নিজস্ব প্রতিবেদক,সিটি নিউজ : এবার চট্টগ্রামের বহুল বিতর্কিত চিকিৎসক নেতা সাবেক আরেক বিতর্কিত ও বহিষ্কৃত ছাত্রনেতাকে হত্যার হুমকি দিয়ে নতুন করে সমালোচনার ঝড় তুলেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগেই । আর অন্য দলগুলোয় এ নিয়ে উঠেছে নিন্দার ঝড় । হুমকীদাতা ও হুমকির শিকার দুজনই যথাক্রমে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন ও শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার চৌধুরী মহিবুল হাসান নওফেলের অনুসারী ।
মেয়র নাছির অনুসারী বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক বহুল বিতর্কিত ডা. ফয়সল ইকবাল চৌধুরী চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক ও অব্যাহতি প্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনির লাশ ফেলার হুমকি দেয়ার এই অভিযোগ ওঠেছে। এই ঘটনায় খোদ ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের সাধারণ নেতা কর্মী ও সাধারণ চিকিৎসকরা বিব্রত ।
ডা: ফয়সাল অবশ্য আগেই সাংবাদিক কন্যা রাইফার মৃত্যু, বেসরকারি ক্লিনিক সিন্ডিকেটের সম্পৃক্ততা, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে( চমেক) হাসপাতালে টেন্ডারবাজি, দুর্নীতি ও উপমন্ত্রী নওফেলকে ক্যাম্পাসে প্রবেশে হুমকি এবং জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাকে ব্যঙ্গ করে সামাজিক মাধ্যমে স্ট্যাটাস প্রদান সহ নানা ইস্যুতে নিন্দিত।
সর্বশেষ গত জাতীয় নির্বাচনে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সংসদীয় এলাকা রাঙ্গুনিয়ায় দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে মহড়া দেওয়াই তথ্যমন্ত্রী সমর্থক ও এলাকায় দলীয় নেতাকর্মীরা তাঁর উপর চরম অসন্তুষ্ট।
সোমবার (২২জুন) সাবেক ছাত্রনেতা মো. সাজ্জাত হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলার সময় রনীকে হত্যার এই হুমকি দেন এই বিতর্কিত চিকিৎসক নেতা ।
বহিষ্কৃত সাবেক ছাত্রনেতা রনিও অবশ্য চট্টগ্রাম শহর থেকে হাটহাজারী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে কেন্দ্র দখলের প্রচেষ্টায় অস্ত্রসহ গ্রেফতার হয়ে আলোচিত ।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পরিচালিত চট্টগ্রামের প্রথম সুইমিংপুল নির্মাণ প্রক্রিয়ায় বাধা প্রদান, মেয়র নাছিরসহ বিশিষ্টজনদের বিরুদ্ধে উপর্যুপরি সামাজিক মাধ্যমে স্ট্যাটাস দেয়ায় বিতর্কিত ছাত্রনেতা নুরুল আজিম রনি চট্টগ্রাম বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষকে প্রকাশ্যে মারধরের ভাইরাল হওয়া ভিডিও ফুটেজ ইস্যুতে নিন্দিত রনিকে ছাত্রলীগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় ।
নগরীর পিসি রোডের হালিশহর ওয়াপদা মোড় এলাকায় ‘প্রিন্স অব চিটাগাং’ কমিউনিটি সেন্টারে তৈরি হওয়া করোনা আইসোলেশন সেন্টার চট্টগ্রাম এর প্রধান উদ্যোক্তা সাবেক ছাত্রনেতা সাজ্জাতের সাথে চিকিৎসক নেতা ফয়সালের কথোপকথনের ১ মিনিট ৮ সেকেন্ডের একটি অডিও রেকর্ডকে ঘিরেই শুরু হয়েছে আলোচনা সমালোচনা ।
উভয়ের এই কথোপকথনের মধ্যে ডা. ফয়সল ইকবাল চৌধুরীকে মো. সাজ্জাত হোসনকে উদ্দেশ্য করে বলতে শোনা যায়,দেশ একটু সুস্থ হোক। ওর লাশ দেখা যাবে। ওর লাশ যদি না ফেলি আমার নাম ফয়সাল ইকবাল না।”
এরপর ফয়সাল ইকবাল বলে উঠেন, “চোর-ডাকাতের সাথে থেকে লাভ নেই। রইন্যার (নুরুল আজিম রনি) মতো চোর-ডাকাতের সাথে কী?”
