শিশু নির্যাতনে অভিযুক্ত ইপসা’র মাহাবুব

মামলা তুলে নিতে হুমকি প্রদানের অভিযোগ

0

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিটি নিউজ : ইপসা’র সাবেক পরিচালক মাহাবুব শিশু নির্যাতনে অভিযুক্ত।গৃহকর্মী রাত্রী (ছদ্মনাম) (১৩) অন্তত এক বছর ধরে গৃহকর্তা এনজিও সংস্থা ইপসা’র সাবেক পরিচালক মো. মাহাবুবুর রহমান কাছে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছে। কিন্তু প্রতিবাদের সাহস-সক্ষমতা ছিল না তার। পরে ‘শিশু সুরক্ষা বিষয়ক জাতীয় কলসেন্টার ১০৯৮’ এর মাধ্যমে উদ্ধার হয় শিশু গৃহকর্মী রাত্রী।

এজাহার, পুলিশ রিপোর্ট, মেডিকেল রিপোর্ট, বিভিন্ন আলামত ও জবানবন্ধীর ভিত্তিতে মামলা হয় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে। কিন্তু আসামী পরে জামিনে বেরিয়ে আসে। এখন ওই গৃহকর্মীর দারিদ্রতাকে পুজি করে মামলা প্রত্যাহারের হুমকিসহ নানা কৌশল করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে মামলার একমাত্র আসামী ইপসা’র সাবেক পরিচালক মো. মাহাবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে। ২০১৯ সালের ২৩ জুলাই চান্দগাঁও থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলাটি (নম্বর ৪২/২০১৯) হয়।

ইপসা’র প্রধান নির্বাহী মো. আরিফুর রহমান বলেন, তিনি (মাহবুব) আমাদের কর্মকর্তা ছিলেন। কিন্তু যে কাজটি করেছেন সেটি সংস্থার নীতিমালার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। ইপসা’র শিশু সুরক্ষা নীতিমালা ও জেন্ডার নীতিমালা অনুসারে এবং ইপসা সাধারণ পরিষদ ও কার্যকরী পরিষদের অনুমোদনক্রমে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ইপসার একজন সিনিয়ার কর্মকর্তা এরকম অপকর্মে জড়িত থাকায় ইউনিসেফ’র সহযোগিতায় ইপসা’র বাস্তবায়িত শিশু সুরক্ষা ও শিশু উন্নয়ন বিষয়ক দুইটি বড় প্রকল্প বন্ধ করে দেয় এবং ইপসা’র সাথে পার্টনারশীপ বাতিল করে, সে দু’টি প্রকল্পে শতাধিক কর্মী চাকুরী করত।

চট্টগ্রাম জেলা সমাজসেবার উপ-পরিচালক মোহাং শহীদুল ইসলাম বলেন, এমন ঘটনা কেউ মেনে নিবে না। আমাদের সহযোগিতায় ঘটনার সত্যতার কারণেই তো গ্রেপ্তার করে পুলিশ নিয়ে যায়। এরপর আইনগত প্রক্রিয়ায় এগিয়ে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।

নারী নির্যাতন রোধে চট্টগ্রা জেলা কমিটির আহবায়ক এবং এডাব-চট্টগ্রামের প্রেসিডেন্ট জেসমিন সুলতান (পারু) বলেন, নারী ধর্ষণ ও নির্যাতনের বিষয়ে অনেকেই মামলা পরিচালনা করতেও কষ্ট হয়। সেই গরীব অসহায়ত্ব এবং দারিদ্রতার সুযোগে বিভিন্ন আসামীরা যাতে বাদীকে প্রলুদ্ধ করতে না পারে সরকারের সে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। সত্য ঘটনার বিষয়ে মামলার সঠিক রায় ও রায়ের বাস্তবায়ন হাজারো একটি মামলায় অনেকে ঘটনার প্রদ্বীপ হয়ে থাকবে, সমাজের কাছে উদাহরণ হয়ে থাকবে বলেও জানান তিনি।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২২ জুলাই অভিযুক্ত মো. মাহাবুবুর রহমান প্রকাশ মো: মাহাবুব আলমের চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার বাসা থেকে চান্দঁগাও থানা পুলিশ ও জেলা সমাজসেবা অফিসের সমাজকর্মীরা গৃহকর্মী রাত্রিকে বাইরে থেকে তালা দেওয়া অবরুদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। এর আগে এক বছর যাবত রাত্রিকে আসামী বিভিন্নভাবে যৌন নির্যাতন করে আসছিল। গৃহকর্মীর মা বিষয়টি গৃহকত্রীকে জানালেও নীরব থাকে গৃহকত্রী। একদিন টেলিভিশনে ‘শিশুর যে কোন বিপদে পাশে আছে ১০৯৮’ শীর্ষক বিজ্ঞাপন দেখে আশার আলো দেখে রাত্রি। কারণ দীর্ঘদিন সে গৃহকর্তার লালসার শিকার হয়ে আসছে। এ নিয়ে বাড়ির কাউকে কিছু বলার সুযোগও দেওয়া হয় না। একদিন বাসায় কেউ না থাকার সুযোগে রাত্রি কল করে ১০৯৮ এ। বলতে থাকে অন্ধকার জীবনের মর্মস্পর্শি কথাগুলো। কিন্তু শিশুটি সঠিকভাবে ঠিকানা বলতে পারছিল না। তবে ফোনের সুত্র ধরে শুরু হয় খোঁজা। সরকারি সিএসপিবির সমাজকর্মী সেই এলাকার বাসায় বাসায় গিয়ে খুঁজতে থাকে। তিনদিন পর শিশুটি আবারো কল করে। শিশুর সঙ্গে নানাভাবে কথা বলে ঠিকানা চিহ্নিত করা হয়। তখন শিশু আরো কিছু বিস্তারিত তথ্য দেয়। পরে জেলার সমাজসেবার উপপরিচালকের সঙ্গেও কলসেন্টারের মাধ্যমে শিশু টেলি কনফারেন্সে এ কথা বলে। সমাজসেবার উপপরিচালক সব শুনে তাৎক্ষণিক সমাজসেবা কমকর্তা ও সিএসপিবির সমাজকর্মীদেরকে শিশুটিকে উদ্ধারে পাঠানো হয়। তখন তালাবদ্ধ অবস্থায় চান্দগাও থানার শিশুবান্ধব পুলিশ কর্মকর্তাসহ ওই বাসা থেকে শিশুকে উদ্ধার করা হয়। ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় পরদিন চান্দগাঁও থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী ২০০৩) এর ৯ (১) এর অধীনে মামলা হয়। কিন্তু গত সেপ্টেম্বরে আসামী জামিনে বেরিয়ে আসে। এরপর থেকেই বাদির দারিদ্রতাকে পুজি করে মামলাটি তুলে নিতে নানাভাবে হুমকি প্রদান করে আসছে।

একই সঙ্গে চাকরি পুনর্বহালে ইপসা কর্তৃপক্ষকেও হুমকি দিচ্ছে। ইপসা কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে চান্দগাঁও থানায় একটি জিডিও করে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.