রোহিঙ্গা সংকট সমাধান না হলে অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে-পররাষ্ট্রমন্ত্রী

0

সিটি নিউজ ডেস্ক :  পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে এ সংকটের একটি টেকসই সমাধানের জন্য বড় দেশগুলোর সমর্থন চেয়েছেন।

বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটি অত্যন্ত দুঃখজনক (রোহিঙ্গা শিবিরে খুনের ঘটনা)। আমরা দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছি যে রোহিঙ্গা সংকট সমাধান না হলে এ অঞ্চলে অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জাপান, চীন, ভারত ও কোরিয়ার মতো দেশগুলো যারা মিয়ানমারে বিনিয়োগ করছে, রোহিঙ্গা সংকট সমাধান না হওয়ার ফলে যদি পুরো অঞ্চলে অনিশ্চয়তা দেখা দেয় তাহলে তারা তাদের বিনিয়োগের ফলাফল নাও পেতে পারে।

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশের আহ্বানে কোনো দেশই দ্বিমত পোষণ করেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দেখুন, আপনি মিয়ানমারে বিনিয়োগ করছেন। এটি ভালো। তবে যদি অনিশ্চয়তা দেখা দেয় তবে সেখান থেকে আপনি প্রত্যাশিত ফলাফল পাবেন না। সুতরাং, আসুন একসাথে কাজ করি (টেকসই সমাধান খুঁজতে)।’

ড. মোমেন বলেন, রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবাসন চায় বাংলাদেশ।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সরকার রোহিঙ্গা শিবিরের চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া স্থাপন করতে চেয়েছিল এবং শিবিরগুলোকে নিরাপদ রাখার প্রয়াসে সেখানে ইন্টারনেটের ফোরজি নেটওয়ার্ক প্রত্যাহার করে নিয়েছিল।

তিনি আরও বলেন, সরকারের কাছে তথ্য রয়েছে যে শিবিরগুলো থেকে মেয়ে ও শিশু পাচার হচ্ছে এবং পাচারের অংশ হিসেবে পাচারকারীরা উচ্চ-গতির ইন্টারনেট ব্যবহার করে স্মার্টফোনের মাধ্যমে মেয়ে ও শিশুদের ছবি শেয়ার করছে।

ড. মোমেন বলেন, আন্তর্জাতিক এনজিওগুলো ইন্টারনেট বন্ধের বিরোধিতা করেছে এবং এটিকে তাদের মূল ইস্যু বানিয়েছে।

সম্প্রতি তার কুয়েত সফর সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের জন্য প্রথম থেকেই কুয়েত বাংলাদেশকে সমর্থন করে আসছে এবং ‘তারা আমাদের সমর্থন করবে’।

রোহিঙ্গা শিবিরে খুন:

আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে গত পাঁচ দিনে সাত রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। রোহিঙ্গারা কীভাবে আগ্নেয়াস্ত্র পাচ্ছেন সেটি স্পষ্ট নয়। তবে শিবিরগুলোতে কিছু রোহিঙ্গার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

মঙ্গলবার রাতে কক্সবাজারের উখিয়ার একটি শিবিরে সংঘর্ষে চার রোহিঙ্গা নিহত ও ২০ জন আহত হন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম জানান, চৌমোহনি তাবলীগ জামাত মার্কাজ এলাকায় রাত ৮টার দিকে সংঘর্ষের পরে তারা চারজনের লাশ উদ্ধার করেন।

উখিয়া থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সেখানে মঙ্গলবার পর্যন্ত চারটি মামলা হয়েছে। জিয়াউর রহমান নামে কুতুপালং ক্যাম্পের ব্লক ডির ২০ বছর বয়সী এক অভিযুক্ত যুবককে তারা গ্রেপ্তার করেছেন। মোহাম্মাদ ইব্রাহিমের ছেলে জিয়াউর।

এছাড়া, অস্ত্রসহ ৯ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। ঘটনার পর শিবিরগুলোতে সশস্ত্র বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ উপকূলীয় জেলা কক্সবাজারে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। প্রায়ই রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারে সেনা অভিযান এবং রাখাইন প্রদেশে গণহত্যার পরিপ্রেক্ষিতে লাখ লাখ রোহিঙ্গা প্রাণভয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এরপর ২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রথম সময়সীমা ঠিক হলেও, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রাখাইনে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি বলে ঘোষণা দেয়ায় সেই উদ্যোগ ব্যর্থ হয়। ২০১৯ সালের ২২ আগস্ট বাংলাদেশ দ্বিতীয়বারের মতো উদ্যোগ নিলেও, এ বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নিজ দেশে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো অগ্রগতি হয়নি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রোহিঙ্গারা কেবল বাংলাদেশের নয়, এ অঞ্চলেরও সুরক্ষার জন্যও হুমকি। এ সংকট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.