রাউজানের শীর্ষ সন্ত্রাসী বিধান বড়ুয়ার আত্মসমর্পণ

0

রাউজান প্রতিনিধিঃ চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার শীর্ষ সন্ত্রাসী, এনডিপি ক্যাডার ও দু’ডজন মামলার আসামি বিধান বড়ুয়া আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন।

বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ বেগম ফেরদৌস আরার আদালতে তিনি আত্মসমর্পণ করেন। পরে আদালত শুনানি করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

গত ৩০ আগষ্ট রাউজান থানার একটি অস্ত্র মামলায় বিধান বড়ুয়াকে ১৭ বছরের সাজা দেন। তখন তিনি পলাতক ছিলেন।

রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী সমির দাশগুপ্ত বলেন, অস্ত্র মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি বিধান বড়ুয়া আদালতে আত্মসমর্পণ করলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

২০১৪ সালের ৪ অক্টোবর রাত ৯টায় আসামির বসতঘর থেকে অস্ত্র ও কার্তুজ উদ্ধার করে রাউজান থানা পুলিশ। এ ঘটনায় বিধান বড়ুয়ার বিরুদ্ধে পূর্ব গুজরা তদন্তকেন্দ্রের এসআই মহসিন রেজা একটি মামলা করেন। ২০১৬ সালের ২৩ নভেম্বর আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়। রায়ের আগে এ মামলায় আট সাক্ষীর মধ্যে বাদীসহ সাতজনই আদালতে সাক্ষী দেন।

উল্লেখ্য, এর আগে গত বছর ৩ জুন কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তিনি মুক্তি পান। যুদ্ধাপরাধের মামলায় ফাঁসি কার্যকর হওয়া সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত বিধান বড়ুয়া। ২০১১ সালে গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে তিনি কারাগারে ছিলেন।

বিধান বড়ুয়ার বাড়ি রাউজানের পূর্ব গুজরা ইউনিয়নের আঁধারমানিক বড়ুয়াপাড়ায়। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পার হতে না পারলেও বিধান ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। উপজেলার সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও পূর্ব গুজরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান আকতার হোসেন ওরফে রাজুর হাত ধরে শুরু হয় তাঁর উত্থান। আকতার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর বিধানের বিরুদ্ধে একটি চুরির অভিযোগ ওঠে। অভিযোগের সত্যতা পেয়ে চেয়ারম্যান তাঁকে শাস্তি দেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে বিধান আকতার হোসেনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। নব্বইয়ের দশকে তিনি প্রথমে জাতীয় পার্টি এবং পরে সাকা চৌধুরী ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি) গঠন করলে তিনি ওই দলে যোগ দেন।

সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মন জয় করতে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন বিধান বড়ুয়া। এ সময় তিনি নিজের নামে একটি বাহিনী (বিধান বাহিনী) গঠন করে পুরো রাউজান এলাকা নিয়ন্ত্রণ করতে থাকেন। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করে ১৯৯৩ সালে প্রথমেই খুন করেন পূর্ব গুজরার ইউপি চেয়ারম্যান ও তাঁর প্রথম রাজনৈতিক গুরু আকতার হোসেনকে। পরবর্তী এক দশকে তাঁর বাহিনীর হাতে রাউজানে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর অন্তত এক ডজনেরও বেশি নেতা-কর্মী নিহত হন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন মোহাম্মদ মিয়া, মোহাম্মদ নাছিম, কৃষ্ণ দত্ত, ধনা বৈদ্য, ইকবাল, জামিল, মোহরম আলী, সোহেল, লিটন, ইউসুফ মাস্টার, মোহাম্মদ রফিক প্রমুখ।

বিগত চারদলীয় জোট সরকারের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত বিধান বড়ুয়ার দাপট অব্যাহত ছিল। স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, ২০০৪ সালে ‘অপারেশন ক্লিনহার্ট’ শুরু হলে বিধান বড়ুয়া আত্মগোপনে চলে যান। ২০০৮ সালে বিধান রাউজান ত্যাগ করেন। ২০১১ সালে গ্রেপ্তার হন।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.