বিচারক শুন্যতায় চট্টগ্রামে চাঞ্চল্যকর মামলার কার্যক্রম স্থগিত !

৯০টি আদালতে দুই লাখের বেশি মামলা ঝুলছে

0

গোলাম সরওয়ার,সিটি নিউজ : চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে দীর্ঘিদন বিচারক না থাকায় বছরের পর বছর আটকে আছে চাঞ্চল্যকর চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) ১২ প্রকল্পের ৭ পরিচালকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলা,কক্সবাজার ৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা দুর্নীতির মামলা,কক্সবাজারের সাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসি) রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের মামলা,ঘুষের টাকাসহ হাতেনাতে গ্রেপ্তার দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক এম শাব্বির হাসানের বিরুদ্ধে মামলা,বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের সাবেক জিএম ইউসুফ আলী মৃধার বিরুদ্ধে দুদকের মামলার বিচার কার্যক্রম।

বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে বিচারক শুন্য দীর্ঘ ১ বছর ৯ মাস। চট্টগ্রাম বিভাগের দুর্নীতি ও চাঞ্চল্যকর মামলার বিচার কার্যক্রম পরিচালিত হয় গুরুত্বপূর্ণ এই বিশেষ জজ আদালতে।বর্তমানে আদালতটিতে বিচারাধীন মামলা রয়েছে প্রায় হাজারের মতো।এ ছাড়া দেওয়ানী ও ফৌজদারী মামলাসমূহ বিচার নিষ্পত্তি করা হয়। বিশেষ এই আদালতের বিচারক রুহুল আমিন ২০১৯ সালের ৬ জানুয়ারি বদলি হওয়ার পর থেকে এ আদালতে বিচারকশূন্যতা বিরাজ করছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে সর্বমোট প্রায় ৯১৯ টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।

উক্ত আদালতের মামলা পরিচালনার জন্য সরকার পক্ষে নিয়োগ প্রাপ্ত এডভোকেট মেজবাহ উদ্দীন চৌধুরী, বিশেষ পি.পি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।আর দুর্নীতির বিশেষ মামলা সমূহ পরিচালনার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে মামলা পরিচালনা করছেন বিশেষ পিপি এডভােকেট কাজী আনোয়ারুল হক লাভলু, এডভােকেট মুজিবুর রহমান চৌধুরী,ও এডভোকেট মাহমুদুল হক।

বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে ভারপ্রাপ্ত বিচারকের দায়িত্ব পালন করছেন চট্টগ্রামে বিজ্ঞ জেলা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন যিনি ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারী ‘চট্টগ্রাম গণহত্যা’ হিসেবে পরিচিত বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রাণনাশের চেষ্টা হিসেবে আলোচিত ঘটনার মামলার রায় ঘোষণা করেন।(দায়রা মামলা নং-৭১/২০১৬) ভারপ্রাপ্ত বিচারক জনাব, মোঃ ইসমাইল হোসেন ৫ জন আসামীকে মৃত্যুদন্ডাদেশ প্রদান করেন।

উক্ত বিভাগীয় বিশেষ জজ চট্টগ্রাম বিভাগের সকল জেলায় বিভিন্ন সময়ে স্ব স্ব জেলার জেলা জজ আদালত ভবনে সার্কিট কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে দুর্নীতির বিশেষ মামলা সমুহ বিচার ও নিষ্পত্তি করে থাকেন।

দীর্ঘ দিন বিচারকের পদ শুন্য প্রসংঙ্গে চট্টগ্রাম বারের সাবেক সভাপতি এডভোকেট জনাব রেজাউল করিম, দুদক পিপিএডভোকেট মুজিবুর রহমান চৌধুরী, চট্টগ্রাম বারের সাধারন সম্পাদক এডভােকেট জিয়া উদ্দিন আহমেদ বলেন, দীর্ঘ দিন বিচারক না থাকায় বিচারপ্রার্থী জনগণ ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তারা দ্রুত বিচারক নিয়োগের জোর দাবী জানান।

এসব প্রসঙ্গে অ্যাডভোকেট আবুল কাশেম মোহাম্মদ ইউনুছ জানান,আদালতে দীর্ঘদিন বিচারক না থাকায় বিচারপ্রার্থীদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। এমনও ক্রিমিনাল মামলা আছে, যে বাদী মামলায় দায়ের করেছে, এখন বিবাদী মৃত্যুশয্যায়,তবুও মামলা নিষ্পত্তি হয়নি যার ফলে চরম সংকট তৈরী হচ্ছে। দূর-দূরান্ত থেকে বিচারপ্রার্থীরা আদালতে আসছে অথচ বিচারকশূন্যতায় মামলার কার্যক্রম চলছে না। এ কারণে বিচারপ্রার্থীদের অর্থ ও সময় দুটিই নষ্ট হচ্ছে। পাশাপাশি মামলার কার্যক্রম দীর্ঘায়িত হচ্ছে। সৃষ্টি হচ্ছে মামলার জট। ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বিচারপ্রার্থীরা।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের বেঞ্চসহকারী (সেরেস্তাদার) ও চট্টগ্রাম জজ শীপ কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের সভাপতি জনাব মোঃ সাইফুদ্দিন পারভেজ জানান, উক্ত আদালতে বর্তমানে দুর্নীতির বিশেষ মামলা ২৮১টি, দায়রা মামলা ৪০৯টি, স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল মামলা ৩৮টি, দেওয়ানী আপীল মামলা ১০০টি, ফৌজদারী আপীল মামলা ৫২টি, ফৌজাদারী রিভিশন মামলা ২২টি, দেওয়ানী মিছ আপীল- ১৭টি। সর্বমোট প্রায় ৯১৯ টি মামলা বিচারাধীন।

এদিকে চট্টগ্রামের ৯০টি আদালতে ঝুলছে দুই লাখের বেশি মামলা। এর মধ্যে ২০টি আদালতে দীর্ঘদিন রয়েছে বিচারকশূন্যতা। এ কারণে ওইসব আদালতের বিচার প্রার্থীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।বিচারক না থাকায় দিনের পর দিন মামলার নতুন তারিখ পড়ছে। একই সঙ্গে প্রতিদিন নতুন নতুন মামলা দায়ের হওয়ায় এসব আদালতে বাড়ছে মামলার জট।

জি.এস / চট্টগ্রাম,সিটি নিউজ।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.