নির্বাচন কমিশন সরকারের ঢোল-তবলায় পরিণত হয়েছেঃ রিজভী

0

সিটি নিউজ ডেস্কঃ বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার স্বীকার করে নিলেন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের রাতের ভোটের কথা। তার নেতৃত্বেই জাতির চরম সর্বনাশ করা হয়েছে।মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। দেশ থেকে সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থা নির্বাসনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। গণতন্ত্রের সমাধি হয়েছে। সেটার সম্পূর্ণ দায় আপনার। অগণতান্ত্রিক নাৎসীবাদী সরকারের প্রধান সঙ্গী আপনি।সরকারের সাথে লেজুড়বৃত্তি করে আপনারা নির্বাচন কমিশনকে এখন এক হাস্যকর তামাশার প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন। নির্বাচন কমিশন সরকারের ঢোল-তবলায় পরিণত হয়েছে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) নেতৃত্বেই জাতির চরম সর্বনাশ করা হয়েছে মন্তব্য করে বলেছেন, ‘অগণতান্ত্রিক নাৎসিবাদী সরকারের প্রধান সঙ্গী আপনি।’

আজ বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ভার্চয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কড়া সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বলেছেন-‘দেশে কখনও রাতের বেলা কোনো ভোট হয়নি। পাবনা-৪ আসনের উপ-নির্বাচনে ভোটের দিন সকালে কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পাঠানো হবে, রাতে ভোট হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আবার বলেছেন উপ-নির্বাচনে রাতে ভোট হওয়ার সুযোগ নেই।’ ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদে ভোট কেলেঙ্কারির পর নুরুল হুদা বলেছিলেন, ‘ভোটের আগের রাতে ব্যালটে সিল মারা নিয়ে অভিযোগ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও উঠেছে।

এর আগেও একাধিক সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এমন ঘটনায় বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে নানা প্রশ্নের মুখে পড়েছে নির্বাচন কমিশন।’ তিনি বলেছেন, ‘রাতে ব্যালট বাক্স ভর্তি করার জন্য কারা দায়ী, সেটা বলার সুযোগ নির্বাচন কমিশনের নেই।’ সিইসি’র নিকট আমাদের প্রশ্ন-এটা বলার সুযোগ নির্বাচন কমিশনের নেই, তা বুঝলাম, তবে সেই সুযোগটা কার আছে সেটা তো আপনি জানেন। কারণ আপনাদেরকে কে ইন্সট্রাকশন দিয়েছেন রাতে ভোট করার জন্য সেটা তো আপনাদের অজানা থাকার কথা নয়।’

বিএনপির এই শীর্ষনেতা বলেন,’২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের সংসদ নির্বাচন যে আসলে ২৯ তারিখ দিবাগত রাতেই হয়ে গিয়েছিল, সেটি এখন আর কারো কাছে গোপন নেই। দেশ-বিদেশে কোথাও সেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। দেশ থেকে নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে নির্বাচন কমিশন নামের ঠুঁটো জগন্নাথ প্রতিষ্ঠান এখন কুম্ভকর্ণের ঘুম দিয়েছে। এখন মাঝে মাঝে জেগে সুষ্ঠু ভোট হবে বলে বক্তব্য বিবৃতি দিলেও জনগণ তা বিশ্বাস করে না।

কারণ আপনি দিনের ভোটেও ভোটারদের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে ভোটকেন্দ্রে আসতে চতুস্পদ প্রাণীদের অধিকার দিয়েছেন। এই পরিস্থিতি নির্বাচন কমিশনের অসৎ অনাচারের সারাংশ মাত্র। এছাড়াও নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বিরোধী দলের প্রার্থীদের বাদ দেয়া ও হয়রানী করাসহ ভোটারদেরকে ভয় দেখানো, মিথ্যা মামলা, গ্রেফতারের হিড়িক ইত্যাদি সরকারের সুষ্ঠু নির্বাচনবিনাশী কার্যক্রমের প্রধান সহায়তাকারি হিসেবে নির্বাচন নামক বিষয়টির অস্তিত্বই আপনি ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছেন। নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতাকে অবৈধ সরকারের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। জালিয়াতির নির্বাচনকে আপনি (সিইসি) বৈধ বলে ঘোষনা দিয়েছেন। গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার প্রধান কারিগর হিসেবে আপনার নাম ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

