পেঁয়াজের বাড়তি ঝাঁজে নাকাল ক্রেতারা

0

দিলীপ তালুকদার, সিটি নিউজঃ চট্টগ্রামের অন্যতম পাইকারী বাজার খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজের আড়তে পেঁয়াজের চাহিদা ও দাম দুটোই বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। ক্রেতারা খুচরা দোকানের চাইতে ভিড় জমাচ্ছেন পাইকারী বাজারে। সাধারণ ক্রেতারা পেঁয়াজের ঝাঁজে নাকাল।

প্রতিবেশী দেশ ভারত বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করায় দেশের সবচেয়ে বড় ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে বাড়ছে পণ্যটির দাম। মূলত অসাধু কিছু ব্যবসায়ী পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের খবরে হু হু করে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। অনেকে মজুদ করে রাখছে।

আজ মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকালে খাতুনগঞ্জে গিয়ে দেখা যায় পাইকারী বাজারে খুচরা ক্রেতাদের বিড় ছিল লক্ষ্যনীয়। সাথে রয়েছে নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা দোকানদাররা।

দেখা গেছে, যে পেঁয়াজ গতকাল সোমবার ৩৭ টাকা বিক্রি হলেও বিকেলে দাঁড়ায় ৪৫ টাকা। আজ মঙ্গলবার তা বেড়ে ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ৩০ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। নগরীর ১০ টি পয়েন্টে ১০ টি ট্রাকে ২শ কেজি করে পেঁয়াজ বিক্রি করছে। একজন ২কেজি করে পেঁয়াজ কিনতে পারবেন। তাই প্রতি ট্রাক থেকে মাত্র ১শ জন পেঁয়াজ পাবেন। সে হিসেবে সারা নগরীতে মোট ১ হাজার জন ২ কেজি করে পেঁয়াজ পাবেন।

এ ব্যাপারে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের অফিস প্রধান জামাল উদ্দিন আহমেদ সিটি নিউজকে জানান, নগরীর যে ১০ টি স্পটে টিসিবির পণ্য বিক্রি চলছে কাল থেকে তা ৫টি ট্রাক বাড়িয়ে ১৫টি ট্রাকে করে নগরীর ১৫ টি স্পটে পেঁয়াজসহ টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হবে। আগে ২শ কেজি পেঁয়াজ থাকলেও কাল থেকে ৩শ কেজি করে পেঁয়াজ বিক্রি করা হবে। তবে কাল থেকে জনপ্রতি ১ কেজি করে পেঁয়াজ কিনতে পারবেন। এ কার্যক্রম আগামী ১ অক্টোবর পর্যন্ত চলমান থাকবে।

এদিকে ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণায় দাম মাত্রাতিরিক্ত বাড়বে এমন আশঙ্কায় খুচরা বিক্রেতা ও মুদির দোকানিরা ভিড় করছেন খাতুনগঞ্জের আড়তে। সপ্তাহখানেকের মধ্যে বিয়ে, মেজবান, ওরসের দিন নির্ধারিত আছে এমন অনেক গ্রাহকও আড়ত থেকে পেঁয়াজ কিনে রাখছেন। অনেকে অধিক মুনাফার জন্য পেঁয়াজ গোডাউন ভর্তি করে রেখেছেন বলে অভিযোগও করছেন সাধারণ ক্রেতারা।

খাতুনগঞ্জের ব্যাবসায়ী মো. ইলিয়াছ জানান আজ সকালে ৫-৬ ট্রাক পেঁয়াজ এসেছে বিভিন্ন আড়তে। তবে তা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। সরবরাহ না বাড়লে দাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি জানান, সোমবার সকালে ৩৭ টাকায় বিক্রি হয়েছে ভারতের পেঁয়াজ। বিকেলে দর উঠে ৪৫ টাকায়। মঙ্গলবার সকাল থেকে ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হয় আড়তে। এদিকে পাইকারি বাজারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে খুচরা বাজারেও বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। খুচরায় ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি পেঁয়াজ।

এদিকে দেরিতে হলেও ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে পিঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের খবর জানিয়েছে। সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য বিভাগ থেকে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হলো, বিদেশে পিঁয়াজ রফতানি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য বিভাগের মহাপরিচালক অমিত যাদব স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, ১৯৯২ সালের ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্য আইনের ৩ ধারা অনুযায়ী পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত সবধরনের পিঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ থাকবে। তবে পিঁয়াজের কাঁটা টুকরা ও গুঁড়া এ নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে।

ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারে পিঁয়াজের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। সে কারণে ভারত নিজ দেশের বাইরে পিঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এর আগে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরের সিএন্ডএফ এজেন্ট শংকর দাস জানিয়েছিলেন, কয়েকদিন ধরে ভারতের বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টি ও বন্যা দেখা দিয়েছে। এ কারণে ভারতের সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদিত হওয়া অঞ্চলগুলো তলিয়ে গেছে। এছাড়া সেখানকার বাজারে পিঁয়াজের দামও বেড়েছে। নিজ দেশে পিঁয়াজের দাম ঠিক রাখতেই হয়তো তারা বাংলাদেশে পিঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ রেখেছে।

খাতুনগঞ্জের আমদানিকারকরা জানান, চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা আদা-রসুন আমদানি করলেও সচরাচর পেঁয়াজ আমদানি করেন না। তবে সংকট কালে মিশর, চীন, তুরস্ক, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করেন।এখন পরিস্থিতি বুঝে বিকল্প দেশ থেকে আমদানির প্রস্তুতি নিচ্ছেন অনেক ব্যবসায়ী।

ভারতে রূপালী ইলিশ পাঠালেও বাংলাদেশে পেঁয়াজ পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে ভার। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে আলোচনা ও সমালোচনার ঝড়।

 

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.