ব্রুনাইয়ে মানবপাচার চক্রের হোতা বিজনের সহযোগী হিমু আটক

0

সিটি নিউজ : ব্রুনাইয়ে শ্রমিক হিসেবে গিয়েছিলেন তিনি। এরপর নিজেই বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক পাঠাতে শুরু করেন। কখনও ওয়ার্ক পারমিটে, কখনও টুরিস্ট ভিসায় মানব পাচার করতেন দেশটিতে মানবপাচারকারী মেহেদি হাসান বিজন। নিজের কোন বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সি নেই। সুকৌশলে নামসর্বস্ব ১৫টি কোম্পানীর নামে চাহিদাপত্র দৈখিয়ে বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে লোক পাঠাতেন তিনি। সর্বশেষ ৪ শতাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে তিন কোটি টাকা নিয়ে ৬০ জনকে ব্রুনাইয়ে নিয়ে যায় বিজনচক্র। কাজ না পেয়ে দেশটির রাস্তায় অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটে তাদের। শেষতক পরিবারের আর্থিক সহযোগিতায় গেল জানুয়ারীতে দেশে ফিরে আসেন তারা। এরপর বিজনসহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মানবপাচার ও প্রতারনার ২১টি মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগীরা।

৩০ সেপ্টেম্বর র‌্যাব-৩ এর একটি দল বিজনের অন্যতম সহযোগী শেখ আমিনুর রহমান হিমুকে গ্রেপ্তার করে। একই সয্গে তার দুই সহযোগী নুর আমিন ও বাবুল রহমানকে অস্ত্রসহ কাফরুল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। আদালত তাদের দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করলেও ধরাাছোঁয়ার বাইরে আছেন মানবচক্রের মুল হোতা মেহেদী হাসান বিজন (২৮)।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন,বাংলাাদেশ থেকে প্রায় ১০ হাজার জনকে পাচার করা হয়েছে। হাতিয়ে নেয়া হয়েছে কোটি কোটি টাকা। বিজন ও তার অন্য সহযোগীরা ঢাাকাতেই আছেন। কৌশলে গা ঢাকা দিয়েছেন। ঘন ঘন অবস্থান পরিবর্তন করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর নজর এডিড়ে চলেছেন। সর্বশেষ রাজধানীর কাফরুল থানায় দুটি মামলা করেন ভুক্তভোগীরা। মামলা নং ৩৫ ও ৩৬। দুটি মামলায় এ চক্রের হোতা হিসেবে উঠে এসেছে বিজনের নাম।

র‌্যাব-৩ সুত্র জানায়, প্রতারনার অভিযোগে মেহেদী হাসান বিজন ও তার সাত সহযোগীর পাসপোর্ট বাতিল করে ব্রুনাইয়ের সরকার কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। পরে সারাবিশ্বে করোনা সংক্রমন বেড়ে গেলে গত ফ্রেব্রুয়ারী মাসে বিজন সহ পাঁচজনকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। সুকৌশলে তাদের একজন কম্বোড়িা ও আরেকজন মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান। তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, মেহেদী হাসান বিজন নয় বছর আগে শ্রমিক ভিসায় ব্রুনাইয়ে যান। তার বাড়ি মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার যতারপুরে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকে তাকে চেনেন না। তার বাবা মোস্তাকিম হাসান পেশায় কৃষক। জানা গেছে, মানবপাচার মামলা গুলো পুলিশের পাশাপাশি ছায়া তদন্ত করছে র‌্যাব।

র‌্যাব-৩ এর পুলিশ সুপার বীনা রানী দাস বলেন, মেহেদী হাসান বা তার সহযোগীদের নামে বাংলাদেশের কোন রিক্রুটিং লাইসেন্স (আরএল) নাই। তারা আরএল আছে এমন অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ব্রুনাইয়ে লোক পাঠিয়ে প্রতারনা করতেন বা পাঠানোর কথা বলে টাকা নিতেন। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সুত্র মতে, ব্রুনাইয়ে বাংলাদেশি মালিকানায় প্রায় তিন হাজার কোম্পানী নিবন্ধিত আছে। যার অধিকাংশ নামসর্বস্ব। দালালচক্র ও রিক্রুটমেন্ট এজেন্সি মিলে ব্রুনাইয়ে এসব নামসর্বস্ব কোম্পানীকে ভালো কোম্পানী আখ্যা দিয়ে মানবপাচার করতেন। দেশটিতে প্রায় ২৫ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক অবস্থান করছেন। তারাও সেখানে মানবেতন জীবন কাটাচ্ছেন।

দেশটিতে কাজ না পাওয়ায় অনেক শ্রমিককে ফিরতে হয়েছে। ব্রুনাইয়ে মানবপাচারে ডিএল ব্যবহুত হয়েছে রাজধানীর নয়াপল্টনের হাইওয়ে ইন্টারন্যাশনাল ও কিশোরগঞ্জের নজরুল ইন্টারন্যাশনাল। ভুক্তভোগীরা জানান, ব্রুনাইয়ে থাকার সময় মেহেদী হাসান বিজন বিলাসবহুল জীবন যাপন করতেন। মানব পাচার করে হাতিয়ে নেয়া টাকায় কেনা বুলেটপ্রুফ হামার এইচ-২ গাড়ি চালাতেন। এমন শত শত ভুক্তভোগী অভিযোগ করেছেন সিআ¦ডি ও র‌্যাবের কার্যাালয়ে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের বিশেষ সুপার সামসুন নাহার বলেন, মানবপাচারের পাঁচটি মামলা আমাদের টিম তদন্ত করছে। অর্গানাইজড় ক্রাইম ইউনিট তদন্ত করছে একটি। মেহেদী হাসান বিজনের কর্মকান্ড নিয়ে ব্রুনাইয়ে বাংলাদেশের হাইকমিশনার গত ৩ জানুয়ারী পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে একটি প্রতিবেদন দেন। সেটি সিআইডির হাতে।

পরে ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে বিজনের সহযোগীদের গ্রেপ্তার করা হয়। এদিকে র‌্যাব ৩ এর অধিনাায়ক লে,কর্নেল রাকিবুল হাসান বলেন, ব্রুনাইয়ে মানবপাচারের মুল হোতা মেহেদি হাসান বিজন। হিমু দীর্ঘদিন দেশের বাইরে অবস্থান করছিলেন। বিজনের সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের ব্যবসায়ীক সম্পর্ক। গ্রেপ্তারকৃত হিম বিজনের চাহিদা অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে ব্রুনাইয়ে মানবপাচার করতেন। আমরা জেনেছি বিজন ঢাকাতেই আাছেন। তাগে গ্রেপ্তারের সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.