রিজভী বলেন,’গত দুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন-করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসছে, প্রস্তুতি নিন। এর পরদিন তথ্যমন্ত্রী একই কথা বলেছেন। গতকাল স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন করোনা ভাইরাসের সেকেন্ড ওয়েভ বা দ্বিতীয় দফা সংক্রমণ চলছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এর সঙ্গে দ্বিমত পোষন করেছেন। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেকের বক্তব্যকে খন্ডন করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, করোনার দ্বিতীয় দফা সংক্রমণ বা সেকেন্ড ওয়েভ এসেছে বলতে হলে কমপক্ষে ১৫ দিনের ডাটা থাকবে, যেখানে গত ১৫ দিন ধরে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে এমন তথ্য নির্দেশ করবে। কিন্তু বাংলাদেশে স্বাস্থ্য অধিদফতর দৈনিক করোনার যে তথ্য দিচ্ছে তাতে দেখা যাচ্ছে যে, বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ কমছে।

তিনি বলেন,’স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য থেকে ভাইরোলজিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের সেকেন্ড ওয়েভ এখনো শুরু হয়নি। আবার তারা বলছেন, করোনার দ্বিতীয় দফা সংক্রমণ যে আসবেই, ধরাবাঁধা এমন কোনো কিছু নেই। মানুষের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর নির্ভর করবে দ্বিতীয় দফা সংক্রমণ বা সেকেন্ড ওয়েভ আসবে কি না।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে গতকাল বুধবার করোনা সন্দেহে পরীক্ষিত মোট নমুনার ১১.৭৭ শতাংশ করোনা সংক্রমিত হিসেবে শনাক্ত হয়েছে। গত ২২ সেপ্টেম্বর পরীক্ষিত মোট নমুনার ১০.৯৯ শতাংশ করোনা শনাক্ত হয়েছে। আবার ২১ সেপ্টেম্বর মোট নমুনার ১৩.৬ শতাংশ করোনা আক্রান্ত ছিল। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, এপিডেমিওলজিষ্ট অথবা ভাইরোলজিষ্টরা হিসাব মেলাতে পারছেন না যে, বাংলাদেশে গত ১ থেকে ২ সপ্তাহ করোনা সংক্রমণের হার কম-বেশি ১২ শতাংশের মতো সেখানে মন্ত্রী কিসের ভিত্তিতে বলছেন যে করোনার দ্বিতীয় ওয়েভ চলছে।

করোনার দ্বিতীয় ওয়েব নিয়ে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারের মন্ত্রীদের হঠাৎ করে বক্তব্য রহস্য ঘেরা মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, সরকারি তথ্যমতেও তো আমরা দেখছি প্রতিদিন করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা কমছে। করোনা টেস্ট অর্ধেকে নামিয়ে দিয়েছে সরকার।

অফিস-আদালতসহ সব কিছু খুলে দেয়া হয়েছে। এমন অবস্থায় সরকারের বক্তব্য শুনে মনে হচ্ছে-কোথাও কিছু ঘটছে। শেক্সপিয়ারের রচিত হ্যামলেট নাটকের একটি বিখ্যাত উক্তির কথা মনে পড়ছে-‘সামথিং ইজ রটেন, ইন দি স্টেট অব ডেনমার্ক।’ সরকার জনগণের দৃষ্টিকে ভিন্ন দিকে ফেরাতে চায়। দেশজুড়ে বড় কিছু ঘটনা আড়াল করতেই করোনা ধেয়ে আসার জিগির তোলা হচ্ছে। মিথ্যা, অসত্য, অবৈধ সত্ত্বার পতন অবশ্যম্ভাবী।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.