ওমানে বাংলাদেশ সোস্যাল ক্লাবকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এক সময়ের নির্যাতিত, বঞ্চিতরা
জুবায়ের সিদ্দিকী/দিলীপ তালুকদারঃ ওমানস্থ বাংলাদেশ সোস্যাল ক্লাব ওমান। এ সংগঠনের কর্ণধার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, সমাজ সেবক ও সুদক্ষ সংগঠক সিরাজুল হকের নেতৃত্বে প্রতিভু সাফল্য অর্জন করেছে। বিশেষ করে ওমানে বাঙালি প্রবাসীদের কল্যাণে সব কাজ করে যাচ্ছে এ সংগঠন। বিশিষ্ট সংগঠক সিরাজুল হক সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার পর সোস্যাল ক্লাবের জনবান্ধব সব কর্মসূচী সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে।
বিশেষ করে ওমান প্রবাসীদের কল্যাণে ওমানের সালালা প্রদেশে সোস্যাল ক্লাবের শাখা প্রতিষ্ঠার অনুমোদন, সোস্যাল ক্লাবে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ছবি উত্তোলন করা। যেটা ওমানের জাতির পিতা সুলতান কাবুজ আল সাঈদ এর সাথে শোভা পাচ্ছে। এগুলো করতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। একাজগুলো করতে ওমান সরকারের অনুমোদন অত্যাবশ্যকীয় ছিল। তা সম্ভব হয়েছে ক্লাবের সভাপতি সিরাজুল হকের সঠিক দিক নির্দেশনা এবং ক্লাবের বর্তমান কার্যকরী বোর্ড মেম্বারদের সহযোগিতার কারনে।
ওমান ‘বাংলাদেশ সোস্যাল ক্লাব’ ওমান সরকার অনুমোদিত প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য একমাত্র একটি স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। ওমানে বাংলাদেশীদের জন্য অন্য কোন সংগঠনের ওমান সরকারের অনুমোদন নেই। অন্যকোন সংগঠন করলেও সেটা ওমানে আইনত অপরাধ। সে ব্যাপারে ওমান সরকারের কড়া বিধি নিষেধও রয়েছে।
বিশিষ্ট সংগঠক সিরাজুল হক বলেন, ১৯৯৫ সালে ওমানস্থ বাংলাদেশ সোস্যাল ক্লাব ওমান প্রতিষ্ঠিত হয়। সোস্যাল ক্লাব ও ওমানস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের সহযোগীতায় প্রতিষ্ঠিত হয় ওমান বাংলাদেশ স্কুল। বাংলাদেশ সোস্যাল ক্লাব ও বাংলাদেশ স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন তৎকালীন রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অবঃ) আমিন আহমদ চৌধুরী। পরবর্তীতে দীর্ঘ ২০/২২ বছর যাবত যারা ক্লাব পরিচালনা করেছেন তারা ক্লাবের কোন কার্যালয় করতে পারেনি। শুধুমাত্র একটি কক্ষের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল তাদের কার্যক্রম। এমনকি প্রবাসীদের কল্যাণে কোন দৃশ্যমান কাজও করতে পারেনি। শুধু নিজেদের পদপদবী নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন। বিগত কমিটির অনেকেই নিজেকে বর্তমানে আওয়ামী লীগার দাবী করলেও আওয়ামী লীগের স্বপক্ষে দৃশ্যমান কোন কাজ তারা করতে পারেনি। নিজেদের স্বার্থের জন্য আওয়ামী লীগার দাবী করে যাচ্ছে।
তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশ সোস্যাল ক্লাব পরিচালনার ভার বর্তমান যাদের উপর ন্যস্ত তাদেরকেই একসময় এই ক্লাব থেকে টার্মিনেশন করা হয়েছিল। ২০১০ সালে সোস্যাল ক্লাবের বর্তমান সভাপতি আমি সিরাজুল হক, সহ-সভাপতি রেজাউল করিম, সাধারণ সম্পাদক এম এন আমিনকে তখনকার কমিটি টার্মিনেট করে। আমাদের অপরাধ ছিল আমরা তখন ওমান বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাথে যুক্ত ছিলাম। কিন্তু ইতিহাস বড়ই নির্মম। সেদিন যারা এই অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তারা আজ ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বর্তমান কমিটি দায়িত্ব নেবার পর ক্লাবের আমূল পরিবর্তন দৃশ্যমান হয়। সোস্যাল ক্লাব কমিটির সাথে প্রবাসীদের যে একটা দূরত্ব ছিল তা মিঠিয়ে সবাইকে সাথে নিয়ে একযোগে কাজ করার উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছে বর্তমান কমিটি। বর্তমান কমিটি দায়িত্ব নেবার পর একটি তিনতলা ভবন ভাড়া নিয়ে ক্লাবের সুসজ্জিত কার্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। ভবনের নীচ তলায় গড়ে তোলা হয় একটি হল রুম। ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রতিষ্ঠাকালীন রাষ্ট্রদূত প্রয়াত আমিন আহমদ চৌধুরীর নামে এই হল রুমটির নাম করণ করা হয়।
