ধর্ষিতার আর্তনাদ ও ধর্ষকদের উল্লাস

0

জুবায়ের সিদ্দিকী, সিটি নিউজঃ বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ ক্যাম্পাসে ধর্ষণ বা গণধর্ষনের অভিযোগ নতুন নয়। যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকে তখন সেই দলের ছঅত্রনেতাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠে। এরা এতই বেপরোয়া হয়ে উঠে যে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা হতে পারে- এমনটি তারা মনে করেন না।

সর্বশেষ সিলেটের এমসি কলেজে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে গণধর্ষন ঘটনায় ছয়জনই ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। অতীতে ১৯৯৩ সালে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের এক ছাত্রীকে তুলে নিয়ে গণধর্ষণ করেন ছাত্রদল নেতা সীমান্ত, মিতুল ও জামালসহ কয়েকজন। ঐ গণধর্ষণের ঘটনায় তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যান এবং ছাত্রীর বাবাকে ডেকে সমঝোতা করে দেন।

এই ঘটনার পর ১৯৯৫ সালে আবারো পরিসংখ্যান বিভাগের এক ছাত্রীকে অর্থনীতি বিভাগের সামনে থেকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করে আগের অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতা সীমান্ত। এই ঘটনায়ও সীমান্তের কোন বিচার হয়নি। ১৯৯৮ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণের ঘটনায় দেশের সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস হয়ে উঠে উত্তপ্ত।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন মানিকের ধর্ষনের সেঞ্চুরীর স্বঘোষিত ঘোষণায় সরাদেশে প্রতিবাদের ঝড় উঠে। এই মানিক বিএনপি আমলে দলবদল করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাংগঠনি সম্পাদক ছিলেন। সে সময় প্রায় ৬মাস ক্যাম্পাস বন্ধ ছিল। ছাত্রলীগের অনেক নেতাকে বহিস্কার করা হয়। আন্দোলনের এক পর্যায়ে মানিক দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। এরপর আর মানিককে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। ২০০৪ সালে ইতালিতে মানিক হার্ট এটাকে মারা যায়।

২০০০ সালে থার্টি ফাষ্ট নাইটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বাঁধন নামে এক ছাত্রীকে লাঞ্চিত করা হয়। তখনও ক্ষমতাসীন ছাত্রনেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে। ২০১৭ সালে মিরপুর সরকারী কলেজে তৎকালীন ছাত্রলীগ সভাপতি জাহিদ মজুমদারের বিরুদ্ধে ধর্ষনের অভিযোগ তোলেন ছাত্রলীগ নেত্রী ফাতেমাতুজ জোহরা। এই ঘটনাও সে সময় বেশ তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল। এসব ঘটনায় ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনগুলো জড়িত থাকায় অতীতে উল্লেখযোগ্য কোন বিচার হয়নি। গ্রেফতার হলেও জামিনে ছাড়া পায়।

এই অপরাধীদের বিরুদ্ধে সমাজে খুব বার্তা যাচ্ছে না। এদের থামানো যাচ্ছেনা। এসব অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক কঠোর শাস্তি নিশ্চিত না হলে সমাজ ও সভ্যতার লজ্জা লুন্ঠিত হবে। আফসোস। এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের ঐতিহ্য হাইজ্যাক হয়েছে বহু আগেই। ক্যাম্পাস হলো রক্তা্ক্ত। ধর্ষিতার রক্তে রঞ্জিত। ধর্ষণ ও ধর্ষকদের উল্লাস ছিল। এরা বুভুক্ষু শকুনের দল। শতবর্ষী এই কলেজ হল কলঙ্কিত। এই সমাজ বিরোধীদের হাত অনেক লম্বা। আমাদের সমাজে দিন দিন করোনার মত ধর্ষণও বেড়ে গেছে।

এখন পত্রিকা বা টিভির খবর মানেই হত্যা, ধর্ষণ, অবৈধ সম্পদ, দুর্নীতির চিত্র। আমরা যারা জীবনের পড়ন্ত বেলায় আছি, দেখে যেতে কি পারবো সাইফুর, অর্জুনরা এই সমাজে কোন দৃষ্টান্তমূলক বিচার পাবে ! যে স্বামী তার চোখের সামনে স্ত্রীকে গণধর্ষণ করতে দেখেছে তাকে কি সান্তনার বানী জানাবে- এই সমাজ বা সভ্যজগত? আমাদের জানা নেই।

 

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.