কিংবদন্তি সুরকার ও সংগীত পরিচালক আলাউদ্দিন আলী

0

আবছার উদ্দিন অলিঃ দৃষ্টির সীমানা ছাড়িয়ে কিংবদন্তি জনপ্রিয় সুরকার ও সংগীত পরিচালক আলাউদ্দিন আলী চলে গেলেন সুরের ভূবন ছেড়ে। সংগীত পরিচালক আলাউদ্দিন আলী বাংলা গান, বিশেষ করে বাংলা চলচ্চিত্রে বহু জনপ্রিয় গানের জন্মদাতা। তিনি শুধু একজন সংগীত পরিচালক নন, একধারে সুরকার, বেহালা বাদক ও গীতিকার।

ঢাকা মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯ আগস্ট সন্ধ্যায় তার মৃত্যু হয়। ৬৮ বছর বয়সী এই সুর স্রষ্টার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গত শনিবার ভোরে তাকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিনি লাইফ সাপোর্টে ছিলেন।

তার চিকিৎসক ডা. আশীষ কুমার চক্রবর্তী বলেন, আলাউদ্দিন আলী ক্যান্সারের পাশাপাশি নিউমোনিয়া ও রক্তের ইনফেকশনে ভুগছিলেন। ২০১৫ সালের জুলাই মাসে ব্যাংককে নিয়ে পরীক্ষা করা হলে তার ফুসফুসে একটি টিউমার ধরা পড়ে। পরে তা ক্যান্সারে রুপ নেয়। এরপর থেকে অন্যান্য শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি তার ক্যান্সারের চিকিৎসা চলছিল। দীর্ঘদিন ধরেই শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগতে হচ্ছিল তাকে।

দীর্ঘ সংগীত জীবনে প্রায় ৪ হাজারেরও বেশি গান সুর করেছেন। প্রায় সবকটি গানই জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এখনও তাঁর সুরকরা গান শ্রোতাদের মুখে মুখে। আলাউদ্দিন আলী’র সুর করা গানের তালিকায় রয়েছে- ও আমার বাংলা মা তোর, সূর্যদয়ে তুমি সূর্যাস্তেও তুমি, যে ছিল দৃষ্টির সীমানায়, ভালোবাসা যত বড় জীবন তত বড় নয়, এই দুনিয়া এখন তো আর, আছেন আমার মোক্তার, শত জনমের স্বপ্ন তুমি আমার জীবনে এলে, সুখে থাকো ও আমার নন্দিনী, যেটুকু সময় তুমি থাকো কাছে, এমনও তো প্রেম হয়, কেউ কোনোদিন আমারে তো কথা দিল না, পারি না ভুলে যেতে, জন্ম থেকে জ্বলছি মাগো, একবার যদি কেউ ভালোবাসত, দুঃখ ভালোবেসে প্রেমের খেলা খেলতে হয়, বাবা বলে গেল আর কোনোদিন, বন্ধু তিন দিন তোর বাড়িত গেলাম, শেষ করো না শুরুতে খেলা, ইষ্টিশনের রেলগাড়িটা ইত্যাদি এ রকম প্রায় ৪ হাজার সফল গানের সুরকার ও সংগীত পরিচালক আলাউদ্দিন আলী। বাংলা চলচ্চিত্রের আলাউদ্দিন আলী’র সুরকরা গান মানেই সুপার-ডুপার হিট। যে ছবিতে আলাউদ্দিন আলী’র সুরকরা গান ছিল, সেই ছবিটিই হিট হয়েছে।

আলাউদ্দিন আলী’র জন্ম ১৯৫২ সালের ২৪ ডিসেম্বর মুন্সীগঞ্জের বিক্রমপুরের টঙ্গী বাড়ী থানার বাঁশবাড়ী গ্রামের এক সাংস্কৃতিক পরিবারে। বাবা ওস্তাদ জাদব আলী, মা জোহরা খাতুন। সংগীতে হাতে খড়ি ছোট চাচা সাদেক আলীর কাছে। শহীদ আলতাফ মাহমুদের সহযোগী হিসেবে তিনি যন্ত্রশিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্র জগতে আসেন ১৯৬৮ সালে। এরপর তিনি প্রখ্যাত সুরকার আনোয়ার পারভেজসহ বিভিন্ন সুরকারের সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭৫ সালে সংগীত পরিচালনা করে বেশ প্রশংসিত হন। গোলাপী এখন ট্রেনে, সুন্দরী, কসাই ও যোগাযোগ চলচ্চিত্রের জন্য ১৯৮৮ সালে শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৮৫ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান শ্রেষ্ঠ গীতিকার হিসেবে। লোকজ ও ধ্রুপদী গানের সংমিশ্রণে গড়ে ওঠা তার সুরের নিজস্ব ধারা বাংলা গানকে আরও সমৃদ্ধ করেছে।

সুরকার আলাউদ্দিন আলী’র মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন- বাংলাদেশ গীতিকবি সংসদ চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ আওয়ামী সাংস্কৃতিক ফোরাম চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমী, চট্টগ্রাম সাংস্কৃতিক মোর্চ্চা, বেতার টেলিভিশন শিল্পী কল্যাণ সংস্থা, চট্টগ্রাম মঞ্চ সংগীত শিল্পী সংস্থা, চট্টগ্রাম যন্ত্র শিল্পী সংস্থা, চাটগাঁইয়্যা নওজোয়ান, চট্টগ্রাম নজরুল শিল্পী সংস্থা, বাংলাদেশ মানবাধিকার কাউন্সিল চট্টগ্রাম জেলা, সন্দীপনা সাংস্কৃতিক ফোরাম, আজকাল সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী সহ বহু সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.