তিনি বলেন, বর্তমান কমিটি প্রবাসীদের স্বার্থে ওমানের বিভিন্ন হাসপাতালের সাথে চুক্তি করে বাঙালি প্রবাসীদের জন্য ৩০% ডিসকাউন্টের ব্যবস্থা করা হয়। এই ক্লাবের আর একটি বড় সাফল্য হলো ক্লাবের শাখা কমিটি করা। ক্লাবের বিগত কোন কমিটি ক্লাবের কোন শাখা করতে পারেনি। ওমান সরকারের সাথে দফায় দফায় সাক্ষাৎ করে সালালা প্রদেশে বাংলাদেশ সোস্যাল ক্লাবের শাখা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হই। বর্তমানে ওমানের বিভিন্ন প্রদেশে আরো ২টি শাখার প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম অচিরেই শুরু হবে।
জানা গেছে, বিগত কমিটিগুলো এ শাখার কোন অনুমোদন নিতে না পারলেও বর্তমান কমিটির দক্ষ দূরদর্শী নেতৃত্বের কারনে সালালা শাখা কমিটির অনুমোদন নিতে সক্ষম হয়। বিশেষ করে বর্তমান কমিটির সভাপতি তার দৃঢ়চেতা মনোবল ও সঠিক নেতৃত্বের কারনে এটা সম্ভব হয়েছে প্রবাসী নেতৃবৃন্দরা মনে করেন।
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সিরাজুল হক আরো বলেন, বাংলাদেশ সোস্যাল ক্লাবের উদ্যোগে প্রতিবছর বিভিন্ন জাতীয় দিবস পালন করা হয়। স্বাতীনতা দিবস, বিজয় দিবস, ঈদ পুণর্মীলনী, সাথে ১লা বৈশাখে বৈশাখী উৎসব জাকজমকভাবে পালন করা হয়। সকল প্রবাসীদের আনন্দ দেয়ার জন্যে বৈশাখী উৎসবে দেশের আমেজে বিভিন্ন ইভেন্ট পরিচালনা করা হয়। সেখানে বলী খেলা থেকে শুরু করে কাবাডি, ঘুড়ি উড়ানো, বালিশ খেলা সব থাকে। এসমস্থ আয়োজনে প্রবাসীরা একদিনের জন্য হলেও দেশীয় কৃষ্টি সংস্কৃতি উপভোগ করতে পারে।
তিনি বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় সাফল্য সোস্যাল ক্লাবে বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রাহমানের ছবি উত্তোলন করা। দীর্ঘ ২৩ বছর পর ক্লাবে বঙ্গবন্ধুর ছবি উত্তোলন করা হয়। সেখানে এখন শোভা পাচ্ছে ওমান ও বাংলাদেশের জাতির জনকের পাশাপাশি ২টি ছবি।
ওমান প্রবাসী ওয়াহেদ আহমেদ রাজন নামে একজন তার ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ওমানস্থ বাংলাদেশ সোস্যাল ক্লাবে দীর্ঘ পঁচিশ বছরেও ঠাঁই হয়নি গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের স্থপতি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি। আমরা কতই না নির্বোধ জাতি, অথচ এই প্রথম বর্তমান সম্মানিত সফল সভাপতি সিরাজুল হক এর হাত ধরে বঙ্গবন্ধুর ছবি উঠে সোস্যাল ক্লাবে। এর আগে যখনই যেতাম, তখনই কেমন যেন শূন্য মনে হতো, আর এখন যদি যাই মনটা ভরে যায় পিতার ছবি দেখে। সাথে শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা সিরাজুল হকের প্রতি ।
ইসতিয়াকুল ইসলাম ইসতি নামে একজন লেখেন, পুরো পৃথিবী যখন স্তব্ধ, প্রতিটি মানুষ যখন ভবিষ্যত-বর্তমান নিয়ে উৎকণ্ঠিত, প্রবাসীরা যখন দিগ্বিদিক আশাহীন হয়ে উদভ্রান্তের মত ছুটছে। ঠিক তখনি ওমান প্রবাসীদের জন্য আলোকবর্তিকা হয়ে সবসময়ের ন্যায় হাজির হয় বাংলাদেশ সোস্যাল ক্লাব,ওমান। সোস্যাল ক্লাবের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় আটকে পড়া অসহায় প্রবাসী থেকে শুরু করে অসুস্থ ব্যক্তিসহ সকলের দিকে নিঃস্বার্থভাবে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়া হয়। শুধুমাত্র সোস্যাল ক্লাবের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার কারণে এই বৈশ্বিক মহামারির মধ্যেও প্রবাসীগণ স্বস্তির নিঃশ্বাস কিছুটা হলেও ফেলতে পারছেন। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ সোস্যাল ক্লাবের এরূপ কর্মকান্ড বেগবান করার জন্য সকল প্রবাসী সার্বিকভাবে সোশ্যাল ক্লাবে উত্তরোত্তর উন্নতি ও মঙ্গল কামনা করছে। এজন্য তিনি ক্লাবের সভাপতি বিশিষ্ট সংগঠক সিরাজুল হককে ধন্যবাদ জানান।
বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাস নিয়ে ওমানস্থ বাংলাদেশ সোশ্যাল ক্লাবের সভাপতি সিরাজুল হক বলেন, বিশ্বের এই মহামারী করোনাভাইরাসে আতঙ্কে চতুর্মুখী সংকটে পড়েছে প্রবাসী বাংলাদেশী ব্যবসায়ী ও চাকুরীজীবি শ্রমিকেরা। ওমানসহ পৃথিবীর মানুষ আজ গৃহবন্দী হয়ে রয়েছে, একাকিত্বে দিন কাটাচ্ছে প্রবাসী বাংলাদেশীরা।
তিনি বলেন, প্রায় ৭ লক্ষাধিক বাঙালি প্রবাসী ওমানে বসবাস করেন। এই করোনাকালে এসব প্রবাসীদের মাঝে অনেকেই কর্মহীন ও ঘরবন্দী হয়ে রয়েছেন। অনেকে আবার ভিসা সমস্যায় আছেন। প্রবাসে কর্মহীন ও ঘরবন্দীদের খাদ্যসামগ্রী ও মাস্ক, হ্যান্ড সেনিটাইজার বিতরণ করেছি। এ ত্রাণ বিতরণ করতেও সরকারের অনুমোদন লাগে। বাংলাদেশী অভিবাসীদের মাঝে ত্রাণ বিতরণের সরকারী অনুমোদন নিয়ে ওমানে বাংলাদেশী একমাত্র নিবন্ধিত সংগঠন “বাংলাদেশ সোস্যাল ক্লাব ওমান” প্রবাসীদের মাঝে ত্রাণ কাজ চালিয়েছে।
বিশিষ্ট সংগঠক ও ব্যাবসায়ী সিরাজুল হক বলেন- আমরা বাংলাদেশ সোশ্যাল ক্লাবের উদ্যোগে ক্লাবের নির্বাহী সদস্য, আজীবন সদস্য ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের সহযোগিতায়, করেনা ভাইরাসের ফলে সৃষ্ট দূর্যোগে কর্মহীন হয়ে পড়া প্রায়, (৩ হজার) প্রবাসীদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা মাস্কাটসহ বিভিন্ন অঞ্চলে তালিকভুক্ত করে ক্লাবের নিজ উদ্যোগে কর্মহীনদের বাসা বাড়িতে গিয়ে উক্ত ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছি। এর মধ্যেও অনেক বাঙালিকে দেশে যেতে সহযোগিতা করতে পেরেছি।
তিনি বলেন, অবৈধভাবে বসবাসরত কিছু বাংলাদেশী প্রবাসী সাধারণ ক্ষমা বা আউট পাশের অপেক্ষায় আছেন। আউটপাস এটি ওমান সরকারের উপর নির্ভর করে। ওমানে অবস্থানরত অবৈধ অভিবাসীরা দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ ক্ষমার অপেক্ষায় দিন গুনছে, সেটি দূতাবাসসহ সবার নজরে আছে। এসব নাগরিকদের বিনা জরিমানায় দেশে ফিরে যাবার সুযোগ প্রদানের জন্য দূতাবাস ওমানের মহামান্য সুলতানের নিকট সাধারণ ক্ষমার আবেদনসহ বাংলাদেশ দূতাবাস কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যহত রেখেছে।
তিনি ওমানে অবস্থানরত বাংলাদেশীদের ওমানের আইন-কানুন মেনে চলতে পরামর্শ দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের ভাবমূর্তি এবং ওমানের সাথে সুসম্পর্ক ধরে রাখতে হলে অবশ্যই ওমানের নিয়মনীতি মেনে চলতে হবে। ওমানে অবস্থানরত প্রবাসীদের যাবতীয় সমস্যায় দূতাবাসের পরামর্শ নিতেও বলেন তিনি। ওমানে অবস্থিত বাংলাদেশি প্রবাসীদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে এবং সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে থাকার পরামর্শ দেন। বর্তমানে কিছু অসাধু বাংলাদেশিদের কারণে ওমানে বাংলাদেশিদের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। বিদেশের মাটিতে কেউ যেন অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে না পড়ে সেদিকে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান বাংলাদেশ সোশ্যাল ক্লাব ওমান এর সভাপতি সিরাজুল হক। করোনার এই পরিস্থিতি সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সকল প্রবাসীদের চলাফেরা করাও অনুরোধও জানান তিনি।
চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার কৃতি সন্তান সিরাজুল হক দীর্ঘদিন ধরে পরিবার নিয়ে ওমানে বসবাস করে আসছেন। ওমানে বাঙালি প্রবাসীদের মাঝে সফল ব্যবসায়ী সিরাজুল হকের রয়েছে ২ ছেলে ১ মেয়ে। বড় ছেলে বিবিএ শেস করে ব্যবসা করছেন। একমাত্র মেয়ে আইটি ইঞ্জিরিয়ারিং শেষ করে উচ্চ শিক্ষা গ্রহনের জন্য কানাডার অটোয়ায় কার্লটন ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নরত। আর ছোট ছেলে বাংলাদেশ স্কুল মাস্কাটে এ লেভেল এ অধ্যায়নরত।