চট্টগ্রামে কাল থেকে উত্তর কাট্টলী লকডাউন

0

সিটি নিউজ ডেস্ক : চট্টগ্রামে করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে রেড জোন ঘোষণার পর নগরীর ১০ নম্বর উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডে কার্যকর হচ্ছে লকডাউন।কাল মঙ্গলবার রাত ১২টা থেকে শুরু হয়ে পরবর্তী ২১ দিন লকডাউন বহাল থাকবে। এ সময়ে ওই এলাকায় কেউ প্রবেশ ও বের হতে পারবে না। সরকারি-বেসরকারি অফিস থাকবে সাধারণ ছুটির আওতায়। খাবার ও ওষুধসহ সব ধরনের দোকানপাট বন্ধ থাকবে। চলবে না গণপরিবহন, থাকবে না স্টপেজও।

উত্তর কাট্টলী ছাড়া আরো ৯টি ওয়ার্ডকেও রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সেখানেও লকডাউন কার্যকর হবে। সিটি কর্পোরেশন, জেলা প্রশাসন, সিএমপি ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর লকডাউন নিশ্চিতে কাজ করবে। গতকাল রোববার অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম শহরে করোনা প্রতিরোধে গঠিত ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় লকডাউন কার্যকরের সিদ্ধান্ত হয়েছে। কমিটির সভাপতি সিটি মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, আমরা রেড জোনের তালিকা সিটি কর্পোরেশনের কাছে হস্তান্তর করেছি। করোনা প্রতিরোধে গঠিত কমিটির সভাপতি মেয়র মহোদয় সিদ্ধান্ত দেবেন কোন এলাকায় প্রথম কার্যকর করবেন। তবে এমন না যে, বেশি সংক্রমিত ওয়ার্ডে প্রথমেই কার্যকর করতে হবে।

সিটি কর্পোরেশনের ভূমিকা : লকডাউন কার্যকরের সামগ্রিক বিষয়ে সিটি মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীন আজাদীকে বলেন, সেন্ট্রাল কমিটি রেড জোন চিহ্নিত করেছে। আমরা সেখানে লকডাউন কার্যকর করব। ২১ দিন লকডাউন থাকবে। এই সময়ে সেখানে কেউ ঢুকতে এবং বের হতে পারবে না। সরকারি-বেসরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত সব অফিস সাধারণ ছুটির আওতায় থাকবে। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, খাবারের দোকান, এমনকি ওষুধের দোকানও বন্ধ থাকবে। প্রত্যেককে অবশ্যই ঘরে থাকতে হবে। লকডাউন বাস্তবায়নে জড়িতরা সেখানে চলাচল করতে পারবে। আমরা কন্ট্রোল রুম চালু করব। কারো কোনো কিছু দরকার হলে সেখানে জানাতে পারবে। ক্রয় ক্ষমতা নেই এমন পরিবারকে আমরা খাদ্য সহায়তা দেব। সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে মহল্লায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন করা হবে। এই নিয়ন্ত্রণ কক্ষের নির্দিষ্ট টেলিফোন নম্বরে কল করলে এলাকাবাসীর চাহিদা মোতাবেক ন্যায্য বাজারমূল্যে খাদ্য, ওষুধপত্রসহ দৈনন্দিন স্বাভাবিক জীবন যাপনের উপকরণ ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা থাকবে।

উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডে রয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কিছু অংশ। এ মহাসড়ক লকডাউনের অন্তর্ভুক্ত থাকবে কিনা জানতে চাইলে মেয়র বলেন, মহাসড়ক দিয়ে যান চলাচল করতে পারবে। তবে লকডাউন এলাকায় থামতে পারবে না। যাত্রী ওঠানামা করানো যাবে না।

উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডে থাকা দূরপাল্লার পরিবহনের স্টেশন সম্পর্কে তিনি বলেন, লকডাউন এলাকায় থাকলে তা অন্য জায়গায় সরিয়ে নিতে হবে। স্টেশনে মানুষ আসা-যাওয়া করলে সেখানে ‘গেদারিং’ হবে। সেটা করতে দেওয়া যাবে না।

