খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের আড়তে অভিযানের প্রতিবাদে ব্যবসায়ীদের ধর্মঘট !
সিটি নিউজঃ চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের বিভিন্ন পেঁয়াজের আড়তে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে জরিমানার প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে নেমেছে ব্যবসায়ীরা।
আজ সোমবার (৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টা থেকে এ আন্দোলন শুরু হয়। আন্দোলনের কারণে বন্ধ রয়েছে দেড় শতাধিক দোকানপাট।
সন্ধ্যায় ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি-সম্পাদকের সাথে বৈঠকে বসে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, বর্ডারে সিন্ডিকেট ব্যবসা হচ্ছে। সিন্ডিকেট ব্যবসার কারণে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়াই বেচাকেনা চলছে। তারা মূলত আমদানিকারক থেকে পণ্য ক্রয় করেন। এসব পণ্যের ব্যবসা করে পাচ্ছেন কিছু কমিশন। আমদানিকারকেরা বেচাকেনার সময় তাদের কোন ধরনের কাগজপত্র দেননা। যার ফলে পণ্যের বিপরীতে তারা কোন কাগজপত্র ভ্রাম্যমাণ আদালত কিংবা প্রশাসনকে দেখাতে পারেন না।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ব্যবসায়ী সমিতিকে না জানিয়ে প্রশাসনের এমন অভিযান কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। প্রশাসনের নিয়ম আগে ব্যবসায়ী সমিতির সাথে আলাপ-আলোচনা করা। কোন ধরনের আলাপ আলোচনা ছাড়া ব্যবসায়ীদের জরিমানার মুখে ফেলা কোনভাবেই কাম্য নয়।
অন্যদিকে আমদানিকারকেরা বলছেন, কখনো বেশি আবার কখনো ক্রয়মূল্যের চেয়ে কম দামে বেচাকেনা চলে। যখন কম দামে বেচাকেনা চলে, সেদিন তারা আসেন না।
মেসার্স মোহাম্মদিয়া বাণিজ্য বিতানের স্বত্বাধিকারী হাজী মিন্টু সওদাগর বলেন, পেঁয়াজ-রসুনের দাম বৃদ্ধিতে ব্যবসায়ীদের কোন হাত নেই। আপনারা বর্ডারে গিয়ে দেখেন সিন্ডিকেট কাদের হাতে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যবসায়ী এসেছে চলেও গেছেন। আগে ছিল পঁচিশটি বাণিজ্য বিতান, বর্তমানে আছে ১শ’ ২০টিরও বেশি। যারা সিন্ডিকেট তাদের প্রতিনিধি দু’দেশেই আছে। এপারের টাকাও তাদের, ওপারের টাকা ও তাদের।
আমাদের এ আন্দোলন অনির্দিষ্টকালের জন্য। আজ বিকেলে সংগঠনের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের সাথে বসে এর কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আজগর আলী নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, আমি পঁচিশ বছর এ ব্যবসায়। কখনও লাভ কখনও লস দিয়ে ব্যবসা করে যাচ্ছি। ১শ’ টাকার আদা বিশ টাকা বিক্রয় করলে তখন কেউ দেখতে আসেনা। যখন আমরা আশি টাকার পেঁয়াজ ১শ’ টাকায় বেচি তখনই ঝামেলা শুরু হয়।
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ওমর ফারুক বলেন, আমি তাদের কাছে আমদানির কাগজপত্র চেয়েছিলাম তারা তা দেখাতে পারেন নি। যারা আমদানিকারক থেকে মাল ক্রয় করেন তাদের ও কোন দলিল নেই। তারা ফোন কলে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন। মুখে মুখে তো কোন ব্যবসা হতে পারে না। পণ্যের বিপরীতে বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেননি তাই আমি আইননুযায়ী জরিমানা করেছি।
উল্লেখ্য গত কয়দিন ধরে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে পেঁয়াজের দাম। প্রতি কেজি পেঁয়াজে অন্তত ২০ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। অনেক আড়তদার এভাবে ইচ্ছেমতো দামে পেঁয়াজ বিক্রি করছিল। খবর পেয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালিয়ে দেখতে পান, মূল্য বাড়ানোর এমন অরাজকতা ঘটছিল বেশ কিছুদিন ধরেই।
গতকাল রবিবার (৬ সেপ্টেম্বর) পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল রাখতে দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত খাতুনগঞ্জে এ অভিযান পরিচালনা করেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শিরিন আক্তার ও উমর ফারুক। অভিযানে অতিরিক্ত দামে পেঁয়াজ বিক্রি এবং ইনভয়েস না রেখে বিক্রির প্রমাণ মেলায় ৭৭ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
মূল্যবৃদ্ধিসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে ১০ আড়তদারকে এই জরিমানা করা হয়েছে। এর মধ্যে মেসার্স বরকত ভান্ডার, মেসার্স গোপাল বাণিজ্য ভান্ডার, মেসার্স হাজী মহিউদ্দিন সওদাগর, মেসার্স সেকান্দার অ্যান্ড সন্স, মোহাম্মদীয়া বাণিজ্যালয়, মোহাম্মদ জালাল উদ্দীনকে ১০ হাজার টাকা এবং গ্রামীণ বাণিজ্যালয়, আরাফাত ট্রেডার্স, মেসার্স বাগদারিক করপোরেশনের এই তিন আড়তদারকে পাঁচ হাজার ও শাহাদাত ট্রেডার্সকে দুই হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।