স্বাস্থ্যকর্মীদের সার্ভিস নির্ভর হতে হবেঃ স্বাস্থ্য সচিব

0

সিটি নিউজঃ এসডিজি’র লক্ষ্যসমূহের মধ্যে তিনটি সরাসরি স্বাস্থ্য বিভাগের কার্যক্রমের সাথে জড়িত। কাজেই এসডিজি অর্জন করতে হলে প্রণীত এসব লক্ষ্য অবশ্যই পুরণ করতে হবে। এছাড়া মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে হলে স্বাস্থ্যখাতের সূচকসমূহ যথাযথ পরিপূর্ণ করতে হবে। আর এ দায়িত্ব পালনে সামনের সারির যোদ্ধা হচ্ছে মাঠপর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীগণ। তাদেরকে আদেশ নির্ভর না হয়ে সার্ভিস নির্ভর হতে হবে।

আজ বুধবার নগরীর একটি হোটেলে আন্তর্জাতিক সংস্থা পাথপাইন্ডার আয়োজিত দুই দিনব্যাপী “কমিউনিটি পর্যায়ে প্রসব পরবর্তী পরিবার পরিকল্পনা এবং গর্ভপাত পরবর্তী সেবা বিষয়ক প্রশিক্ষণ” এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।

চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলার মাঠ পর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মী যথা সিএসসিপি, স্বাস্থ্য পরিদর্শক, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য সহকারীদের জন্য এ প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়।

স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আলী নুর প্রশিক্ষণ উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. আবদুস সালাম খান, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান, উপপরিচালক ডা. শফিউল ইসলাম, ডা. উ খ্যে উইন, সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি, পাথফাইন্ডার ইন্টারন্যাশনাল এর সিনিয়র কান্ট্রি ডিরেক্টার ক্যারোলিন ক্রসবি বক্তৃতা করেন।

বক্তারা বলেন, মাতৃমৃত্যু ও নবজাতকের মৃত্যু হার শুন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে হলে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে। তবে গ্রাম পর্যায়ে এখনো অনেক গর্ভবতী মা প্রসবকালীন প্রাতিষ্ঠানিক সেবা থেকে বঞ্চিত। অনেকে লোক লজ্জার ভয় বা সংকোচের কারনে প্রাতিষ্ঠানিক সেবা নিতে আগ্রহীও হয়না। মাঠ পর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীদের এসব বাধা দুর করতে হবে। গর্ভবতী মা’দের নিরাপদ প্রসব এবং দুই সন্তান নেওয়ার মধ্যবর্তী সময় সম্পর্কিত স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে যথাযথ ধারণা দিতে হবে।

তারা বলেন, নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করতে সরকার সকল সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে। মেডিকেল সেন্টারগুলোতে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের মালামালের কোন ঘাটতি নেই। তারপরেও ফলোআপের অসামঞ্জস্যতার কারনে অনেক অনাকাংখিত ঘটনা ঘটে যায়। তা নিরসন করতে হবে। গর্ভবতী মা’দের বিষয়ে প্রতি দুই মাস পরপর রিপোর্ট প্রদান করার নিয়ম থাকলেও মাঠ পর্যায়ের অনেক স্বাস্থ্যকর্মী তা ঠিকমতো পালন করেনা। নবজাতক ও মা’দের চাহিদা মোতাবেক সেবা দিতে হবে। সেবা দাতা ও সেবা প্রহীতার মধ্যে দুরত্ব কমাতে হবে। ইউনিয়ন পর্যায়ের কমিউনিটি ক্লিনিকসমূহে একটি অতিরিক্ত কক্ষ সংযোজন করে তাকে লেবার রুমে পরিণত ও তাতে নিরাপদ প্রসবের সব উপকরণ যোগাড় রাখা গেলে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব শতভাগ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে এসময় উল্লেখ করা হয়।

স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব বলেন, স্বাস্থ্য খাতের সফলতার কারনে প্রধানমন্ত্রী সাউথ সাউথ পুরস্কার, ভ্যাক্সিন হিরোসহ বেশকয়েকটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেছেন। মাঠ পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবার এ সফলতা অব্যাহত রাখতে হবে ।

তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় তথ্য সংকটের কারনে অনেক মা কবিরাজী বা গ্রাম্য পদ্ধতিতে প্রসব করতে বাধ্য হন। তাদেরকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে প্রসবের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি সকলের জন্য নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, কোভিড-১৯ মোকাবেলায় সরকার সাহসী ভূমিকা পালন করেছে। সরকারের দুরদর্শী সিদ্ধান্ত ও যোগ্য নেতৃত্বের কারনে কোভিড সময়কালীন বাংলাদেশের অভাবনীয় আর্থিক অগ্রগতি হবে বলে এডিবি পূর্বাভাস দিয়েছে। বিশ্বের অনেক উন্নত দেশেরও তা হবেনা। জিডিপি’র প্রবৃদ্ধির দিক দিয়ে বাংলাদেশ এশিয়ায় শ্রেষ্ঠ হতে পারে বলেও এডিবি পূর্বাভাস দিয়েছে।

তিনি বলেন, পাঠ্য পুস্তকে প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে অধ্যায় রয়েছে। কিন্তু অনেক শিক্ষক সংকোচের কারনে তা পড়াতে চাননা। ফলে কিশোর বয়সে প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে মেয়েরা প্রয়োজনীয় জ্ঞান লাভ করতে পারেনা। তারা ভুল শিক্ষায় গড়ে ওঠে। বিভাগীয় পরিচালকসহ স্বাস্থ্য খাতের সকলকে এসব বিষয়ে নজর দিতে হবে। প্রজনন শিক্ষার পাশাপাশি সন্তানগণ যেন নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ওঠে সে বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে।

২১ ও ২২ অক্টোবর এ দু’দিনের প্রশিক্ষণে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলার ৩১ জন মাঠ পর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মী অংশ নেন।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.