চট্টগ্রামে অভিজাতে ফের আলোচনা ক্যাসিনো

বিকাল হলেই ক্লাবগুলোতে মেতে উঠেন জুয়াড়িরা

0

গোলাম সরওয়ার,সিটি নিউজ : চট্টগ্রাম নগরীর খুলশীসহ কয়েকটি অভিজাত এলাকায় এক শ্রেণির মানুষ ক্যাসিনোতে জড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে অভিজাত শ্রেণির কয়েকজনের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ উঠছে।বিকাল হলেই অভিজাত ক্লাবগুলোতে মেতে উঠেন জুয়াড়িরা।আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে একেক সময় একেক জায়গায় বসা “পুকার” নামে ক্যাসিনোর এই নিষিদ্ধ জুয়া খেলা নিয়ে সেখানে প্রতিদিনই লক্ষ লক্ষ টাকা বাজি ধরা হচ্ছে। জুয়ার টাকা ডলারে ট্রান্সজেকশন হওয়ায় তাতে দেশের টাকা বাইরে পাচার হয়ে যাচ্ছে।

গত বছর ক্যাসিনো কান্ড নিয়ে ঢাকায় তোলপাড়ের পর চট্টগ্রামেও এর প্রভাব পড়েছিল। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী রাজধানী ঢাকাসহ চট্টগ্রামেও বিভিন্ন ক্লাবগুলোতে অভিযান চালায়। নামী-দামী ক্রীড়া সংস্থার বিভিন্ন ক্লাব তখন বন্ধ করে দেওয়া হয়। ওইসময় চট্টগ্রামে ক্যাসিনোর আলামত না পাওয়ার দাবি করলেও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী জুয়া খেলার অভিযোগে নগরীর বিভিন্ন ক্লাবের কার্যক্রম বন্ধ করে দেন।

গত তিন/চার মাস ধরে মহামারী করোনো ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যস্ততার সুযোগ নিয়ে ফের জুয়াড়ি চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে বিভিন্ন মাধ্যমে খবর পাওয়া গেছে।

সম্প্রতি ওইসব ক্লাবগুলোতে জুয়া খেলার সাথে জড়িতরা বিভিন্ন জায়গায় ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে। আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, এবার একটি শ্রেণির মানুষজন ক্যাসিনো জুয়া নিয়ে চট্টগ্রামে ধীরে ধীরে সক্রিয় হচ্ছে।

যদিও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে তাদের ব্যাপারে এখনো পর্যন্ত কোনো তথ্য নেই বলে দাবি করা হচ্ছে।

নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার(উত্তর) মির্জা সায়েম মাহমুদ কাছে জানতে চাইলে তিনি সিটি নিউজকে বলেন,শারীরীক অসুস্থতার কারণে কয়েকদিন অফিসে যেতে পারিনি।তবে এখনো পর্যন্ত ক্যাসিনো সম্পর্কিত জুয়া খেলার ব্যাপারে কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই।

  বহনযোগ্য পুকার ক্যাসিনো বোর্ড

অনুসন্ধানে জানা যায়, খুলশীর অভিজাত এলাকায় দুই থেকে তিনটি চক্র সক্রিয় রয়েছে ক্যাসিনো নিয়ে। তবে ক্যাসিনোর অন্যতম একটি ‘পুকার” জুয়া খেলা নিয়ে চক্রগুলোর সক্রিয় থাকার কথা জানা গেছে। বিশেষ করে অভিজাত শ্রেণির ও তাদের ছেলেরা এসব খেলায় জড়িয়েছে।

এরমধ্যে একটি চক্রের নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ উঠেছে এক শিল্পপতি ও রাজনৈতিক নেতার ছেলের বিরুদ্ধে। ক্যাসিনোর “পুকার” বোর্ড নিয়ে বসা তার জুয়ার আসরে যোগ দিচ্ছে অভিজাত শ্রেণির ছেলেরা। এই ক্যাসিনোর আসরে বসার জন্য জুয়াড়িকে সর্বনিম্ন ১ লক্ষ টাকা শো-মানি হিসেবে দেখাতে হচ্ছে। খেলাটি হচ্ছে মুলত ডলারের মাধ্যমে।

এক লাখ টাকার ওপরে খরচ করে বাইরে থেকে ওই পোকার বোর্ডটি চট্টগ্রামে আনা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।এটি বহনযোগ্য হওয়ায় একেক দিন একেক জায়গায় পুকার বোর্ড নিয়ে চক্রটির জুয়ার আসর বসার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এই বোর্ডটি আগে আরেক শিল্পপতির ছেলের নিয়ন্ত্রণে ছিল।

মূলত আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতেই এই ধরণের কৌশলের বর্তমানে আশ্রয় নেয়া হয়ে থাকে বলে জানা গেছে।ওই চক্রটি বাদেও আরও কয়েকটি চক্র অভিজাত এলাকায় ক্যাসিনো “পুকার” খেলা নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অনলাইনে পণ্য বিক্রির সাইট “আলিবাবা”তে পোকার থেকে শুরু করে ক্যাসিনোর বিভিন্ন জুয়ার সারঞ্জাম বিক্রির বিজ্ঞাপন দেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।

এসব পুকারের একেকটির দাম ১ হাজার ডলার থেকে শুরু করে তার ওপরে।

ধারণা করা হচ্ছে, ক্যাসিনো চক্রগুলো এসব সাইটের মাধ্যমে গোপনে দেশের ভেতর এসব ক্যাসিনোর সারঞ্জাম নিয়ে আসছেন। আবার বিভিন্ন ডিজিটাল খেলনার নামের আড়ালে মূলত এসব ক্যাসিনো সারঞ্জাম দেশে প্রবেশ করতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, পশ্চিমা বিশ্বে ক্যাসিনোতে পুকার অন্যতম। এই খেলায় এক ধরণের সুসজ্জিত জুয়ার বোর্ড থাকে।

আন্তর্জাতিক জুয়ার নেটওয়ার্কে যুক্ত হতে ক্যাসিনোতে রুলেট ও স্লট মেশিন থাকা বাধ্যতামূলক রয়েছে। ক্যাসিনোতে নগদ অর্থের বিকল্প হিসেবে পুকার চিফস নামে বিশেষ ধরণের ঘুঁটি ব্যবহার হচ্ছে। এসব পুকার চিপ যেকোনো ক্যাসিনোতে ভাঙিয়ে নগদ টাকায় রূপান্তর করা যায়। সাধারণত বড় ক্যাসিনোতে ১ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার চিপ ব্যবহার করা হয়।

জি.এস / সিটি নিউজ,চট্টগ্রাম।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.