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ)এর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও করোনা বিষয়ে স্বাচিপ কমিটির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমন্বয়কারি
ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমানকেও ‘ডাকাত’ উল্লেখ করে কেন তাঁকে আইসোলেশন সেন্টারটিতে সম্পৃক্ত করা হয়েছে, তা নিয়েও কৈফিয়ত চান ডাঃ ফয়সাল ।
আইসোলেশন সেন্টারটির পরিচালনা নিয়ে কিছু কথার ফাঁকে সাজ্জাতকে ডাঃ ফয়সাল বলেন, “..নাই ডাক্তার, নাই কিছু নাই। ভংচং করার দরকারটা কী?”
সাজ্জাত হোসেন জবাবে বলেন, “ডাক্তার নাই আপনাকে কে বললো? আচ্ছা ঠিক আছে।”
এরপর ফয়সল ইকবাল বলেন, রোগীর যেটার অভাব, আইসিইউ, ন্যাজাল ক্যানোলা, ওখানে কী আছে? সেখানে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন আছে? নাকি আর কী আছে? মানুষ শোয়ায় রাখার জন্য একটা দরকার, মেয়রেরটা যথেষ্ট, ওখানে ডাক্তাররাও আছে। আর ওখানে দুনিয়ার চোর-ডাকাত সবগুলোরে নিছো, এখানে আমরা যাবো না?
“এসব শুনে “আচ্ছা ঠিক আছে” বলেন সাজ্জাত।
এরপর ফয়সাল বলেন, “চোর-ডাকাত নিয়ে তুমি ইয়া করো। ওখানে আবার তোমরা পিকনিক পার্টি দাও। মানুষের টাকা চাঁদা তুলে।”
পিকনিক পার্টি করি মানে?- প্রশ্ন করেন সাজ্জাত হোসেন।
প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে ফয়সাল ইকবাল বলেন, “ যাই হোক এসব বলে লাভ নেই।”
ফোনালাপটির বিষয়ে জানতে চাইলে আইসোলেশন সেন্টারটির প্রধান উদ্যোক্তা মো. সাজ্জাত হোসেন বলেন, ডা. ফয়সাল ইকবালের গতকালের একটা মিসড কলে দেখে সকালে (সোমবার) আমি রিং-ব্যাক করি। ফোন ধরেই তিনি মারমুখী আচরণ করা শুরু করেন।
আমি তাঁকে বলি যে আপনিও আসুন, ভিজিট করে যান-তখনই উনি নানা কথা শুনিয়ে দিলেন। একপর্যায়ে রনিকে নিয়েও কথা শুরু করলে আমি রেকর্ডিং অপশনটা অন করে দিই। এরপর তিনি কী বললেন তা তো শুনেছেন।
সাজ্জাত বলেন, জাতির প্রয়োজনে তুমুল সংকট-সন্ধিক্ষণে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, ব্যবসায়ী আবুল বাশার আবুসহ মানবিক মানুষদের নেপথ্য সহায়তায় এই আইসোলেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেছি। এখানে অনেকেই আসবেন, যাবেন এটাই স্বাভাবিক।
এ বিষয়ে ডা. ফয়সল ইকবাল চৌধুরী অবশ্য গণমাধ্যমে বিষয়টি সোজাসাপ্টা অস্বীকার করে বলেন, “রনির বিষয়ে আমি কিছু বলিনি। এসব সাজানো। সে তো আমার প্রতিদ্বন্দ্বী না, তাকে নিয়ে কিছু বলার কোন দরকার আছে?”
অডিও রেকর্ড এর বিষয়টি তুলে ধরলে ফয়সাল বলেন, “অডিও রেকর্ডটি তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে” !
উল্লেখ্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগেরই ডাঃ ফয়সাল ও রনি: দুজনকে ঘিরেই নানা বিতর্কের কারণে বিব্রত সাধারণ নেতাকর্মীরা। ক্ষমতাসীন দলটির কাছে দুজনই “বিষকাটা” হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানান দলটির সভ্য ভদ্র সমর্থকেরা।