উল্লেখ্য, উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডে প্রায় ১৫০টি কলকারখানা আছে। সিটি গেট, কৈবল্যধাম মন্দির এবং জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামও এই ওয়ার্ডে অবস্থিত। কৈবল্যধাম রেলস্টেশন ও ক্রিকেট স্টেডিয়াম রেলওয়ে স্টেশন নামে দুটি রেলস্টেশন আছে ওয়ার্ডটিতে।

কেন্দ্রীয় গাইডলাইন : নগরীতে চিহ্নিত রেড জোন এলাকায় লকডাউন কার্যকর করার বিষয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির গাইডলাইনে বেশ কিছু নির্দেশনা আছে। নির্দেশনা অনুযায়ী সেখানে জনসাধারণের চলাচল নিষিদ্ধ। করোনাভাইরাস শনাক্তে নমুনা সংগ্রহে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বুথ স্থাপন করবে স্বাস্থ্য বিভাগ।

করোনা সংক্রমিত লোকের হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিতে কঠোর ভূমিকা পালন করবে জেলা প্রশাসন এবং সিএমপি। আইন অমান্যকারী ব্যক্তির শাস্তি নিশ্চিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হবে। লকডাউন এলাকার করোনা রোগীদের সরকার নির্ধারিত আইসোলেশন সেন্টারে রাখা হবে। লকডাউন এলাকার লোকজনের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে টেলিমেডিসিন সেবা চালু করতে হবে। লকডাউন এলাকায় কেউ মারা গেলে মৃতদেহের সৎকার বা দাফন কাজে নিয়োজিত সরকারি-বেসরকারি বা স্বেচ্ছাসেবীরা করবে।

মুদি বাজার, ওষুধ, নিত্যপণ্যের বাজার, দোকান বন্ধ থাকবে। তবে বাস্তবায়ন কমিটি বা জোন কমিটি তা হোম ডেলিভারি দেবে। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানও হোম ডেলিভারি দেবে। রেড জোন এলাকায় গণপরিবহন চলবে না। এমনকি কোনো স্টপেজ থাকবে না। তবে শুধুমাত্র রাতে মালবাহী যান চলতে পারবে।

লকডাউন এলাকায় কোনো বস্তি থাকলে তাদের জন্য খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। একই এলাকায় আকস্মিক কোনো লোক কর্মহীন হলে তাকেও খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। তবে কোনো ব্যক্তি ওএমএস, মানবিক সহায়তা বা অন্য কোনো সামাজিক সহায়তা কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত থাকলে তিনি ত্রাণ সহায়তা থেকে বাদ যাবেন।

এছাড়া গাইডলাইনে রেড জোন এলাকায় আরেকটি জোন বা স্পট কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেওয়া আছে। এতে আহ্বায়ক থাকবেন সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর। এছাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন প্রতিনিধি, স্থানীয় সাংসদ কর্তৃক মনোনীত রাজনৈতিক নেতা, ই-কমার্স এসোসিয়েশনের প্রতিনিধি, সমাজ কল্যাণ সমিতির প্রতিনিধি, এনজিও প্রতিনিধি ও স্থানীয় মসজিদের ইমাম সদস্য থাকবেন।

লকডাউন বাস্তবায়নে সভা : গতকাল টাইগারপাসে চসিকের অস্থায়ী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় উপস্থিত ছিলেন মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীন, চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা, চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মোস্তফা খালেদ আহমেদ, বাংলাদেশ ইনফেনট্রি রেজিমেন্টের (বিআইআর) সিও লে. কর্নেল মাহবুব, সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. রবিউল আলম, চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও কমিটির সদস্য সচিব কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী, মেয়রের একান্ত সচিব মোহাম্মদ আবুল হাশেম, চসিক আইসোলেশন সেন্টারের পরিচালক ডা. সুশান্ত বড়ুয়া, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিভাগীয় সমন্বয়ক ডা. আইমং প্রু ও সিইও তৌহিদুল ইসলাম, উপ-পুলিশ কমিশনার (সিটিএসবি) মোহাম্মদ আবদুল ওয়ারিশ, চসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফরহাদুল আলম, ব্র্যাকের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক মো. ইয়াছিন মিয়া, আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক হানিফ উদ্দিন প্রমুখ।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.