সত্য আড়াল করেছে পত্রিকা মালিকদের সংগঠন নোয়াবঃ সিইউজে

0

সিটি নিউজঃ সাংবাদিকদের ন্যায্য দাবিকে আড়াল করে চট্টগ্রামে পাঁচটি পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধের জন্য চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নকে (সিইউজে) সুকৌশলে অভিযুক্ত করার মধ্য দিয়ে পত্রিকা মালিকদের সংগঠন নোয়াব প্রকৃত সত্যকে আড়াল করছে।

মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে সিইউজে সভাপতি মোহাম্মদ আলী ও সাধারণ সম্পাদক ম. শামসুল ইসলাম জানিয়েছেন, বারবার আশ্বাস দেয়ার পরও বছরের পর বছর সাংবাদিকদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করায় সিইউজে কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হয়েছে। পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধের দায় কোনভাবেই সাংবাদিক সংগঠনের ওপর দেয়া যাবে না। স্বেচ্ছাচারি আচরণের মাধ্যমে কোন ধরণের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই পারষ্পরিক যোগসাজসে মালিকরা পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ রেখেছেন।

যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, যে পাঁচটি পত্রিকার প্রকাশনা মালিকরা বন্ধ করেছেন সেসব পত্রিকার মধ্যে দুইটিতে ঈদুল ফিতরের সময় কোন বোনাস দেয়া হয়নি। তিনটিতে বোনাস দেয়া হয়েছে অর্ধেক। একই আচরণ করা হয়েছে ঈদুল আযহার সময়ও। সিইউজে’র পক্ষ থেকে বারবার আহ্বান জানানোর পরও এমন আচরণ দু:খজনক।

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, কেবল ঈদ বোনাস নয়, সিইউজে’র পক্ষ থেকে বারবার আহ্বানের পরও বছরের পর বছর সাংবাদিকদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করে আসছেন মালিকরা। চট্টগ্রামের পত্রিকাগুলো এখনো পর্যন্ত ৮ম ওয়েজবোর্ড পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করেনি। পূর্ণাঙ্গ ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন করার আশ্বাসে ২০১৫ সালে চুক্তি করা হলেও তা লঙ্ঘণ করে চলেছেন।

তারা বলেন, বন্ধ রাখা একটি পত্রিকায় কর্মীদের ২১ মাস পর্যন্ত বেতন বকেয়া রয়েছে। চট্টগ্রামের শীর্ষস্থানীয় দৈনিকগুলোও গত জুলাই মাসের বেতন এখন পর্যন্ত পরিশোধ করেনি। কোন কোন পত্রিকায় গত পাঁচ বছরে কোন ইনক্রিমেন্ট দেয়া হয়নি। এরপরও করোনাকালে নূন্যতম সুরক্ষা ছাড়াই সংবাদ কর্মীদের রাত দিন কাজ করতে বাধ্য করা হয়েছে। রাতের শিফটে মধ্যরাত অবধি কাজ করার পরও কোন পরিবহণের ব্যবস্থা করা হয়নি। যা সম্পূর্ণ অমানবিক বলে সিইউজে মনে করে।

নেতৃবৃন্দ বলেন, সিইউজে’র কোন কর্মসূচিই হঠাৎ করে ঘোষণা করা হয়নি। দফায় দফায় দাবি পূরণে মালিকদের চিঠি দেয়া হয়েছে। প্রেস ক্লাব চত্বরে সমাবেশ করে দাবি পূরণের আহ্বান করা হয়েছে। এমনকি মালিকদের সঙ্গে ফোনালাপে বৈঠকের আহ্বান করা হলেও তা প্রত্যাখান করেছেন মালিকরা।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, কেবল মালিকদের ঘরে নয়, সাংবাদিকদের ঘরেও স্ত্রী, সন্তানরা থাকেন। তাদের কথা বিবেচনা করে মালিকপক্ষ সাংবাদিকদের ন্যায্য পাওনা পরিশোধ করা উচিত। তাই আলাপ আলোচনার মাধ্যমে চলমান সংকট নিরসনে এগিয়ে আসার জন্য মালিকদের প্রতি আহ্বান জানান সিইউজে নেতৃবৃন্দ। একইসঙ্গে বিবৃতিতে অবিলম্বে পত্রিকাগুলোর প্রকাশনা চালুর দাবি জানানো হয়।

এদিকে চট্টগ্রামের ৫টি পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধের বিষয়ে নিউজ পেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব) ১১ আগস্ট যে বিবৃতি দিয়েছে তা দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)।

মঙ্গলবার বিএফইউজে সভাপতি মোল্লা জালাল, মহাসচিব শাবান মাহমুদ এক বিবৃতিতে বলেছেন, নোয়াবের বিবৃতিতে ইউনিয়নকে দায়ী করে যা বলা হয়েছে তা সঠিক নয়। সিইউজের পক্ষ থেকে দাবি দাওয়ার বিষয়ে বার বার চিঠি দিয়ে মালিক পক্ষকে জানানো হয়েছে। আলোচনার জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে অনুরোধ করা পরও তারা কোন গুরুত্ব দেয়নি। বিএফইউজে মনে করে, বিদ্যমান অচলাবস্থা নিরসনে নোয়াবকেই উদ্যোগ নিতে হবে।

বিবৃতিতে বিদ্যমান অচলাবস্থা নিরসনে নোয়াবকে এগিয়ে আহবান জানিয়ে বিএফইউজে নেতৃবৃন্দ বলেন, নোয়াব তাদের বিবৃতিতে বলেছে, পত্রিকা প্রকাশ মালিক ও সাংবাদিকদের যৌথ প্রয়াস। এখানে দুই পক্ষের সহমর্মিতা ও সহযোগিতা প্রয়োজন।

বিএফইউজে নেতৃদ্বয় বলেন, সাংবাদিক-কর্মচারীদের ন্যায্য পাওনা বঞ্চিত হওয়াসহ অন্যান্য বিষয়ে সাংবাদিক ইউনিয়ন মালিক পক্ষের সাথে আলোচনা করে সংকট নিরসনে বিশ্বাসী। নোয়াবকে এই সত্যটি মাথায় রেখে এগিয়ে আসতে হবে। অন্যথায় তারা চট্টগ্রামে যে আগুন জ্বালিয়েছে, সারাদেশের গণমাধ্যমে তা ছড়িয়ে পড়তে বাধ্য। যা কারো কাম্য নয়।

এর আগে গত সোমবার গণমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে চট্টগ্রামে সম্পাদকের বাড়ি ঘেরাওয়ের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে নোয়াব। সম্পাদকের বাড়ি ঘেরাও করার বিষয়টি নজিরবিহীন বলেও উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.