কক্সবাজারে সেনা কর্মকর্তা নিহতঃ ইন্সপেক্টর লিয়াকতসহ ১৬ পুলিশ স্ট্যান্ড রিলিজ

0

কক্সবাজার প্রতিনিধিঃ কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে সেনাবাহিনীর সিনহা মো. রাশেদ নামে অবসরপ্রাপ্ত একজন মেজর নিহতের ঘটনায় বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ১৬ পুলিশ সদস্যকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে।

আজ রবিবার (২ আগস্ট) বিকেলে তদন্ত কেন্দ্রে দায়িত্বরত ১৬ সদস্যের প্রত্যেককে প্রত্যাহার করে কক্সবাজার পুলিশ লাইনে নেয় হয়েছে। তারা বর্তমানে পুলিশের নিজস্ব হেফাজতে রয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন জানিয়েছেন, ‘যেহেতু একটা ঘটনা ঘটেছ। তদন্ত কমিটিও গঠিত হয়েছে। এরপরও আমরা বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রে দায়িত্বরত সকল সদস্যকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে রেখেছি। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের পর তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

জানা গেছে, এই পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলীর বিরুদ্ধে আরও একটি বিভাগীয় মামলা তদন্তাধীন রয়েছে।

এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আজ সকালে ধানমণ্ডির বাসায় সাংবাদিকদের বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে কেউ দোষী প্রমাণিত হলে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এখন পর্যন্ত কী জানা গেছে, এমন প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তদন্ত চলার সময় কোনো মন্তব্য করতে অপারগতা জানান। তদন্ত নিরপেক্ষ হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, একটা নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য ৩ কমিটির সদস্য গঠন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীও সুষ্ঠু তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। এই মুহূর্তে যা বলবো তাতেই একটা প্রভাব পড়তে পারে। তাই কিছুই বলতে চাচ্ছি না।

ডেট লাইন ৩১ জুলাই

জানা গেছে, গত ৩১ জুলাই, শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাহারছড়া মে‌রিন ড্রাইভ সড়কের চেক‌পোস্টে এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। নিহত সেনা কর্মকর্তার নাম সিনহা মো. রাশেদ। পু‌লিশ জা‌নিয়েছে, ওই সেনা কর্মকর্তা তার ব্যক্তিগত গা‌ড়িতে করে অপর একজন স‌ঙ্গীসহ টেকনাফ থেকে কক্সবাজার আস‌ছিলেন। ‌মে‌রিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া চেকপোস্টে পু‌লিশ গা‌ড়ি‌টি থা‌মিয়ে তল্লাশি করতে চাইলে তিনি বাধা দেন। এই নিয়ে তর্কবিতর্কের এক পর্যায়ে সেনা কর্মকর্তা তার কাছে থাকা পিস্তল বের করলে পুলিশ গু‌লি চালায়। এতে ওই সেনা কর্মকর্তা গুরুতর আহত হয়। পরে‌ কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরিদর্শদ লিয়াকত আলী তিন রাউন্ড গুলি চালায়। এই তিন রাউন্ড গুলিই সিনহার বুকের পাঁজর ভেদ করে ভিতরে ঢুকে যায়। এবং তিনি ঘটনাস্থলেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।

কক্সবাজারের পু‌লিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন জা‌নিয়েছেন, ‘শামলাপুুরের লোকজন ওই গা‌ড়ির আরোহীদের ডাকাত স‌ন্দেহ ক‌রে পু‌লিশকে খবর দেয়। পু‌লিশ চেক‌পো‌স্টে গা‌ড়ি‌টি থামা‌নোর চেষ্টা ক‌রে। কিন্তু গা‌ড়ির আরোহী একজন তার পিস্তল বের ক‌রে পু‌লিশ‌কে গু‌লি করার চেষ্টা ক‌রে। আত্মরক্ষা‌র্থে পু‌লিশ গু‌লি চালায়। এতে ওই ব্যক্তি মারা যায়।’

