চট্টগ্রাম থেকে কেউ উদ্যোগ নিলে এখনো এখানে আধুনিক সুবিধা সম্বলিত হাসপাতাল চালু করা সম্ভব। যেখানে অর্থ যোগানে শিল্পপতিরা যেমন এগিয়ে আসবেন তেমনি সর্বস্ব উজাড় করে দেবেন নজিম উদ্দিনের মতো ভিখারিও।

এখন চট্টগ্রামবাসী উদ্যোগীদের চায়। যাদের হাতধরে গড়ে উঠবে একটি বিশ্বমানের হাসপাতাল। যেখান থেকে ভেসে উঠবে জীবনের জয়গান। করোনা জয়ের স্লোগান।

এগিয়ে আসুন বীর চট্টলার নেতা, মন্ত্রী, মেয়র, এমপিরা। আসতে পারেন চট্টগ্রাম চেম্বারসহ ট্রেড বডির নেতৃস্থানীয়রা। কেউ না থাকলেও আপনাদের হাত শক্তিশালী করতে আছেন ৭০ লাখ নগরবাসী।
লেখক : বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) যুগ্ম-মহাসচিব।

এ বিভাগের আরও খবর
1 Comment
  1. Rahema khatun kajol says

    It is really a crying need for the residents of chattogram division. Please take early initiative all dear pioneers to establish such a hospital so that the inhabitants can get proper medical treatment for their patients and also the facility of reduced rate for the poor people.Our lord, the beneficent, the kind Allah (swt) loves them who love His creation.

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.