মিয়ানমার দুই সেনা সদস্যকে ফেরত চেয়েছে

0

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ মিয়ানমারের সামরিক কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যার অভিযোগ স্বীকারকারী দুই সেনাকে ফেরত চেয়েছে। দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া মাইয়ো উইন তুন ও জো নাইং তুং নামের এই দুই সেনা সদস্য এখন নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগের আন্তর্জাতিক আদালতের হেফাজতে রয়েছেন।

মিয়ানমার সামরিক কর্তৃপক্ষের দাবি, পলাতক ওই দুই সেনাকে অবিলম্বে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো উচিত। খবর দ্য ইরাবতীর

গত সপ্তাহে পলাতক ওই দুই সেনা সদস্য জানিয়েছিল, কর্তৃপক্ষের আদেশে আরাকানে তারা রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর গণহত্যা ও ধর্ষণযজ্ঞ চালিয়েছিল। ওই দুই সেনা সদস্য ভিডিওতে সম্প্রতি এই দায় স্বীকার করে বলে মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা সংস্থা ফর্টিফাই রাইটস জানিয়েছে। নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গাদের বক্তব্যের সঙ্গে সেনা সদস্যদের বক্তব্যের মিল পাওয়া গেছে।

পলাতক দুই সেনা সদস্য আরাকান আর্মির কাছে পৃথক পৃথকভাবে গণহত্যা ও ধর্ষণযজ্ঞে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। আরাকান আর্মি এই তথ্য সরবরাহ করেছে ফরটিফাই রাইটসের কাছে। ব্যক্তিগত এই স্বীকারোক্তি গত সপ্তাহে প্রকাশিত হয়েছে।

দুই সেনাকে ফেরত পাঠানোর পেছনে যুক্তি হিসেবে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল জাও মিন তুন বলেছেন, মিয়ানমারে স্বাধীন বিচার বিভাগ রয়েছে এবং বিচার বিভাগ তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাচ্ছে, সেহেতু পলাতক ওই সেনাদের বিচার মিয়ানমারেই হওয়া উচিত। আন্তর্জাতিক আদালতে তাদের তোলা মানে মিয়ানমারের বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ওপর অযাচিত হস্তক্ষেপ। তাছাড়া এটা আন্তর্জাতিক আইনেরও পরিপন্থি।

ইরাবতীর সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ওই মুখপাত্র বলেন, ওই দুই সেনা সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সুতরাং স্বাভাবিকভাবেই এখন তাদের নিজের দেশে ফেরত পাঠানো উচিত।

তিনি বলেন, মিয়ানমারের আদালতে রাখাইন প্রদেশে ‘গণহত্যা’র তদন্ত শুরু হয়েছে। রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের ব্যাপারে আদালত তদন্ত শুরু করেছে। তাই জবানবন্দি নেয়ার জন্য মিয়ানমারের আদালত পলাতকদের তাদের কাছে সোপর্দ করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছে।

মিয়ানমারের সরকার ২০১৭ সালে রাখাইন প্রদেশে সংঘটিত সহিংসতাকে গণহত্যা বলা যায় কিনা সে ব্যাপারে তদন্ত চালাচ্ছে। তবে সরকরি পৃষ্ঠপোষকতায় গঠিত স্বাধীন তদন্ত কমিশন গণহত্যা সম্পর্কে যে তথ্য দিয়েছে, তা জাতিসংঘের দেয়া তথ্যকে সমর্থন করে না। তবে তারা বলেছে, রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নাগরিক অধিকার লঙ্ঘনের মতো ঘটনা ঘটতে পারে।

মাইয়ো উইন তুন ও জাও নেয়িং তুন আরাকান আর্মির প্রকাশিত এক ভিডিওতে রাখাইনে সংঘটিত ‘গণহত্যা’র কথা স্বীকার করেছেন। তারা বলেছেন, ২০১৭ সালে তারা নিজেরাই প্রায় ১৮০ জন রোহিঙ্গা পুরুষকে হত্যা করেছেন। তাউং বুজার গ্রামে ধর্ষণের কথাও স্বীকার করেছেন তারা।

ফরটিফাই রাইটস বলেছে, আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে ওই দুই সেনা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে গিয়ে সুরক্ষা প্রার্থনা করে। বাংলাদেশ তাদের দ্য হেগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের হেফাজতে পাঠিয়ে দেয়। সেখানে তারা আদালতের সাক্ষী হিসেবে রয়েছেন।

দ্য হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার দায়ের করা গণহত্যা মামলার বিচার কাজ চলছে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.