এস‌পি আরো জানান, এই ঘটনায় দু‌টি মামলা হ‌য়ে‌ছে। ২ জন‌কে আটক করা হ‌য়ে‌ছে। পু‌লিশ পিস্তল‌টি জব্দ ক‌রে‌ছে। এছাড়া গা‌ড়ি‌তে তল্লাশি ক‌রে ৫০টি ইয়াবা, কিছু গাজা এবং দুটি বি‌দেশি ম‌দের বোতল উদ্ধার করা হ‌য়ে‌ছে। নিহত অব. মেজর রা‌শেদ এক‌টি তথ্য চিত্র ধার‌নের কা‌জে এক নারী ও অপর ৩ পুরুষ সঙ্গিসহ গত এক মাস ধ‌রে হিমছ‌ড়ির এক‌টি রেস্টহাউ‌জে অবস্থান কর‌ছি‌লেন।

নিহত অবসরপ্রাপ্ত মেজরের নাম সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান (৩৬)। তার গ্রামের বাড়ি যশোর। তিনি এসএসএফেও কর্মরত ছিলেন। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান।

এদিকে, অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা নিহত হওয়া প্রসঙ্গে এক কর্মকর্তা বলেন, গত ৩ জুলাই অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা এবং সাথে আরও তিনজন নিয়ে ইউটিউব এর ট্রাভেল ভিডিও (জাস্ট গো) তৈরি করার জন্য ঢাকা থেকে কক্সবাজারে আগমন করেন। সাথে ছিলেন ডাইরেক্টর শিপ্রা, ক্যামেরাম্যান সিফাত ও আরো একজন নিয়ে নীলিমা রিসোর্টে অবস্থান গ্রহণ করেন। নীলিমা রিসোর্ট থেকে ভিডিও ধারণের জন্য বাহারছড়া ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের রাতের ভিডিও ধারণ করার জন্য রাত ১০ টার সময় মেজর সিনহা ও সিফাত পাহাড় দেখতে আসেন। লাইটের আলো দিয়ে পাহাড়ে অবস্থান গ্রহণ করলে স্থানীয় বাসিন্দারা ডাকাতদল ভেবে পুলিশকে খবর দেন। এই পরিস্থিতিতে মেজর সিনহা ও সিফাত পাহাড় থেকে নেমে এসে মেরিন ড্রাইভ রোডে প্রাইভেট কারে উঠে নীলিমা রিসোর্ট এর উদ্দেশ্যে গমন করার সময় বিজিবির চেকপোষ্টে মেজর সিনহা পরিচয় দিয়ে চলে আসে।

পরবর্তীতে লামাবাজার পুলিশ চেকপোস্টে এলে পুলিশের সাথে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা বলে পরিচয় দেন। পুলিশ তাকে ডাকাত ভেবে চেক করতে গেলে পুলিশের সাথে তর্কাতর্কি হয়। মেজর সিনহা বলেন, ‘তোমরা আমার গাড়ি চেক করতে পারো না। গাড়ি চেক করতে হলে তোমার ওসি সাহেবকে আসতে বল।’ কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ইন্সপেক্টর লিয়াকতকে ব্যাপারটি জানালে তাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে বেঁধে রাখার নির্দেশ দেন। কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা মেজর সিনহাকে বলেন, ‘আপনারা যেই হোন না কেন আপনাদের গাড়ি আমাদের চেক করতে হবে। আপনারা গাড়ি থেকে নামুন।’

মেজর সিনহা গাড়ি থেকে নামার সাথে সাথে হাত-পা বেঁধে রোডের উপরে শুয়ে রাখে। এই অবস্থায় ইন্সপেক্টর লিয়াকত পৌঁছেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গেলে তর্ক বিতর্ক হয়। এ কারণে মেজর সিনহাকে গত ৩১ জুলাই রাত সাড়ে ১১টার দিকে বুকে এবং গলার নিচে তিন রাউন্ড ফায়ার করে। ক্যামেরাম্যান সিফাতকে হাত-পা বেঁধে পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে আসা হয়। অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহাকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় সিভিল মিনি ট্রাকে করে কক্সবাজার সদর হসপিটালে নিয়ে যায়।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.