চট্টগ্রামের ১৬ পাহাড়ে ৩৫০ স্থাপনা উচ্ছেদ

0

সিটি নিউজ ডেস্ক :  পাহাড়ধস ও পাহাড়কাটা বন্ধ করতে বিক্ষিপ্তভাবে চট্টগ্রামে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়। আর এতে নেতৃত্বের ভূমিকায় থাকে জেলা প্রশাসন। এর উদ্দেশ্য শুধু পাহাড় ধসে মৃত্যু ঠেকানো। গত কয়েক বছর ধরে তেমনই হয়ে আসছে। কিন্তু বিভিন্ন সংস্থার (জেলা প্রশাসন, ভূমি অফিস, পুলিশ, পরিবেশ অধিদপ্তর, রেলওয়ে, ফায়ার সার্ভিস, ওয়াসা, বিদ্যুৎ ও গ্যাস) সমন্বয়ে প্রায় ২৫০ সদস্যের বিশাল বাহিনী সাত কিলোমিটার সড়কের দুই প্রান্ত দিয়ে শুরু হয় উচ্ছেদ অভিযান। সাধারণত কখনো কোনো অপরাধীকে ধরতে চারদিক দিয়ে ঘিরে অভিযান পরিচালনা করা হয়।

বুধবার (২৪ জুন) ডিটি-বায়েজিদ সড়কের ফৌজদারহাট ও বায়েজিদ উভয় প্রান্ত থেকে জেলা প্রশাসনের পাঁচ জন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে ১৬ পাহাড়ে গড়ে উঠা ৩৫০ ঘর উচ্ছেদের পাশাপাশি উচ্ছেদে বাধা দেয়ায় ১০ জনকে সাত দিনের জন্য জেলে পাঠানো হয়। উচ্ছেদ হয় সাত কিলোমিটার পাহাড়ি এলাকার অবৈধ দখলদাররা।

পাহাড়ধস ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পাহাড়ে কোনো অবৈধ দখল থাকতে পারবে না, একইসাথে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসেরও সংযোগ থাকতে পারবে না। কিন্তু গত সপ্তাহে টানা বৃষ্টির সময়ে ডিটি-বায়েজিদ সংযোগ সড়কের উভয়পাশে পাহাড় কেটে গড়ে তোলা অবৈধ বসতিকে সরে যাওয়ার জন্য সতর্ক করেছিল কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও জেলা প্রশাসনের নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম। এছাড়া এই এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে পাহাড় কাটার অভিযোগ পেয়ে আসছে পরিবেশ অধিদপ্তর। কিন্তু পর্যাপ্ত জনবলের অভাবে পাহাড় কাটায় জড়িতদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা যাচ্ছিল না।

এবিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগরের পরিচালক মোহাম্মদ নুরুল্লাহ নূরী বলেন, ‘আমরা সময় সুযোগ খুঁজছিলাম ব্যাপকহারে অভিযান পরিচালনা করার জন্য। জেলা প্রশাসনের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে এই অভিযানটি পরিচালিত হলো। এতে এই এলাকায় পাহাড় কাটা যেমন বন্ধ হবে তেমনিভাবে পাহাড়ে অবৈধভাবে গড়ে উঠা বসতিগুলোও উচ্ছেদ করা হলো। এখন প্রয়োজন শুধু মনিটরিং।’
একই কথা বলেন কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও জেলা প্রশাসনের নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা পরিকল্পিতভাবে এই অভিযানটি চালিয়েছি। একটি টিম বায়েজিদ প্রান্ত থেকে অপর টিম ফৌজদারহাট প্রান্ত দিয়ে অভিযান পরিচালনা করেছে। এতে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টার মধ্যে পুরো সাত কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকায় অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করা গেছে।’

এদিকে দীর্ঘদিন ধরে ডিটি-বায়েজিদ সংযোগ সড়কের উভয় দিকে একটি চক্র পাহাড় কেটে ঘর নির্মাণ করে আসছিল পাহাড়ের ২০০ থেকে ৩০০ ফুট পাহাড় চূড়ায় কিংবা পাহাড় কেটে সমান করে এসব ঘর নির্মাণ করা হয়। আবার এসব এলাকায় বিদ্যুতের সংযোগ লাইনও দেয়া হয়। সরকারি জায়গায় অবৈধভাবে কিংবা ভুয়া দলিলের মাধ্যমে দখল স্বত্ব নিয়ে গড়ে উঠেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বুধবারের অভিযানে পাহাড়ের উপরের স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করা হয়। একইসাথে স্কেভেটর দিয়ে রাস্তার পাশে পাহাড় কেটে গড়ে তোলা স্থাপনাগুলোও উচ্ছেদ করা হয়। সিডিএ গত কয়েক বছর ধরে এই রোড নির্মাণ কাজ করে। বর্তমানে রোডের নির্মাণ কাজ শেষ, এখন শুধু চালু করার অপেক্ষায় রয়েছে। এই রোডকে কেন্দ্র করেই উভয়পাশের পাহাড়গুলো কাটা হয়েছে এবং অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে।

১০ জনকে ৭ দিনের জেল ও বিদ্যুতের ৩০ মিটার জব্দ উচ্ছেদ অভিযান চলাকালে ডিটি-বায়েজিদ সংযোগ সড়কের হাটহাজারী উপজেলাধীন জালালাবাদ মৌজা এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সিএমপি পুলিশ বাহিনীসহ জেলা প্রশাসন প্রতিরোধের মুখে পড়ে। স্থানীয় সন্ত্রাসীদের মদদে বসবাসকারীরা বাধা দেয়। এসময় তাদের আক্রমণে দুই ভূমি কর্মকর্তা আহত হন। পরবর্তীতে নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে পুলিশ বাহিনী জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে এবং মারধরের অভিযোগে ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অপরাধে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে গ্রেফতারকৃত ১০ জনকে ৭ দিনের জেল দেয়া হয়।
এদিকে অভিযানে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ নেয়ায় সংযোগ বিচ্ছিন্নের পাশাপাশি ৩০টি মিটার জব্দ করা হয়। পাহাড়ি এলাকায় কীভাবে বিদ্যুতের সংযোগ পেল তা তদন্ত করে দেখবে প্রশাসন।

যাদের নেতৃত্বে অভিযান-
সীতাকুন্ড উপজেলা নির্বাহি অফিসার মিল্টন রায়, কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম, আগ্রাবাদ সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি), ও নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রেট আবদুস সামাস শিকদার, চান্দগাঁও সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রেট মামুন আহমেদ অনীক; হাটহাজারির সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রেট শরীফ হোসেন অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানে সিমএমপি টিমের নেতৃত্বে ছিলেন সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার পরিত্রাণ ও এসি বায়েজিদ জোন। পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন পরিচালক (মহানগর) নুরুল্লাহ নূরী, চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন, উপ-পরিচালক জমির উদ্দিন ও মিয়া মাহমুদ। রেলওয়ের পক্ষে ছিলেন এস্টেট অফিসার মাহবুবুল আলম।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.