অন্তসত্বা স্ত্রী মারা গেলেন, ছুটি না পেয়ে বুক ফাটা আর্তনাদ স্বামীর !

0

সিটি নিউজ ডেস্ক : মারা যাওয়া স্ত্রী অসুস্থ থাকাকালীন ছুটি না পেয়ে স্ত্রীর পাশে থাকতে না পারার কষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তার অমানবিক আচরণ নিয়ে বুক ফাটা আর্তনাদ ভরা ফেসবুকে অভাগা স্বামীর স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরলাম ৷

আমার ভালোবাসা আমাকে ছেড়ে পৃথিবী থেকে চির বিদায় নিয়ে গেলো, শুধু মাত্র একজন পাষান এরিয়া ম্যানজারের জন্য। দুই দিন আগে ছুটি চেয়েছিলাম

স্যার, আমার স্ত্রী অসুস্থ, আড়াই মাসের অন্তসত্বা, বেশি বমি করে, বাসায় দেখাশোনা করার মত মানুষ নেই, আমাকে ছাড়া একা থাকতে পারবে না।

কিন্তু আমার কথা তোয়াক্কা করে নাই।

তারপর আমার ব্রাঞ্চ ম্যানেজারে মাধ্যমে সুপারিস নেওয়ার চেষ্টা করি, কিন্তু আমার ম্যানেজারকে গালিগালা দিয়ে সুপারিস বাতিল করে।

তার দুই দিন বমি করতে করতে দূর্বল হলে হাসপাতালে নেওয়া হয়। তার আমার ব্রাঞ্চ ম্যানেজার এরিয়া ম্যানেজার কে ফোন বলে স্যার উনার স্ত্রী মরা মরা অবস্থা, ছুটি দিয়ে দেন, এরিয়া ম্যানেজার আমার ম্যানেজারকে গালি দিয়ে বলে মানুষ কি সহজে মরে নাকি??

তারপর এরিয়া ম্যানেজার আমাকে ছুটি দেয়, হসপিটালে কাছে এসে আমার সহকর্মীদের বলি আমার স্ত্রীর কি হয়েছে?? আমার সাথে কেউ কথা বলছে না, হসপিটালের সীটে গিয়ে দেখি, আমার ভালোবাসা আমার সাথে কথা না বলে পৃথবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম খাগড়াছড়িতে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা- (এনজিও) থেকে ছুটি না পাওয়ায় অসুস্থ অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে বাঁচাতে পারেননি মাঠকর্মী নবরতন চাকমা। এর জন্য বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘পদক্ষেপ মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র’ মানিকছড়ির এরিয়া ম্যানেজার ইকবাল বিন তৈয়বকে দায়ী করেছেন তিনি।

শারীরিককভাবে দুর্বল বাড়িতে একা থাকা অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর পাশে থাকার জন্য ২ দিন ছুটি চাইলেও ছুটি দেননি এরিয়া ম্যানেজার। অসুস্থতার বিষয়টি জানানোর পরও মন গলেনি ম্যানেজারের। পরে অসুস্থতা নিয়ে মৃত্যু হয় নবরতন চাকমার স্ত্রী বিপাশী চাকমার। খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলায় এই ঘটনা ঘটে।

অন্তসত্বা স্ত্রী মারা গেলেন, ছুটি না পেয়ে বুক ফাটা আর্তনাদ স্বামীর !
অন্তসত্বা স্ত্রী মারা গেলেন, ছুটি না পেয়ে বুক ফাটা আর্তনাদ স্বামীর !

মাঠকর্মী নবরতন চাকমা বলেন, ‘রামগড়ে ‘পদক্ষেপ মানবিক উন্নয়নের মাঠকর্মী হিসেবে আট মাসে যোগ দিই। স্ত্রীকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতাম।

সোমবার আমাকে প্রশাসনকি কারণে রামগড় থেকে মানিকছড়িতে বদলি করা হয়। আড়াই মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে রামগড়ে ভাড়া বাসায় রেখে মানিকছড়িতে কাজে যোগ দিই। যোগদানের পর অসুস্থ’ স্ত্রী আমাকে ফোন করে তার অসুস্থতার কথা জানায়। স্ত্রীর পাশে থাকার জন্য আমি একাধিকবার ম্যানেজারের কাছে ছুটি চাই। স্ত্রী অসুস্থ জেনেও তিনি আমাকে ছুটি দেয়নি। ছুটি না পাওয়ায় বাড়ি যেতে পারিনি।

তিনি আরো জানান, ‘বুধবার আমার স্ত্রী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। এসময় সহকর্মীরা আমাকে দ্রুত রামগড় হাসপাতালে আসতে বলেন। তখনও জানতাম না আমরা স্ত্রী মারা গেছেন। হাসপাতালে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম আমার স্ত্রী মারা গেছেন। তার সাথে শেষ দেখাও হয়নি, কোন কথা বলার সুযোগও পাইনি।

নবরতন চাকমা আরো জানান,‘ ম্যানেজার আমার স্ত্রীর অসুস্থতার কথা জানার পর ছুটি দেননি। আমার স্ত্রীর অসুস্থতার কথা রামগড়ের বাঞ্চ ম্যানেজার এরিয়া ম্যানেজারকে ফোনে জানালে তিনি বাঞ্চ ম্যানেজারকে ‘গালিগালাজ’ করেন।

বিষয়টি নিয়ে মাঠকর্মী নবরতন চাকমা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আবেগঘন পোস্ট দেওয়ার পর সমালোচনার ঝড় ওঠে। এমন অমানবিক কর্মকাণ্ডের জন্য এরিয়া ম্যানেজারকে দুষছেন সবাই। করোনার মতো মহামারীর সময়েও এমন অমানবিক কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান অনেকে।

বিপাশী চাকমার মৃত্যুর জন্য এরিয়া ম্যানেজারকে দায়ী করে বিচার দাবি করেছেন স্বজনরা।

তারা বলেন, এরিয়া ম্যানেজারের গাফিলতি কারণে বিপাশী চাকমার মৃত্যু হয়। তার গর্ভের সন্তানও মারা যায়। এরকম যাতে আর কারো ক্ষেত্রে না ঘটে। আমরা এর বিচার চাই।

তবে এই ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পদক্ষেপ মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র মানিকছড়ি এরিয়া ম্যানেজার ইকবাল বিন তৈয়ব। এই নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেয়ায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন ওই কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, ‘পদক্ষেপের একজন কর্মী হয়ে নব রতন এভাবে ফেসবুকে লিখতে পারেন না। তার অভিযোগ মিথ্যা। তিনি আমার কাছে সেভাবে ছুটি চাননি। তার স্ত্রী স্ট্রোক করে মারা গেছেন। তিনি (নব রতন চাকমা) সেখানে থাকলেও মারা যেত।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.